মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক ফিরে পেতে দিবাস্বপ্ন দেখছে সিপিএম-কংগ্রেস

প্রবীর ঘোষাল

স্বঘোষিত বাঘ পরিণত হল বেড়ালে! এটাই বোধহয় হওয়ার কথা ছিল৷ ডায়মন্ডহারবারের মতো নজরকাড়া কেন্দ্রে ভোটে লড়ে হিরো হওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন ইন্ডিয়ান সেকু্যলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) কর্তা নওশাদ সিদ্দিকি৷ নানা যুক্তি খাড়া করে অবশেষে রণে ভঙ্গ দিয়েছেন নওশাদ৷ সেইসঙ্গে মুসলিম ভোট কেটে মূলত দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে বিপাকে ফেলার যে দিবাস্বপ্ন সিপিএম এবং কংগ্রেস দেখছিল, তারও সলিল সমাধি হল বলা চলে৷ এই তিন দলের তো জোটই হল না৷

প্রশ্ন উঠেছে, ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘ওয়াকওভার’ দেবে না তো বিরোধী পক্ষ? বিজেপি এখনও এই কেন্দ্রে প্রার্থীর নামই প্রকাশ করতে পারেনি৷ নিন্দুকরা বলছে, অভিষেকের বিরুদ্ধে নাকি পদ্মফুল প্রতীকে কেউ লড়তেই চাইছে না৷ বিধানসভা থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত, পুরসভা পর্যন্ত সব নির্বাচনেই দেখা গিয়েছে, অভিষেক নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রকে জোড়াফুলের দুর্গ বানিয়ে ফেলেছেন৷
নওশাদ সিদ্দিকি সেই কারণেই পিছু হটেছেন বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন৷ এমনিতেই আইএসএফের এই নেতার ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ নিয়ে নিজের দলের মধ্যেই নানা সন্দেহ দানা বেঁধেছে৷ তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে ‘সেটিং’ করেই নাকি নওশাদ চলছেন৷ মুসলিম ভোট কেটে ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রে বিজেপির সুবিধা করে দেওয়ার ছক কষছিলেন তিনি৷ কিন্ত্ত বাজার ঘুরে আইএসএফ নেতা বুঝেছেন হাওয়া বেগতিক৷ ভোটে লড়লে পর্যুদস্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি৷ তাহলে তো জাত যাবে, অথচ পেট ভরবে না৷ অর্থাৎ পিঠে পদ্মফুলের ছাপ পড়বে, কিন্ত্ত মুসলিমদের সমর্থন মিলবে না৷


সিপিএমের সমর্থনে বিগত বিধানসভা নির্বাচনে জেতার পর থেকে সিদ্দিকি নিজেকে ‘জাতীয় স্তরের’ নেতা ভাবতে শুরু করেছিলেন৷ একথা আমার নয়, সেদিন লালপার্টির এক তরুণ নেতা টিভি চ্যানেলের টক শো-য়ে বলছিলেন৷ অথচ পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বোঝা গিয়েছে আইএসএফ নেতা নিজের নির্বাচন কেন্দ্র ভাঙড়েও যথেষ্ট কোণঠাসা৷ ওই বিধানসভা কেন্দ্রে ভাঙড় ১ নম্বর ব্লকের তিনটি অঞ্চলে সিদ্দিকি ১০ হাজার ভোটে লিড পেয়েছিলেন৷ পঞ্চায়েত ভোটে ওই তিনটি অঞ্চলেই আইএসএফ প্রার্থীই দিতে পারেনি৷ খোদ দলের কর্মীরাই অভিযোগ তুলেছেন, ‘এখন তো এলাকায় সিদ্দিকি সাহেবের টিকিটি দেখতে পাওয়া যায় না৷ ন’মাসে ছ’মাসে পদধূলি দেন৷’ সুতরাং বলাই যায়, মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা এখন প্রশ্নের মুখে৷
সিপিএম এবং কংগ্রেস যে এ রাজ্যে বিজেপির বি-টিম সেই অভিযোগ তৃণমূল নেত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়শই করে থাকেন৷ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মূলত ভোট কাটাকুটি করে গেরুয়া শিবিরের সুবিধা করে দেওয়াই হল এদের উদ্দেশ্য৷ বলা বাহুল্য, সেই লক্ষ্যেই এই জোটের শরিক হয়েছিল আইএসএফ৷

বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে নামকরা প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান লড়তে নামায় কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী চাপে পড়ে গিয়েছেন৷ তাঁর মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের টালমাটাল অবস্থা৷ বামফ্রন্ট মহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, অধীরের আর্জিতেই নাকি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন৷ সিপিএমের কোনও রাজ্য সম্পাদক ভোটে প্রার্থী হয়েছেন, এমন ঘটনা ইদানিংকালে ঘটেনি, পার্টির গঠনতন্ত্রেও এই ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে৷

তাহলে কীসের তাগিদে কলকাতার নেতা সেলিম মুর্শিদাবাদে দাঁড়াতে গেলেন? অধীরের মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক অটুট রাখতেই নাকি এই বন্ধুত্বের বন্ধন৷ অর্থাৎ সেলিম পাশের কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে কংগ্রেস প্রার্থীকে সাহায্য করবেন৷ পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক ঘিরে আসলে যে দিবাস্বপ্ন সিপিএম-কংগ্রেস দেখছে তা ৪ জুন নির্বাচনী ফলাফল বের হলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে৷