• facebook
  • twitter
Thursday, 19 September, 2024

যে কোনও বিজ্ঞাপনে একটি লক্ষ্মণরেখা থাকা উচিত

বিজেপির বিজ্ঞাপনে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখলেন প্রধান বিচারপতি মোল্লা জসিমউদ্দিন: বিজ্ঞাপন মানেই যা খুশি তাই নয়! বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে বড়সড় আইনী ধাক্কা খেল বঙ্গ বিজেপি শিবির৷ লোকসভা নির্বাচন আবহে সংবাদপত্রে সম্প্রতি প্রকাশিত বিজেপির দুটি নির্বাচনী বিজ্ঞাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ৷ বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস

বিজেপির বিজ্ঞাপনে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখলেন প্রধান বিচারপতি

মোল্লা জসিমউদ্দিন: বিজ্ঞাপন মানেই যা খুশি তাই নয়! বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে বড়সড় আইনী ধাক্কা খেল বঙ্গ বিজেপি শিবির৷ লোকসভা নির্বাচন আবহে সংবাদপত্রে সম্প্রতি প্রকাশিত বিজেপির দুটি নির্বাচনী বিজ্ঞাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ৷ বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, ‘যেকোনও বিজ্ঞাপনে একটি লক্ষণরেখা থাকা উচিত৷ কোনও ব্যক্তিগত আক্রমণ করা উচিত নয়’৷ এর আগে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ বিজেপির দুটি নির্বাচনী বিজ্ঞাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল৷ এদিন ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি চলার সময়ে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ‘যেকোনও বিজ্ঞাপনে একটি লক্ষ্ণণরেখা থাকা উচিত৷ কোনও একটি প্রকল্প নিয়ে প্রচার করা যেতেই পারে৷ তবে বিতর্কিত বিজ্ঞাপন কোনও সংবাদমাধ্যমে দেওয়া যাবে না৷ আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘিত হতে পারে, এমন কোনও বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না বিজেপি’৷ এদিন প্রধান বিচারপতি এই মামলার শুনানি পর্বে জানান, ‘আদর্শ আচরণবিধি অনুযায়ী সম্পূর্ণভাবে পোস্টার, ব্যানার নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ বিমানবন্দরে যদি কেউ যান, তাহলে সেখানে দেখা যাবে, সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর ছবি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে’৷ তবে আদালত এদিন জানিয়ে দিয়েছে, ‘সিঙ্গল বেঞ্চে গিয়ে নির্দেশ প্রত্যাহার বা পুনর্বিবেচনার আর্জি করতে পারবে বিজেপি’৷ এর আগে গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য সম্প্রতি সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিজেপির দুটি নির্বাচনী বিজ্ঞাপনের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করেন৷ বিজেপির বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিল তৃণমূল৷ তৃণমূলের এই আবেদনের ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সিঙ্গল বেঞ্চ৷ উল্লেখ্য, বিজেপির দুটি বিজ্ঞাপনের একটিতে ‘দুর্নীতির মূল মানেই তৃণমূল’ ও অন্যটিতে ‘সনাতন বিরোধী তৃণমূল’ নামে স্লোগান দেওয়া হয়েছিল৷ কয়েকটি সংবাদপত্র এবং টিভি মাধ্যমে দুটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিল বিজেপি৷ একটিতে দাবি করা হয়েছিল তৃণমূল মানেই দুর্নীতি এবং অপরটিতে বলা হয়েছিল তারা হিন্দুদের বিরোধী৷ বিজেপির জোড়া বিজ্ঞাপনে আপত্তি তুলে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল৷ কিন্ত্ত তাঁদের (তৃণমূল) অভিযোগ, কমিশন কোনও পদক্ষেপই নেয়নি৷ এরপরই তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়৷ সোমবার এই মামলার শুনানিতেই বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য স্পষ্ট নির্দেশ দেন, ‘বিজেপি আপাতত এই বিজ্ঞাপন দুটি দেখাতে পারবে না’৷ সিঙ্গল বেঞ্চের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে আর্জি জানিয়েছিল বিজেপি৷ যদিও মামলা খারিজ করে ফের সিঙ্গল বেঞ্চেই ফেরৎ পাঠিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ৷ গত ৪, ৫, ১০ এবং ১২ মে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছিল বিজেপি, সেই রকম কোনও বিজ্ঞাপন আর প্রকাশ করা যাবে না’৷ একটিতে ‘দুর্নীতির মূল মানেই তৃণমূল’, আর অন্যটিতে ‘সনাতন বিরোধী তৃণমূল’ স্লোগান ছিল৷ বিজেপির জোড়া নির্বাচনী বিজ্ঞাপনে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করে থাকে কলকাতা হাইকোর্ট৷ যতদিন না পরবর্তী নির্দেশ দিচ্ছে আদালত, ততদিন ওই বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না কোনও সাংবাদমাধ্যমে৷ নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য৷ শুধু মিটিং-মিছিল নয়, ভোটের প্রচারে এখন সংবাদমাধ্যম ও সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনও দেয় রাজনৈতিক দলগুলি৷ বিজেপির দুটি বিজ্ঞাপনে আপত্তি জানিয়ে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল৷ সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শোকজ করা হয়েছিল দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে৷ গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে সুকান্তকে শোকজের জবাব দিতে বলেছিল নির্বাচন কমিশন৷ তৃণমূলের অভিযোগ, প্রথমে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি৷ নির্বাচনী বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করে তৃণমূল কংগ্রেস৷ গত সোমবার মামলাটির শুনানি হয় বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের বেঞ্চে৷ কলকাতা হাইকোর্ট এর সিঙ্গেল বেঞ্চ জানায়, ‘কমিশনের যে পদক্ষেপ করার ছিল, সেই পদক্ষেপ করা হয়নি৷ নির্বাচনী বিধি না মেনে, অসম্মানজনক বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল’৷ তৃণমূলের অভিযোগ, বিজ্ঞাপনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যেভাবে ‘সনাতন বিরোধী’ বলে তুলে ধরা হচ্ছে, তা নিয়মবিরুদ্ধ৷ শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে দাবি করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর, বেঠিক ও অবমাননামূলক৷ কড়া নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘যে কোন ধরনের সংবাদমাধ্যমে এখন আর এই ধরনের বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না বিজেপি৷ বিজ্ঞাপন নিয়ে তৃণমূল যে অভিযোগ করেছিল তা নিয়ে যে দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন ছিল কমিশন সেটা করেনি’৷ কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চে এই মামলার শুনানিতে বিজেপির পক্ষের কোনও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না৷ বিচারপতি জানিয়েছেন, ‘আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন হতে পারে এমন কোনও বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না’৷ লোকসভা ভোটের মাঝেই একাধিকবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল বিজেপি৷ সেই বিজ্ঞাপন নিয়েই আদালতে মামলা হয়েছিল৷ শুধু সংবাদমাধ্যমে নয় বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে অশালীন রাজনৈতিক প্রচার চলছে, তাতে নজরদারি চালাবার দাবি রেখেছেন অনেকেই৷ বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ বহাল রাখলো৷