দেশকে বাঁচাতে বিজেপিকে, আর রাজ্যকে বাঁচাতে তৃণমূলকে পরাস্ত করুন : বিমান বসু

মধুছন্দা চক্রবর্তী: বিধানসভায় বামফ্রন্ট শূন্য হয়ে গিয়েছে একুশ সালে৷ সেইসঙ্গে গত পাঁচ বছরে সংসদে বামেদের আসন দশের নীচে নেমে গিয়েছে৷ রাজ্যে তৃণমূল এবং দেশে বিজেপির দাপটে একেবার দ্বিমেরুকরণ হয়ে গিয়েছে রাজনীতিতে৷ রাজ্যে এবং দেশে — এই দ্বিমেরুর রাজনীতি ভাঙতেই এগিয়ে এসেছে বামফ্রন্ট৷ হাত ধরেছে কংগ্রেসের৷ শুক্রবার প্রেস ক্লাবে ‘মিট দ্য প্রেস’ সম্মেলনে এসে তাঁদের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ‘ইজম’কে তুলে ধরলেন রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু৷ স্পষ্ট করে বার্তা দিলেন — দেশকে বাঁচাতে বিজেপিকে পরাস্ত করুন৷ আর রাজ্যকে বাঁচাতে তৃণমূলকে পরাস্ত করুন৷

বিজেপি এবং তৃণমূলকে পরাস্ত করতে কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়াটা ঠিক কীরকম? বিমান বসুর নিজের কথায় কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের আসন সমঝোতা হয়েছে, কিন্ত্ত জোট হয়নি৷ প্রশ্ন ওঠে, এটা কি অনেকটা ‘পাশে ছিলে, সঙ্গে ছিলে না তো’ গোছের? এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিমান বসু শুক্রবার জানান, বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বাচনের প্রচারে কংগ্রেসের সঙ্গেই বামফ্রন্টের নেতারা একসঙ্গে পা মেলাচ্ছেন৷ এই যেমন কয়েকদিন আগে, এক দগ্ধ দিনে দমদম কেন্দ্রে সুজন চক্রবর্তীর হয়ে প্রচারে গিয়ে ‘ঘাম ঝরিয়েছেন’ বিমান বসু এবং প্রদীপ ভট্টাচার্য দুজনেই৷ এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বঙ্গ সফরে এসে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের নাম একসঙ্গে উচ্চারণ করছেন৷ তার মানে বামফ্রন্ট – কংগ্রেসের জোট অস্তিত্ব স্বীকৃতি পাচ্ছে৷ শূন্য থেকে আবার নতুন করে পুনরুত্থান হচ্ছে বাম-কংগ্রেস জোটের৷ বিমানবাবু আশাবাদী, আগামী ৪ জুন ভোটের ফল প্রকাশ হওয়ার পরে এমনও ঘটতে পারে যেখানে বাম-কংগ্রেসের ফলাফল দেখে লোকে চমক যেতে পারে৷ আর সেটা শুধু এই রাজ্যেই নয়, উত্তরের পড়োশি রাজ্যতেও৷

বিমান বসু এদিন অবশ্য এদিন স্বীকার করে নেন, এই ‘বাইপোলার পলিটিক্স’-এর সূচনা হয়েছিল ২০১১ সালের আগেই, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) -এর মাধ্যমে৷ সেখানে যে পরিবর্তন আসতে চলেছে, এদিন তারই বার্তা দিলেন রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু৷ বিমান বসু এদিন বলেন, আরএসএস সামাজিক সংগঠনটি শিক্ষাদীক্ষা বিষয়ক কিছু কাজকর্ম করার নাম করে রাজ্যে পা ফেলে পরে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার করতে শুরু করে৷ বিমানবাবুর মতে ওরা মানবদরদী কিছু কাজকর্ম করার উদ্দেশ্য নিয়ে রাজ্যে ঢুকেছিল৷ কিন্ত্ত তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বামফ্রন্টের শক্তিক্ষয় করা৷ এই আরএসএস কংগ্রেসের ভাঙন ধরিয়ে তৃণমূলের জন্ম নেওয়ার জন্য মুকুল রায়কে পরামর্শদান করেছিল এই আরএসএস৷ আজ যখন সংঘ না মোদি — এই প্রশ্ন উঠছে, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে বিমান বসু স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন এই আরএসএসের অঙ্গুলিহেলনেই চলছে বর্তমান মোদি সরকার৷ আরএসএস’কে এদিন ‘দাইমা’ বলেও কটাক্ষ করেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু৷


কিন্ত্ত বিজেপি কিংবা তৃণমূল — দুই দলই মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ বিজেপি নিজে সবকা সাথ, সবকা বিকাশ বললেও বাস্তবে তা হয়নি৷ কারণ দেশের ১ শতাংশ মানুষের হাতে ৪০ শতাংশ সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে গিয়েছে৷ অন্যদিকে দেশের ৫৫ শতাংশ মানুষ মাত্র ৩ শতাংশ সম্পদের মালিক৷ আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণা বলছে, ২০১৪ সালের পর থেকে অর্থনৈতিক অবস্থান, দারিদ্র্য সূচকের নিরিখে ভারতের স্থান ৫৫ তম থেকে ১২০ তম হয়েছে৷ অন্যদিকে রাজ্যে তৃণমূল সরকারের আমলে সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে৷ ‘সুপার নিউমেরিক পোস্ট’ তৈরি করে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়ার বিষয়টি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন অস্বীকার করছেন৷ একদল (বিজেপি) জাতপাতের রাজনীতি করে দেশকে শাসন করতে চাইছে৷ অন্যদলের (তৃণমূল) দুর্নীতির জালে গোটা রাজ্যটা আটকে পড়েছে৷ এদিন বিজেপি এবং তৃণমূলের সেটিং তত্ত্বও শোনা যায় বিমান বসুর মুখে৷ তিনি বলেন, বিজেপি এবং তৃণমূল বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই পরস্পরকে আক্রমণ করে৷