• facebook
  • twitter
Thursday, 19 September, 2024

পাইকারি এবং খুচরা মূল্যস্ফীতির হারের সাথে ভোক্তাদের ব্যয়ের পরিসংখ্যানও বৃদ্ধি পেয়েছে

অভিজিৎ রায়: মুদ্রাস্ফীতি গৃহস্থালির খরচের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। অতএব, এটি আশ্চর্যের কিছু নয় যে বর্ধিত পাইকারি এবং খুচরা মূল্যস্ফীতির হারের সাথে ভোক্তাদের ব্যয়ের পরিসংখ্যানও বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ২০২২ – ২৩ সালের গৃহস্থালী ব্যয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ দিনে তিনবেলা খাবার পায় না। গ্রামে এবং শহরে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে এই পার্থক্য

অভিজিৎ রায়: মুদ্রাস্ফীতি গৃহস্থালির খরচের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। অতএব, এটি আশ্চর্যের কিছু নয় যে বর্ধিত পাইকারি এবং খুচরা মূল্যস্ফীতির হারের সাথে ভোক্তাদের ব্যয়ের পরিসংখ্যানও বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ২০২২ – ২৩ সালের গৃহস্থালী ব্যয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ দিনে তিনবেলা খাবার পায় না। গ্রামে এবং শহরে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে এই পার্থক্য খুবই সামান্য। প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা নিয়মিত সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও রাতের খাবার খেতে পারছে না।

এর কারণ শুধু মূল্যস্ফীতিই নয়, আয়ের বৈষম্যও বাড়ছে। দেশের শীর্ষ পাঁচ শতাংশ ধনী এবং সবচেয়ে ধনী পাঁচ শতাংশ মানুষের গৃহস্থালি ব্যয়ের প্রায় বিশ গুণের পার্থক্য রয়েছে। দরিদ্রতম পাঁচ শতাংশ গ্রামীণ মানুষের গড় গৃহস্থালির ব্যয় হল ১৩৭৩ টাকা এবং শীর্ষ পাঁচ শতাংশ শহুরে ধনী মানুষের গড় পরিবারের ব্যয় হল ২০,৪২৪ টাকা৷ স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে সরকারকে টার্গেট করার সুযোগ পেয়েছে বিরোধীরা। গত দশ বছরে বর্ধিত আয় বৈষম্যের তথ্য উল্লেখ করে কংগ্রেস সরকারের অর্থনৈতিক নীতির সমালোচনা করেছে।
গৃহস্থালীর ব্যয় বৃদ্ধি এবং ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ভোগ ব্যয়ের ব্যাপক ব্যবধান অর্থনৈতিক বৈষম্যকে নির্দেশ করে। একই অনুপাতে আয় বাড়লে মুদ্রাস্ফীতি এবং গৃহস্থালির ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মানুষ সমস্যায় পড়ে না। কিন্তু গত পাঁচ-সাত বছরে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনার পর লক্ষাধিক মানুষ চাকরি ও কর্মসংস্থান হারিয়েছে, যার কারণে তাদের সংসারের খরচ মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এর উপরে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি হয়ে ওঠে কষ্টের পাহাড়।

অন্যদিকে বিত্তবানদের গৃহস্থালির ব্যয় বাড়ছে। অর্থাৎ তাদের আয়ও বাড়ছে। এতেও বাজারে অসঙ্গতির সৃষ্টি হয়। শুধু ধনী ব্যক্তিদের জোরে কোনো বাজারই টিকে থাকতে পারে না। ধনীদের আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে বিলাস দ্রব্যের বিক্রয় অবশ্যই বৃদ্ধি পায়, কিন্তু খুচরা বাজার, যা সাধারণ ভোক্তার শক্তির উপর ভিত্তি করে, তাকে ক্রমাগত সংগ্রাম করতে হয়। গত কয়েক বছরে দেশের মোট সৃষ্ট সম্পদের প্রায় চল্লিশ শতাংশ চলে গেছে মাত্র এক শতাংশ মানুষের হাতে। দেশের সত্তর কোটি জনসংখ্যার মোট সম্পদের সমান অংশ রয়েছে একুশ জন ধনী ব্যক্তির।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতিতে একচেটিয়া আধিপত্য বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। কিন্তু সরকার এই অসঙ্গতি দূর করতে আন্তরিক বলে মনে হয় না। এটা আশ্চর্যজনক যে একদিকে দেশটিকে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসাবে তুলে ধরা হয়। কয়েক বছরের মধ্যে দেশটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলে দাবি করা হচ্ছে। এটি উন্নত দেশের ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এর বিপরীতে আরেকটি চিত্র হলো, দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা তিনবেলা খাবার জোগাড় করতে পারছে না।

আশি কোটি মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করাকে সরকার নিজেই তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হিসেবে তুলে ধরে। জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি না হলে এবং আয় বৈষম্য দূর না হলে সুষম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আশা করা কঠিন থেকে যায়। এ জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত নীতিমালা করতে হবে, যার অনুপস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে।