চাকরি বাতিলের পেছনে দায়ী সিপিএম: অভিষেক

নিজস্ব প্রতিনিধি— এবারের লোকসভা ভোটে রাজ্যের শাসক দলের টার্গেট হাওড়ার দুই লোকসভা আসন৷ সেই টার্গেটকে বাস্তবায়িত করতেই সোমবার হাওড়ার মাটিতে পা রাখলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ উলুবেড়িয়ায় জনসভা এবং হাওড়ায় রোড শো, এই জোড়া কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এদিন দফায় দফায় বিজেপি ও সিপিএমকে আক্রমণ শানান অভিষেক৷ এদিন চাকরি বাতিল নিয়ে সিপিএমকে সরাসরি আক্রমণ অভিষেকের৷ চাকরি বাতিলের জন্য দায়ী সিপিএমই, দাবি তাঁর৷ তবে কীভাবে? তাঁর ব্যাখ্যায়, এই যে পঁচিশ হাজার লোকের চাকরি গেছে, সিপিএমের বড়ো বড়ো নেতারা যেমন সিপিএমের অ্যাডভোকেট বিকাশ ভট্টাচার্যহাইকোর্টে মামলা করে যোগ্যদের চাকরি কেড়ে নিয়েছেন৷ তাঁদেরই দাবি ছিল, পুরো প্যানেল বাতিল করা হোক৷ পিটিশনে এমনটাই লেখা ছিল৷ এই প্রসঙ্গেই সিপিএম এবং বঙ্গীয় কংগ্রেসকে বিজেপির ‘সবচেয়ে বড়ো শাগরেদ’ এবং বিজেপিকে ‘সিপিএমের দোসর’ বলে কটাক্ষ অভিষেকের৷ তাঁর ভাষায়, “৩৪ বছর বাংলাটাকে শেষ করে দিয়েছে সিপিএম৷ আর আজ সিপিএমের হার্মাদরা জার্সি পাল্টে বিজেপির পতাকা ধরেছে৷ এদের একটা ভোট দেওয়া মানে সরাসরি পদ্মফুলে ভোট দেওয়া৷” পাশাপাশি চাকরিহারাদের উদ্দেশ্যে প্রতিশ্রুতি যুবরাজের৷ তিনি বলেন, “কোনও যোগ্য ব্যক্তির চাকরি আমরা যেতে দেবো না৷ তার জন্য যা আইনি লড়াই দরকার তা আমরা চালাব৷”

এদিন একের পর এক চ্যালেঞ্জ গেরুয়া বাহিনীর দিকে ছুঁড়ে দেন সেনাপতি৷ “আমি বিজেপির প্রত্যেকটা নেতাকে চ্যালেঞ্জ করবো আজকের সভা থেকে৷ পাঁচ মিনিট ভাষণ দিন, ছয়টা শব্দ ব্যবহার করবেন না৷ হিন্দু, মুসলিম, মন্দির, মসজিদ, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান”, চ্যালেঞ্জ অভিষেকের৷ তাছাড়াও রোড শো থেকে যুবরাজের অপর এক বড়ো চ্যালেঞ্জ বিজেপির উদ্দেশ্যে৷ পাশাপাশি নাম না করে আক্রমণ শুভেন্দুকেও৷ “আমি বোম ফেলার কথা বলি না৷ আমার কাছে প্রমাণ রয়েছে কীভাবে বিজেপি এবং তার সহযোগী বাংলাকে কলুষিত করার চেষ্টা করছে৷ এক সপ্তাহের মধ্যে এর প্রমাণ জনসমক্ষে আনবো”, দাবি অভিষেকের৷ বিজেপির প্রার্থীদের ‘আবর্জনা’ বলে কটাক্ষ অভিষেকের৷ তিনি বলেন, “এঁদের তো প্রার্থীও নেই৷ আমাদের আবর্জনাগুলো আমরা ফেলে দিয়েছি৷ আর এঁরা ভ্যাটের বাক্স থেকে কুড়িয়ে নিয়ে মাথায় রেখেছে৷” আবাসের টাকা নিয়েও ফের চ্যালেঞ্জ কেন্দ্রকে৷ বিজেপির দাবি, বাংলায় আবাসের টাকা দেওয়া হয়েছে কিন্ত্ত তৃণমূল সেই টাকার দুর্নীতি করেছে৷ পাল্টা অভিযোগ তৃণমূলেরও৷ বিজেপি ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় হারার পর বাংলার আবাসের জন্য ১০ পয়সাও বরাদ্দ করেনি৷ এই প্রসঙ্গেই বিজেপিকে শ্বেতপত্র প্রকাশ করার চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন অভিষেক৷ কিন্ত্ত কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি গেরুয়া শিবিরের তরফ থেকে৷ এবার উলুবেড়িয়ার মাটিতে দাঁড়িয়ে অভিষেক বললেন, “আপনাদের কথা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে ৪ পয়সা যদি কেন্দ্রের সরকার দেখাতে পারে যে বাংলায় পাঠিয়েছে তাহলে আমি তৃণমূলের হয়ে কোনও সভা-সমিতিতে মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাবো না৷ আমি চ্যালেঞ্জ করে গেলাম৷ ক্ষমতা থাকলে প্রকাশ করো৷” রোড শো থেকেও এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন অভিষেক৷ তাঁর আরও সংযোজন, “আজ পঞ্চাশ দিন হয়ে গেছে, এক হাজার ঘন্টা পেরিয়ে গেছে৷ বিজেপির নেতারা শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে পারেনি৷” রিপোর্ট কার্ড নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামার চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন গেরুয়া বাহিনীকে৷ তাঁর ভাষায়, “তিন বছরের রিপোর্ট কার্ড আর দশ বছরের প্রধানমন্ত্রীর রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আসুক, ল্যাজে গোবরে করে দেবো৷”
“শূণ্য দিয়েছে দশ বছরে”, অভিষেকের আক্রমণ প্রধানমন্ত্রীকে৷ স্মৃতিচারণা করে যুবরাজ গর্জে ওঠেন৷ তিনি বলেন, “আজ থেকে দশ বছর আগে ২০১৪ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সভা করে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, দিদি তো আছেনই বাংলায়৷

কেন্দ্রতেও ভাজপা এর সরকার হবে, আমি প্রধানমন্ত্রী হবো৷ তাহলে বাংলার দুই হাতে লাড্ডু হয়ে যাবে৷ সত্যিই! লাড্ডু দিয়েছে, শূণ্য দিয়েছে দশ বছরে৷” মাছ খেলেই হিন্দুবিরোধী, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে ফের ওঁনাকে আক্রমণ অভিষেকের৷ পাশাপাশি নিশানা করতে ছাড়েননি বিজেপি নেত্রীকে দীপা চক্রবর্তী কে যিনি বলেছিলেন লক্ষীর ভান্ডার বন্ধ হবে বিজেপি ক্ষমতায় এলেই৷ বিজেপি নেত্রী কে নিশানা করে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন অভিষেকের, “এখনও এই বিজেপি নেত্রীর বিরুদ্ধে বিজেপির রাজ্য স্তরের কোনো নেতৃত্ব একটি শোকজ পাঠায়নি৷ তাহলে ধরে নেওয়া যেতেই পারে উচ্চ বিজেপি নেতৃত্বদের সমর্থন নিয়েই তিনি বলছেন৷ এঁদের উচিৎ শিক্ষা দেবেন না?” পঞ্চম দফায় অর্থাৎ ২০শে মে নির্বাচন রয়েছে এই হাওড়ায়৷ এই ২০শে মে কেই ‘ঐতিহাসিক দিন’ বলে আখ্যা অভিষেকের৷ ৩৪ বছরের বামেদের শাসনকে উৎখাত করে এদিনই মমতা বন্দোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন৷ তাঁর ভাষায়, “আগামী ৪ তারিখ যখন ভোট বাক্স খুলবে, যাঁরা চারশো পাড়ের ধ্বনি দিচ্ছিলো তাঁদের অশ্বমেধের ঘোড়া দুশো তে আটকে যাবে৷” ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের বাস্তববায়ন থেকে আবাসের টাকা সবই রাজ্য সরকার দেবে চলতি বছরেই, সাধারণ মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেন যুবরাজ৷ আবাস নিয়েই চ্যালেঞ্জ বিজেপিকে, “বিজেপির ক্ষমতা থাকলে আমার বিরুদ্ধে কোর্টে যাবে৷” এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে ‘স্পিডব্রেকার’ বলে কটাক্ষ অভিষেকের৷ আবাসের টাকা না দিলেও, বাংলা থেকে ট্যাক্স নিয়ে যায় কেন্দ্র, দাবি তৃণমূলের৷ বিজেপিকে ভিখারী বলে কটাক্ষ অভিষেকের৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তোমরা ভিক্ষার বাটি নিয়ে বাংলায় আসো৷ ট্যাক্স তুলতে আর মানুষের থেকে টাকা তুলতে৷”


এদিনের জনসভা এবং রোডশো থেকে পঞ্চম দফায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিজেপির হাঁটু এবং পা ভাঙার পরামর্শ সাধারণ মানুষকে৷ জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে অভিষেক বলেন, “আমরা বাড়িতে, মন্দিরে, মসজিদে ধর্ম করবো কিন্ত্ত নির্বাচনে জেতার পর একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের কোনো ধর্ম নেই৷ আমাদের তখন একটাই ধর্ম মানবধর্ম৷” রোডশো থেকে বিজেপিকে বাংলা বিরোধী বলার কারণ ব্যাখ্যা করেন জনসমক্ষে৷ স্বামী বিবেকানন্দকে অপমান করা থেকে বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি ভাঙা, মাছভক্ষনকারী বাঙালিদের হিন্দুবিরোধী বলা থেকে বাংলার মানুষের হকের টাকা বন্ধ করে রাখা এসবই করেছে বিজেপি৷ উলুবেড়িয়ার জনসভা থেকে সাধারণ মানুষকে ব্যবধান বাড়ানোর আর্জি জানান যুবরাজ৷ তাঁর ভাষায়, “বোতাম টিপবেন এখানে, ভূমিকম্প হবে দিল্লিতে৷” এদিন জনসভা এবং রোডশো উভয় কর্মসূচীতেই তৈরী হয় জনপ্লাবন, যা আগামীদিনে তৃণমূলের জয়ের সাক্ষ্য বহন করছে৷ এ প্রসঙ্গেই যুবরাজ আত্মবিশ্বাসী হয়ে বলেন, “যারা ৪৩° বা ৪৪° তাপমাত্রা মাথায় নিয়ে সভায় উপস্থিত হয় তারা কেবল অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের বক্তব্য শোনার জন্য আসে না৷ তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে আসে যে আগামী ২০ তারিখ গরম যতই পড়ুক, লাইনে দাঁড়িয়ে জোড়াফুলে ভোট দিয়ে বহিরাগতদের বিতাড়িত করবো৷” এদিন প্রার্থী সাজদা আহমেদের সমর্থনে উলুবেড়িয়ায় জনসভা করেন অভিষেক এবং প্রসূন বন্দোপাধ্যায়ের সমর্থনে করেন রোডশো৷ হাওড়ার দাস নগর থানার মোড় থেকে বালিটিকুরী মুক্তরাম দে হাই স্কুল পর্যন্ত রোডশো তে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে একই গাড়িতে উপস্থিত ছিলেন প্রার্থী প্রসূন বন্দোপাধ্যায় এবং মন্ত্রী অরূপ রায়৷ ‘হোয়াট বেঙ্গল থিঙ্কস টুডে, ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুমরো’, গোখলের এই বক্তব্যকেই বাস্তবায়িত করে দেখানোর অঙ্গীকারবদ্ধ হন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷