ত্রিপুরার চার বিধানসভার উপনির্বাচনের ফলাফল আজ রবিবার। অনেকে এই নির্বাচনের ফলাফলকে ত্রিপুরার ২৩ – এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেমিফাইনাল বলে মনে করছেন।
সব রাজনৈতিক দলই নিজেদের মতো করে হিসেব – নিকেশ শুরু করেছে। এই ভোটের ফলাফলে ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তন হবে না ঠিকই , কিন্তু আগামী দিনে এই রাজ্যের রাজনীতিতে এই নির্বাচনের ফলাফল নিঃসন্দেহে একটি বড় বার্তা বহন করবে।
কারণ , মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বিপ্লব দেবকে সরিয়ে দিয়েছে বিজেপি। মানিক সাহা বর্তমানে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সাংবিধানিক নিয়মানুযায়ী তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ধরে রাখতে গেলে কোনও একটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে।
স্বাভাবিকভাবে সে কারণে ত্রিপুরার বিধানসভার উপনির্বাচনের রাজনৈতিক গুরুত্ব যথেষ্ট। গত ২৩ জুন ত্রিপুরায় যে চারটি কেন্দ্রের উপনির্বাচন হয়েছে , সেগুলি হল, যুবরাজ নগর, আগরতলা, বরদোয়ালি এবং সুরমা।
গত নির্বাচনে একমাত্র যুবরাজনগর ছিল সিপিএমের দখলে। বাকি তিনটি ছিল বিজেপির নিয়ন্ত্রণে। যে তিনটি আসনে জয়ী হয়েছিল বিজেপি , তার মধ্যে দু’জন সুদীপ রায়বর্মণ আর আশিস সাহা গেরুয়া শিবির ছেড়ে কংগ্রেসে ফিরে এসেছেন।
কংগ্রেসের টিকিটেই আগরতলা ও বরদোয়ালিতে লড়েছেন এই দুই নেতা। ফলে এই চার কেন্দ্রের ফলাফল কেমন হয় , তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। এদিকে এই চারটি এমন আসন,যেখানে দু’টি কেন্দ্রে বাঙালি ভোটাররাই সিংহভাগ।
বাকি দু’টি কেন্দ্রে নির্ণায়ক জনজাতি অংশ। ফলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে ত্রিপুরার মানুষের মনের আভাস পাওয়া যাবে এদিনের ফলাফলে। যদি বিজেপি এই নির্বাচনে খারাপ ফল করে, তাহলে আগামী দিনে বিরোধী দলগুলি সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
আর অন্যদিকে যদি বিজেপি ভালো ফল করে, তাহলে বিজেপি এই বার্তা দেবে, কে মুখ্যমন্ত্রী সেটা বড় কথা নয়, সংগঠনই শেষ কথা বলে।
ফলে বিপ্লব দেবকে ঘিরে ত্রিপুরার বিজেপিকে যে ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছিল,তা মানুষ ভুলে যাবে। অন্যদিকে সুদীপ রায়বর্মণ ও আশিস সাহা যদি এবার হেরে যান, তাহলে তাঁদের ব্যক্তি ইমেজে অনেকটা প্রভাব পড়বে।
ফলে এই নির্বাচন সুদীপ রায় বর্মণের কাছে অস্তিত্বের লড়াই। তৃণমূল কংগ্রেস এবার সর্বশক্তি দিয়ে এই বিধানসভার উপনির্বাচনে লড়ছে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দু’বার ত্রিপুরায় গিয়েছিলেন নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে।
এছাড়া মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মানস ভুইয়া, কুণাল ঘোষের মতো নেতারাও ঘাঁটি গেড়েছিলেন ত্রিপুরায়। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরাতেই রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করানোর জন্য। সেই কাজে তাঁরা কতটা সফল হলেন , তা জানা যাবে আজ।
তৃণমূল কংগ্রেস ভালো ফল করার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। যদিও এক্ষেত্রেও শাসক দলের সন্ত্রাস তৃণমূল কংগ্রেসের ভালো ফলের ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে। তবে এক ইঞ্চি জমি বিজেপিকে ছাড়তে রাজি নয় মমতার দল।
অন্যদিকে এ রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল সিপিএম , তারা চাইছে তাদের নিজেদে আসন ধরে রাখতে। যদি তা তারা ধরে রাখতে সক্ষম হয় , তাহলে ত্রিপুরার রাজনীতিতে কিছুটা হলেও বাড়তি অ্যাডভান্টেজ পাবে সিপিএম।
তবে আজকের ফলাফলে নজর থাকবে তৃণমূলের দিকে। ফলে তেইশের আগে বাঙালি ও জনজাতির মন বোঝা যেতে পারে চার উপনির্বাচনের ফলাফলে।
যেদিন ভোট ঘোষণা হয়েছিল , সেদিনই ত্রিপুরার অনেক পোড় খাওয়া রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছিলেন- এটা তেইশের ভোটের সেমিফাইনাল। রবিবার সেই চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফল ঘোষণ হবে।
তার আগে নিজেদের মতো হিসেব কথা শুরু করেছে সব দল। শুধু তাই নয় , ত্রিপুরার রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বলতে শুরু করেছে ,শুধুমাত্র কে ক’টি আসল জিতল ,তা দিয়েই সব শেষ হবে না । ভোট শতাংশ ,দ্বিতীয় হওয়া ইত্যাদি দিয়েও ধারণা তৈরির খেলা চলবে আগামী কয়েক মাস।