জম্মু-কাশ্মীরে সরকার গড়বে কংগ্রেস-ন্যাশনাল কনফারেন্স জোট। বুধবার উপত্যকায় ভোটের প্রচারে গিয়ে এই মন্তব্য করলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি। একই সঙ্গে বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি। রাহুলের কথায়, বিজেপি দেশজুড়ে ঘৃণা-ভয় ছড়াচ্ছে, ভালোবাসা দিয়ে কংগ্রেস সেগুলো দূর করবে।
জম্মুর রামবন জেলার সাঙ্গলদান এলাকায় কংগ্রেস প্রার্থী ভিকার রসুল ওয়ানির সমর্থনে সভা করেন রাহুল। সেখানে তিনি বলেন, এই জায়গাটা এতটাই সুন্দর যে পরের জনসভায় যেতে ইচ্ছে করছে না। মানসিক দ্বিধায় পড়ে গিয়েছি। আমি এখানকার মানুষদের সঙ্গে কিছু দিন কাটাতে চাই।
রাহুলের অভিযোগ, বিজেপি এবং আরএসএস দেশে ভয়, ঘৃণা এবং হিংসা ছড়াচ্ছে। কংগ্রেস ভালবাসা দিয়ে এগুলোকে পরাস্ত করবে।
কংগ্রেস সাংসদের কথায়, এবার লড়াই মূলত দুটি মতাদর্শের মধ্যে, একদিকে ভয়, ঘৃণা এবং হিংসা এবং অন্যদিকে ভালবাসা, সম্মান এবং শ্রদ্ধা। ভারত জোড়ো যাত্রার সময় কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত হেঁটেছি। ৪০০০ কিলোমিটার হেঁটে মানুষকে বলেছি, বিজেপি ঘৃণার বাজার বসিয়েছে, আর আমরা সেই বাজারে প্রেমের ব্যবসা করতে এসেছি।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি বলেন, কংগ্রেস জোট বেঁধে জম্মু-কাশ্মীরে পরবর্তী সরকার গঠন করতে চলেছে, এটা অনিবার্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগে চওড়া বুক নিয়ে ঢুকতেন, এখন তাঁর কাঁধ ঝুঁকে পড়ে। এবার তিনি সংবিধানের কপি মাথায় নিয়ে সংসদে প্রবেশ করেছেন।
রাহুল গান্ধি বলেন, ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি অঞ্চল থেকে রাষ্ট্রের মর্যাদা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানকার জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এর আগে আমরা দেখেছি বেশ কিছু রাজ্যকে দু’ভাগ করা হয়েছে। তেলেঙ্গনা, উত্তরাখণ্ড, ছত্তিশগড় রাজ্যভাগের মাধ্যমেই তৈরি হয়েছে। কিছু এর আগে কখনও একটা রাজ্যকে ভেঙে দুটো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয়নি। জম্মু-কাশ্মীরের ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়াই আমাদের প্রথম লক্ষ্য।
রাহুল গান্ধির সঙ্গে প্রচারে ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, দলের সাধারণ সম্পাদক ভারতসিন সোলাঙ্কি এবং জম্মু-কাশ্মীর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তারিক হামিদ কারা।
জম্মু-কাশ্মীরে প্রাক-নির্বাচনী জোট ঘোষণা করেছে কংগ্রেস এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স। কংগ্রেস ৩১টি এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স ৫২টি আসনে লড়ছে। সিপিএমের জন্য ও প্যান্থার্স পার্টির জন্য একটি আসন ছেড়ে দিয়েছে জোট।
জম্মু ডিভিশনের নাগরোটা, ভাদেরওয়াহ, বানিহাল ও ডোডা এবং উপত্যকার সোপোরে- এই পাঁচটি আসনে উভয় দলই একে অপরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেবে। একের জোটের তরফে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ বলা হচ্ছে।
জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার মোট আসনসংখ্যা ৯০, যার মধ্যে ৪৭টি আসন রয়েছে কাশ্মীরে, বাকি ৪৩টি জম্মুতে। এর মধ্যে ৯টি তফশিলি উপজাতি এবং ৭টি আসন তফশিলি জাতিদের জন্য সংরক্ষিত। এই ৯০টি আসনে তিন দফায় নির্বাচন হবে। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর, ২৫ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর ভোটগ্রহণ, ৪ অক্টোবর ভোট গণনা হবে।
উপত্যকায় শেষবার বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল ২০১৪ সালে, তখন তা রাজ্য ছিল। ২০১৯ সালে আইনসভা-বিশিষ্ট কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষিত হওয়ার পরে এই প্রথম ভোট হতে চলেছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি) ২৮টি আসনে জয়লাভ করে। ভারতীয় জনতা পার্টি পায় ২৫টি আসন, ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং কংগ্রেস যথাক্রমে ১৫টি এবং ১২টি আসনে জেতে।