শিল্প শহরে ভোট প্রচারে এসে, বন্ধ হওয়া কারখানা খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি শাহর

নিজস্ব প্রতিনিধি— তৃতীয় দফার নির্বাচনের প্রাক্কালে ফের বাংলায় পা রাখলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷ সোমের জোড়া কর্মসূচিতে যোগ দিতে রবির রাতেই কলকাতায় এসে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ প্রথমেই ‘মহুয়া গড়’ এ উপস্থিত হয়েছিলেন শাহ৷ এদিন কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী ‘রাজমাতা’ অমৃতা রায়ের সমর্থনে রোড শো করেন অমিত শাহ৷ তারপরই পাড়ি দেন দুর্গাপুর, বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের সমর্থনে করেন জনসভা৷ ভোট প্রচারে এসে বাংলায় দুষ্কৃতীরাজের অভিযোগ তুলে ফের গুন্ডাদের উলটো ঝোলানোর নিদান অমিত শাহের৷ পাশাপাশি, শিল্প শহর দুর্গাপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে সেখানকার বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি শাহের মুখে৷ তবে শর্ত একটাই, দিলীপ ঘোষকে জয়ী করতে হবে৷ একঝাঁক প্রতিশ্রুতি দিয়ে শাহ বলেন, “আমি আপনাদের মোদির গ্যারান্টি দিচ্ছি৷ এই কেন্দ্রে দিলীপদাকে জিতিয়ে দিন বর্ধমান ও দুর্গাপুরে যে সব কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে তা চালু করে দেব আমরা৷ দুর্গাপুরে স্টিল ও ইউরিয়া প্লান্টে আরও বিপুল বিনিয়োগ করে এই শিল্পকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷ ” এরপরই সরাসরি তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে গর্জে ওঠেন শাহ৷ তিনি বলেন, “এখানকার শ্রমিকদের উপর তৃণমূলের গুন্ডারাজ চলে৷ শ্রমিকদের তাঁদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে তোলাবাজি চালায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা৷ আর সেই টাকা চলে যায় ভাইপোর কাছে৷ এখানে একবার আমাদের জিতিয়ে দিন, আমি কথা দিচ্ছি এই সব গুন্ডাদের উলটো ঝুলিয়ে সোজা করব আমরা৷ ” সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শাহ বলেন, “দিদি গত ১৫ দিন ধরে এখানে আছেন বিজেপিকে হারাতে৷ দিদি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি ৫ বছর এখানে থাকলেও আমাদের হারাতে পারবেন না৷ এখানে অপরাধের প্লান্ট খুলেছেন দিদি৷ ” ইন্ডিয়া জোট ১২ লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে, বিরোধী দলগুলিকে তুলোধনা করে এমনই অভিযোগ করলেন শাহ৷ ওঁনার আরও সংযোজন, “নরেন্দ্র দি তেইশ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী আছেন, ওঁনার বিরুদ্ধে পঁচিশ পয়সার দুর্নীতিরও কোনো অভিযোগ নেই৷ ”

সন্দেশখালি কাণ্ডের জল গড়িয়েছে অনেক দূর৷ ভাইরাল হওয়া ভিডিও এর ভিত্তিতে রাজ্যের শাসকদল এই ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত’ বলে দাবি করলেও পদ্মশিবিরের ভাষায়, ভিডিওটি ‘ডিপফেক’৷ বাংলায় এসে এবার এই প্রসঙ্গেই সুর চড়ালেন শাহ৷ তবে ওঁনার বক্তৃতায় রইলো না ভাইরাল ভিডিও এর উল্লেখ৷

সন্দেশথালিকাণ্ড নিয়ে পুরনো মেজাজেই তৃণমূলকে আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, “সন্দেশখালিতে তৃণমূলের নেতারা ধর্মের ভিত্তিতে মা বোনেদের উপর অত্যাচার করেছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় দোষীদের ধরেন না৷ হাইকোর্ট সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দিয়েছে৷ শাহজাহানের মতো নেতাদের জেলে পাঠানো উচিত কি উচিত না? মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর নাকের নীচে মহিলাদের ধর্ষণ করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে৷ যাঁরা অত্যাচার করেছেন, তাঁদের পাতাল থেকেও খুঁজে বার করে সাজা দেওয়া হবে৷ ” মহুয়া গড়ে দাঁড়িয়েও এ প্রসঙ্গে শাহ দুষেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকেই৷ তিনি বলেন, “আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই জবাব দিতে হবে যে এতদিন ধরে সন্দেশখালিতে যেসব নেতারা মহিলাদের উপর নির্যাতন করছিল, তাঁদের গ্রেপ্তার করেননি কেন? আপনার দলের নেতারাই দুরাচার করছিলেন৷ আপনি কি শাহজাহানকে নির্দোষ মনে করেন? কেন হাইকোর্টকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিতে হল?” এরপরই তিনি রীতিমতো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ”মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিদায় নিতেই হবে৷ মহুয়াদিদি তো নিজেই ফেঁসে গিয়েছেন৷ এবার এখান থেকে রানিসাহেবাই জিতবেন৷ ”


রোডশো থেকে দুর্নীতি, অনুপ্রবেশ ও কাটমানি ইসু্যতে রাজ্যের শাসক দলকে বিঁধলেন তিনি৷ অমিত শাহ বলেন, “দুর্নীতি খুব বড় ইসু্য৷ এখান থেকে ৫১ কোটি উদ্ধার হয়েছে৷ এত টাকা কোথা থেকে এল? এটা বাংলার মানুষের পয়সা৷ ” পাশাপাশি বাংলার ভোট ফলাফল নিয়েও প্রত্যয়ের সুর শোনা গেল ওঁনার কণ্ঠে৷ “৩০-এর বেশি আসনে আমরা জয়ী হব৷ ৩৫টি আসনে জয়ী হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে”, বঙ্গে এসে আত্মবিশ্বাসী শাহ৷ গোটা দেশে নির্বাচনের সময় একমাত্র বাংলাতেই হিংসার ঘটনা ঘটে, এই অভিযোগ বিজেপির পুরোনো৷ এবার কৃষ্ণনগর থেকে পরোক্ষ ভাবে ‘তৃণমূল গুন্ডাদের’ সংযত থাকার বার্তা দিলেন শাহ৷ তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন ভোটে নিরাপত্তার কড়া ব্যবস্থা করেছে৷ আপনারা নির্ভয়ে বুথে গিয়ে বিজেপিকে ভোট দিন৷ মমতা দির গুন্ডারা কিছুই করতে পারবে না৷ আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি৷ ”
অনুপ্রবেশকারীরাই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক, দাবি করলেন শাহের৷ পাশাপাশি হিন্দুত্বের হাওয়া তুলতেও ভোলেন নি অমিত শাহ৷ রামমন্দিরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “তৃণমূল এবং কংগ্রেস দল রামমন্দির তৈরির পথে বাধা দিচ্ছিল৷ প্রাণপ্রতিষ্ঠার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল৷ কিন্ত্ত ওঁনারা জাননি৷ ভোটব্যাঙ্কের ভয়ে যাননি৷ ভোটব্যাঙ্কের ভয়ে রামকে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল৷ ” বাম, কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মতো দল কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা রেখে দিয়েছিল৷ আর সেই কারণেই সেখানে সন্ত্রাসবাদীদের রমরমা বৃদ্ধি পেয়েছিল, মন্তব্য শাহের৷ এই প্রসঙ্গেই তিনি বিঁধেছেন রাহুল গান্ধীকেও৷ এদিন সিএএ এর পক্ষে আওয়াজ তুলে শাহ দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “যত খুশি বিরোধ করে ফেলুক তৃণমূল, হিন্দু ভাইদের নাগরিকত্ব দেওয়া থেকে কেউ রুখতে পারবে না৷ ” ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়েও এদিন তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷