দিল্লি, ২৫ এপ্রিল: প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা কংগ্রেসের ইস্তাহার সম্পর্কে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। আর সেই ভুল ব্যাখ্যা দলীয় প্রচারে তুলে ধরছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেসের সর্ব ভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রধানমন্ত্রীকে তাঁদের দলীয় ইস্তাহার ন্যায়পত্র ব্যাখ্যা করে শোনাতে চান। সেজন্য মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চাইলেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা। তিনি দলীয় ইস্তাহার ‘ন্যায়পত্র’-এ পাঁচটি প্রতিশ্রুতিকে সবিস্তারে প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরতে চান। এজন্য মোদিকে দুই পাতার একটি চিঠি লিখেছেন খাড়গে। সেই চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ইস্তাহারে লেখা নেই এমন বিষয়গুলি সম্পর্কে আপনার উপদেষ্টারা আপনাকে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। তাই ‘ন্যায়পত্র’ ব্যাখ্যা করার জন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে আপনার কাছে সময় চাইছি।’’ তাঁদের ইস্তাহারকে কেন ন্যায়পত্র বলা হচ্ছে? এবিষয়ে সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেন খাড়গে। সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, তাঁদের দলীয় ইস্তাহার পাঁচটি ন্যায়ের ওপর দাঁড়িয়ে। সেগুলি হল- মহিলা, যুবসমাজ, কৃষক, শ্রমিক এবং ভাগিদারি (জাতভিত্তিক জনসংখ্যা) অনুযায়ী ক্ষমতায় অংশগ্রহণের ন্যায়ের দাবি।
প্রসঙ্গত গত রবিবার উত্তরপ্রদেশের বাঁশওয়াড়ায় একটি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর নির্বাচনী প্রচারে কংগ্রেসকে নিশানা করেন। বলেন,‘‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ অতীতে বলেছিলেন, দেশের সম্পদে সর্বাগ্রে অধিকার মুসলিমদের। সেই কারণেই সমীক্ষা করার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস। যাতে দেশবাসীর কষ্টার্জিত অর্থ মুসলিম ও অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া যায়।’’ এরপর গত সোমবার উত্তরপ্রদেশের অলিগড়ে প্রচারে যান মোদী। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের নজর আপনার সম্পত্তির উপরে রয়েছে। ক্ষমতায় এলে এরা মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে। কাদের বিলিয়ে দেবে, তা আপনারা জানেন।’’ এরপর গতকাল বুধবার ছত্তীসগঢ়ের সরগুজায় বিজেপির নির্বাচনী প্রচার সভায় বলেন, ‘‘কংগ্রেসের লুটের মন্ত্র হল ‘জিন্দেগি কে সাথ ভি, জিন্দেগি কে বাদ ভি’ (জীবনের সঙ্গে, জীবনের পরেও)। অর্থাৎ কংগ্রেসের লক্ষ্য হল, আপনি যতদিন বেঁচে থাকবেন, আপনার থেকে কর আদায় করবে। আপনার মৃত্যুর পর আপনার পুত্র-কন্যাদের থেকেও আপনারই রেখে যাওয়া সম্পত্তির উপর উত্তরাধিকার করের বোঝা চাপিয়ে দেবে।’’
মোদী ও তাঁর দলের নেতাদের একের পর এক এই প্রচার নিয়ে সরব হয় কংগ্রেস। বিরোধী নেতাদের দাবি, প্রথম দফা নির্বাচনে ভালো ফল হয়নি বুঝতে পেরে দ্বিতীয় দফার ভোটের আগেই সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক প্রচারে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের হিন্দু মহিলাদের কাছে মুসলিম ও কংগ্রেস সম্পর্কে আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে বলে দাবি করেন কংগ্রেস নেতারা । এই প্রসঙ্গেই আজ খাড়গে দুই পাতার চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। সেই চিঠিতে তিনি দাবি করেছেন, ‘‘প্রথম পর্বে বিজেপির ফলাফল হতাশাজনক হয়েছে বুঝতে পেরেই আপনি এবং আপনার সহকর্মীরা এমন ভাষা প্রয়োগ করছেন। আমরা এতে বিস্মিত নই। গরিবদের যখন খাবার এবং লবণের উপর জিএসটি দিতে হয়, অথচ আপনার সরকার ধনী কর্পোরেটদের কর মকুব করে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করে। তাই, যখন আমরা কথা বলি ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য, আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে বিষয়টিকে হিন্দু এবং মুসলিমের মধ্যে বিভাজিত করতে চান।’’
উল্লেখ্য, গত বছর নভেম্বরে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই ভোটের সময় জাতগণনার দাবির প্রসঙ্গ উঠে আসে। সেই দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রী তখন বলেন, তাঁর কাছে চারটি বড় জাত হল, মহিলা, তরুণ, কৃষক ও গরিব। এরপরেই শুরু হয় রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’। সেই ন্যায় যাত্রায় তিনি মোদির থেকে এক ধাপ এগিয়ে পঞ্চ ন্যায়ের কথা ঘোষণা করেন। রাহুলের সেই ন্যায়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি হয়েছে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহার ‘ন্যায়পত্র’। সেই পঞ্চ ন্যায়ের মধ্যে রয়েছে- মহিলা, যুবসমাজ, কৃষক, শ্রমিক এবং ভাগিদারি। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সেই বিষয়গুলি তুলে ধরতেই চিঠি লিখে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েছেন।