নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আপনি মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ নাকি! একটা চিঠি দাদাকে পাঠিয়ে দিতে পারবেন ? আপনাকে নাকি বিধায়ক দাদার ডান হাত বলা হয়! আমাদের এলাকার রাস্তাটার বেহাল অবস্থা৷ বিধায়কের কাছে অভিযোগ জানাতে চাই৷ ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন? নেতা মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় পৌঁছে যাওয়া যায় জনগণের ঘরে৷ ওমুক দাসের সুপারিশেই কাজটা হয়েছে৷ উনি মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত৷ এর থেকে বড় সম্মানের আর কী-ই বা হতে পারে৷ জনগণের কাছাকাছি পৌঁছানোর পরও এরকম কয়েকজন ‘ঘনিষ্ঠ’দের ক্ষমতার অপব্যবহার করার প্রবণতা ইদানিং বেড়েছে৷ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে৷ দল থেকেও হতে হয়েছে বহিষ্কার৷ কিন্ত্ত বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সামনে এসেছে এরকম ছবি৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার দলের নেতামন্ত্রীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন৷ কিন্ত্ত সর্ষের মধ্যে কয়েকটা ভূত এখনও রয়ে গিয়েছে বলে মত তৃণমূল নেতৃত্বের৷ তাঁদেরই ধরতে আসরে নেমে পড়েছে প্রশাসক৷ শুধু শাসকদল নয়, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের ঘনিষ্ঠরাও জড়িয়ে পড়ছেন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে৷
সম্প্রতি চোপড়ার সালিশিসভায় এক যুবক ও এক যুবতিকে রাস্তায় ফেলে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল নেতা তাজিমুল তথা জেসিবির বিরুদ্ধে৷ তিনি বিধায়ক হামিদুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বলেই এলাকায় পরিচিত৷ বিধায়ক ঘনিষ্ঠ হয়েও কীভাবে তিনি এরকম একটা আপরাধ করতে পারলেন- সেই প্রশ্নেই আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধীরা৷ জানা গিয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করেই চোপড়ার লক্ষ্মীপুরের অঘোষিত ‘বিচারক’ হয়ে ওঠেন জেসিবি৷ এলাকার গ্রাম্য বিবাদ থেকে শুরু করে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক– সব কিছুরই শাস্তির বিধান নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি৷ স্থানীয় সূত্রে খবর, খুন সহ ১২টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে৷ চোপড়ার এই ঘটনা সামনে আসার পর গ্রেপ্তার করা হয় জেসিবিকে৷ বুধবার চোপড়ার ঘটনায় আরও এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তিনি জেসিবির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বলে জানা গেছে৷
সাম্প্রতিক অতীতে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, গরু পাচার, রেশন দুর্নীতি মামলায় এরকম একাধিক ‘ঘনিষ্ঠ’র নাম জড়িয়েছিল৷ বাদ পড়েননি তাঁদের গুরুরাও৷ বর্তমানে জেলে রয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকরা৷ দল থেকেও তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে৷ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক পদ থেকে৷ সম্প্রতি চোপড়ার ঘটনা সামনে আসার পর বিধায়ক হামিদুলকে প্রশ্ন করা হলে প্রথমে উনি একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন৷ সেই বিবৃতি নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক৷ চোপড়ার এই ঘটনায় মঙ্গলবার স্থানীয় এই বিধায়ক হামিদুল রহমানকে শোকজ করেছে উত্তর দিনাজপুর জেলা নেতৃত্ব৷ চাওয়া হয়েছে তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যের ব্যাখ্যাও৷ জেলা তৃণমূল সভাপতি কানাইলাল আগরওয়াল বিধায়ককে শোকজের চিঠি পাঠিয়েছেন৷ অপরদিকে বিধায়ককে ফোন করে ধমক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আর যেন এরকম ঘটনা না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে বিধায়ককে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
বুধবার বিধানসভার বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন বিধায়ক হামিদুল৷ এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে মেজাজ হারান তিনি৷ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কেন এমন ঘটনা ঘটল ? জবাবে তিনি বলেন, মহিলাটি অন্যায় করেছে৷ এক সাংবাদিক পাল্টা প্রশ্ন করেন, কী অন্যায় ? জবাবে বিধায়ক বলেন, সেই জবাব গ্রামবাসীরা দেবেন৷ আবার পাল্টা প্রশ্ন করা হয় তাঁকে, তাহলে কি আপনি নীতিপুলিশ করছেন? জবাবে হামিদুল বলেন, ওদের সঙ্গেও অন্যায় হয়েছে৷ আমি নীতিপুলিশ নই৷ যারা অন্যায় করেছে পুলিশ ভিডিয়ো দেখে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে৷ এরপর তাঁর ‘ইসলামিক রাষ্ট্র’ মন্তব্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি কোনও ভুল কথা বলিনি৷ আমার কথাকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে৷ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বার বার মেজাজ হারিয়েছেন বিধায়ক৷ তারপর হলুদ ট্যাক্সি ধরে বিধানসভা থেকে বেরিয়ে যান৷
ইদানিং দলীয় নেতৃত্বের এরকম ‘বেয়াদবি’ নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ এসেছে রাজ্য নেতৃত্বের তরফে৷ সহ্য করা হবে না কোনও ধরনের অপরাধমূলক কাজ৷ এরকম নেতা ও তাঁদের ঘনিষ্ঠদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৃণমূল কংগ্রেস বদ্ধপরিকর বলে দাবি নেতৃত্বের৷
উল্লেখ্য, বিহারের জেলে বসেই এরাজ্যে একাধিক ডাকাতির ব্লু প্রিন্ট তৈরি করেছিলেন সুবোধ সিং৷ সম্প্রতি এক ব্যবসায়ীর গাড়িতে হামলার অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে৷ সেই কুখ্যাত গ্যাংস্টার সুবোধ সিংয়ের সঙ্গে বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংয়ের যোগসাজস রয়েছে বলে অভিযোগ করে তৃণমূল কংগ্রেস৷ যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অর্জুন সিং৷ অর্জুনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব৷ এবিষয়ে তাঁকে কোনও শোকজের নোটিশ ধরানো হয় কি না সেটাই দেখার৷