রাজনৈতিক রঙ না দেখেই কঠিন শাস্তির দাবি দোষীর, আরজিকর কাণ্ডে ফের সরব অভিষেক

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।

আরজি কাণ্ডে ফের সরব হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। কোনও রাজনীতির রঙ না দেখেই আরজি কর কাণ্ডে অভিযুক্তদের কড়া শাস্তি দেওয়া উচিত, এবার এমনই দাবি করলেন অভিষেক। তবে ঠিক কি জানিয়েছেন তৃণমূল সেনাপতি?

তাঁর দাবি ছিল স্পষ্ট, ধর্ষকদের এনকাউন্টার করা হোক। তিনি বলেছিলেন, “আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন না আসলে এই ধরণের অপরাধ ঠেকানো যাবে না। আইনসভায় কঠোর আইন প্রণীত না হলে এই অপরাধ বন্ধ হবে না। এটি উত্তরপ্রদেশ হলে মৃতদেহও খুঁজে পাওয়া যেত না! এমন কঠিন আইন আনা দরকার, যাতে সাত দিনের মধ্যে এই খুনি এবং ধর্ষকদের এনকাউন্টার করে মারা যায়।”

অভিষেক দেশের আইনি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, “কেন সাত, আট বছর ধরে ট্রায়াল চালানো হবে? একজন অপরাধীকে জেলে রাখা হলে তার প্রতিদিনের খাবার খরচ ২০০ টাকা, বার্ষিক খরচ হয় ৭৩ হাজার টাকা! সাত বছর সেই অপরাধীর ট্রায়াল চললে পাঁচ লক্ষ টাকার খরচা। কেন এত খরচা করা হবে? পারিপার্শ্বিক তথ্যের বা প্রমাণের ভিত্তিতে ধর্ষককে এনকাউন্টার করা হোক সাত দিনের মধ্যে। এই বিল কেন্দ্র আনতে পারে এবং তৃণমূল তাতে সমর্থন জানাতে পারে।”


সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আরজি কর কাণ্ডে অভিযুক্তদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে অভিযুক্তরা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত বা কোন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় রয়েছেন, তা যেন বিচার না করা হয়। ধর্ষক তথা খুনিদের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক রং বিচার্য বিষয়ই নয়। কেবল তাঁদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি সুনিশ্চিত করতে হবে। এর আগেও ধর্ষণে অভিযুক্তদের এনকাউন্টারের মতো কড়া শাস্তির বিধানের দাবি জানিয়েছিলেন অভিষেক। এর আগে ডায়মন্ড হারবারের উন্নতিকল্পে ১০ অগস্ট আমতলায় আয়োজিত প্রশাসনিক বৈঠক সেরে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন অভিষেক। সে সময়ই আরজি কর হাসপাতালে ছাত্রী খুনের ঘটনায় সরব হন তিনি। এবার আরও একবার সরব হলেন। এবারও অভিষেক নিজের অবস্থানে অটল থেকে জানিয়ে দিলেন, রাজনীতির রঙ না দেখেই অভিযুক্তদের কড়া শাস্তি দেওয়া হোক।

উল্লেখ্য, আরজিকরে চিকিৎসক তরুণীকে যেভাবে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে, তাতে একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকার তত্ত্বই ক্রমশ্য জোরালো হচ্ছে। তবে কলকাতা পুলিশ মাত্র একজন অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করেছে। যদিও কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে বর্তমানে আরজিকর-এর মামলাটি সিবিআই-এর হাতে। অন্যদিকে, এই ঘটনায় কাউকে আড়াল করা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সেই সময়ই তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের ঘনিষ্ঠ মহলে এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর মতে, দোষীদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে কে কোন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় আছেন, তা দেখা উচিত নয়। এক্ষেত্রে অভিষেক বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, অপরাধী যেই হোক না কেন, তাঁর উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে তাঁর নারী সুরক্ষাকে সুনিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসক তরুণী খুনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে কলকাতা পুলিশের তদন্ত এবং রাজ্য সরকারের তৎপরতা প্রত্যেকের দিকেই আঙ্গুল তুলেছেন বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রী, বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে আমজনতা।

এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে অভিষেকের এই মন্তব্য প্রমাণ করে দেয় যে, রাজনৈতিক বর্ণ নির্বিশেষে অপরাধীদের আড়াল করতে ইচ্ছুক নয় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কখনও অভিষেক দলীয় শুদ্ধিকরণের বার্তা দিয়েছেন, আবার কখনও বলেছেন দলে থেকে কেউ কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হলে তাঁর অন্তিম পরিণতি হবে ‘দল থেকে বহিষ্কার’। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের দুই হেভিওয়েট নেতৃত্ব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মন্ডলকে উদাহরণ হিসেবে দেখাই যায়। অভিষেক নিজে একাধিকবার বলেছেন, পার্থ চ্যাটার্জীদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত প্রমাণ ছিল, তাই দল তাঁকে বাঁচানোর বিষয়টি একবারও ভাবেনি। অর্থাৎ অভিষেক বুঝিয়ে দিতে চান, দলে অপরাধীদের কোনও স্থান নেই। সেই দিক থেকে বিচার করলে আরজিকর কাণ্ডে অভিষেকের বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।