• facebook
  • twitter
Thursday, 19 September, 2024

দুর্ঘটনার স্মৃতিকে পেছনে ফেলে সোমেই গন্তব্যে পৌঁছয় অভিশপ্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, শিয়ালদহে ছিলেন ফিরহাদ-স্নেহাশীষ

নিজস্ব প্রতিনিধি: বিভীষিকাময় ট্রেন যাত্রার সমাপ্তি। দুর্ঘটনাগ্রস্ত একাধিক বগি বাদ রেখেই ঘটনাস্থল থেকে সোমবার সন্ধ্যেতেই হাজারের অধিক যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল ক্ষতিগ্রস্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। দুর্ঘটনার স্মৃতিকে পেছনে ফেলেই ফের ট্রেনটি ছুটেছিল রাঙাপানি দিয়ে। রাত ৩ টে ১৭ মিনিট নাগাদ শিয়ালদহ স্টেশনে এসে পৌঁছেছিল দুর্ঘটনা কবলিত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। শহরের মাটিতে পা ফেলেই যেন স্বস্তির নিশ্বাস

নিজস্ব প্রতিনিধি: বিভীষিকাময় ট্রেন যাত্রার সমাপ্তি। দুর্ঘটনাগ্রস্ত একাধিক বগি বাদ রেখেই ঘটনাস্থল থেকে সোমবার সন্ধ্যেতেই হাজারের অধিক যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল ক্ষতিগ্রস্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। দুর্ঘটনার স্মৃতিকে পেছনে ফেলেই ফের ট্রেনটি ছুটেছিল রাঙাপানি দিয়ে। রাত ৩ টে ১৭ মিনিট নাগাদ শিয়ালদহ স্টেশনে এসে পৌঁছেছিল দুর্ঘটনা কবলিত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। শহরের মাটিতে পা ফেলেই যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন ১২৯৩ জন যাত্রী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুযায়ী, রাতে শিয়ালদহ স্টেশনে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি হেল্প ডেস্ক করা হয়েছিল। সেই হেল্প ডেস্কের দায়িত্বে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী। ট্রেনটি শিয়ালদহে পৌঁছানোর পূর্বেই স্টেশনে উপস্থিত হয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম, স্নেহাশীষ চক্রবর্তী, শিয়ালদহের ডিআরএম দীপক নিগম সহ অন্যান্য রেল আধিকারিকগণ। গভীর রাতে ট্রেনটি শিয়ালদহে এসে পৌঁছানো মাত্রই তৎপর হয়ে পড়েন ফিরহাদ, স্নেহাশীষ সহ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ। যাত্রীদের একে একে ট্রেন থেকে নামিয়ে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় জল এবং খাবার। যাত্রীরা কেমন আছেন, কারও কোনও সমস্যা হচ্ছে নাকি, যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সুবিধা-অসুবিধা জেনে নেন ফিরহাদ, স্নেহাশীষ এবং রেলকর্তারা।
এখানেই শেষ নয়, অভিশপ্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে চেপে গভীর রাতে শিয়ালদহে পৌঁছানো যাত্রীদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল রাজ্য পরিবহন দফতরের তরফে। শিয়ালদহ স্টেশনের বাইরে গভীর রাতেই দশটি সরকারি বাস পৌঁছে গিয়েছিল। ট্রেন দুর্ঘটনার এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মধ্যে সারা দিন কাটিয়ে শিয়ালদহে পৌঁছানোর পর কীভাবে বাড়ি ফিরবেন যাত্রীরা? সেই বিষয়টি মাথায় রেখে এই বিশেষ ব্যবস্থা করেছিল রাজ্য পরিবহন দফতর। এই বাসগুলি ছাড়াও প্রায় ১০০টি ছোট গাড়িরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ফিরহাদ হাকিমের ভাষায়, যাঁরা শিয়ালদহ থেকে কাছাকাছি গন্তব্যে গিয়েছিলেন তাঁদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বাকি যাঁরা দূরের গন্তব্যে গিয়েছিলেন তাঁদের জন্য ছিল গাড়ির ব্যবস্থা। এদিন শিয়ালদহ স্টেশনে উপস্থিত হয়ে ফিরহাদ বলেন, “যাত্রীদের অভিজ্ঞতা খুবই মর্মান্তিক। কেউ কেউ দুদিন, তিনদিন ধরে ট্রেনে ছিলেন। যাঁরা হালকা চোট পেয়েছেন তাঁদের এই স্টেশনে নামা মাত্রই প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হলো। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমরা সাধ্য মতো আমাদের কাজ করছি। কিন্তু ভারতীয় রেলের কি হবে সেখানেই এখন প্রশ্নচিহ্ন! প্রাণ হাতে নিয়ে রেলে চড়বো, ভগবানের কৃপায় বাড়ি ফিরতে পারলে ফিরবো আর নয়তো রেলেই মৃত্যু হবে।” রেল যাত্রা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে ফিরহাদের আরও সংযোজন, “আমি নিজেই বন্দে ভারতে যাওয়া আসা করি। এখন মনে হচ্ছে, রেলে উঠলে বাড়ি ফিরবো কিনা কোনো ঠিক নেই।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সোমবার ভোর রাতে অভিশপ্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে করে শিয়ালদহে এসে পৌঁছানো যাত্রীদের চোখে মুখে ছিল চরম আতঙ্কের ছাপ। হয়তো তাঁরা ভাবছিলেন, কপাল জোরেই হতাহত ৫০ জনের তালিকায় নাম ছিল না তাঁদের! সোমবার শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়ার কাছে নীচবাড়ি এবং রাঙাপানি স্টেশনের মাঝে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। দ্রুত গতি সম্পন্ন একটি মালগাড়ি ধাক্কা মারে ওই এক্সপ্রেসটিকে। ধাক্কার জেরে এক্সপ্রেসের একাধিক কামরা উঠে পড়ে মালগাড়ির ইঞ্জিনের উপর। লাইনচ্যুত হয় মালগাড়ির কামরাও। এই দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ৪১ জনের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা গুরুতর। সোমের এই দুর্ঘটনার পর মঙ্গলবার সকালে আপ লাইন ধরে খুব ধীর গতিতে কামাখ্যা গান্ধীধাম এক্সপ্রেসকে পার করানো হয়। সোমবারের পর এই প্রথম কোনও যাত্রিবাহী ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পেরোল।
মঙ্গলবার দুর্ঘটনাস্থলে ছিলেন রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম সুরেন্দ্র কুমার। তিনি জানান, আগামী দু-তিন ঘণ্টার মধ্যে ডাউন লাইনেও ট্রেন চলাচল শুরু হবে। তাঁর ভাষায়, “গত কালের দুর্ঘটনার পর রেলকর্মীরা কাজে নামেন। লাগাতার প্রচেষ্টায় তাঁরা কাল সন্ধ্যায় আপ লাইনকে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে তোলেন। ডিজেল ইঞ্জিন চলাচল করে। অন্যদিকে ডাউন লাইনে বৈদ্যুতিন তার লাগিয়ে রেল চলাচলের কাজ শুরু হবে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেটাও স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আপ এবং ডাউন লাইন দুটোই সম্পূর্ণ ভাবে স্বাভবিক করার কাজ চলছে৷” এরপরই সিগন্যাল বিভ্রাট প্রসঙ্গে ডিআরএম বলেন, “কমিশন অফ রেলওয়ে সেফটির আধিকারিকেরা ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছেন। তাঁরা প্রথমিক ভাবে কাজও শুরু করেছেন। তাঁরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলবেন। বয়ানও নথিবদ্ধ করা হবে।” একই সঙ্গে তিনি দুর্ঘটনার নেপথ্য কারণ হিসাবে একাধিক অসঙ্গতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, “দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ অনুসন্ধান করা হবে। তবে প্রাথমিক ভাবে অনেক অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। সিগন্যাল ফেলিওর, কর্মীদের অসাবধানতা সহ কিছু কিছু বিষয় নজরে আসছে। তবে এ বিষয় নিয়ে শেষ রায় কমিশন অফ রেলওয়ে সেফটি দেবে।”