‘চেয়ারের সম্মান রাখতে হবে’, দাড়িভিট মামলায় রাজ্যের শীর্ষ আমলাদের বললো হাইকোর্ট

মোল্লা জসিমউদ্দিন

উত্তরবঙ্গের দাড়িভিট মামলা কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ থেকে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ অবধি গেছে৷ অবশেষে সোমবার আদালত অবমাননা মামলায় রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা দাডি়ভিট কাণ্ডে আদালতে ভার্চুয়াল হাজিরা দিলেন৷ দাঁডি়ভিট মামলায় মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও এডিজি সিআইডি হাইকোর্টে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা৷ সেই মতো সোমবার আদালতে ভার্চুয়ালি হাজিরা দিলেন রাজ্যের তিন শীর্ষকর্তা৷ রাজ্যের মুখ্য সচিব বিপি গোপালিকা, ছিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী এবং এডিজি সিআইডি৷ দাঁডি়ভিট কাণ্ডে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ কে নথি হস্তান্তর করল সিআইডি৷ ইতিমধ্যেই দরিভিট নিয়ে এফআইআর দায়ের করেছে এনআইএ৷ এখনও পর্যন্ত নিহত দুই ছাত্রের মৃতদেহ তাদের বাডি়র পাশে কবরস্থ করা আছে৷ এই দুই মৃতদেহের দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের জন্য মৃতের পরিবার এনআইএকে আবেদন জানাবে বলে জানালেন মৃতের পরিবারের আইনজীবী৷ সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে হাজিরা দিয়ে মুখ্যসচিব বলেন, ‘আমরা তিন জনেই হাজির হয়েছি৷ এনআইএকে নথি হস্তান্তর করা হয়েছে৷’ এরপর বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা বলেন, ‘জানি আপনি রাজ্যের অন্যতম প্রধান প্রশাসনিক প্রধান৷ আপনাদের উপর গোটা রাজ্যের দায়িত্ব থাকে৷ তবে কোর্ট যদি কাউকে ডাকে তাহলে তাঁকে চেয়ারের সম্মান জানিয়ে আদালতে হাজির হতে হয়৷ এটা আমার ব্যক্তিগত সম্মানে নয় চেয়ারের সম্মানে৷ এবার যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নেবে৷’ উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি বিচারের জন্য ২০২৩ সালের ১৩ মে সিঙ্গেল বেঞ্চে বিচারের জন্য ফেরত পাঠিয়েছেন৷ এদিন দাডি়ভিটে গুলিতে ছাত্রমৃতু্যর ঘটনায় ভার্চুয়াল হাজিরা দিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, এডিজি সিআইডি৷ এদিন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা বলেন, ‘আপনাদের উচিত এজির সঙ্গে কথা বলা৷ তিনি আইন জানেন৷ আমরা জানি, আপনাদের উপর চাপ থাকে৷ তবে চেয়ারের সম্মান রাখতে হবে৷ কোর্ট যখন রুল ইসু্য করেছে, তখন আপনাদের হাজির হয়ে বক্তব্য জানানো বাধ্যতামূলক৷’ রাজ্যের তরফে জানানো হয়, ‘এনআইএকে অনেক তথ্য হস্তান্তর করা হয়েছে’৷ জানা গেছে, এই আদালত অবমাননার মামলায় আর এগোবে না সিঙ্গেল বেঞ্চ৷ উল্লেখ্য, গত ২০১৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে রীতিমতো অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের দাডি়ভিট হাইস্কুলে৷

অভিযোগ, সেই সময় অবরোধ, লাঠি চার্জ থেকে শুরু করে পাথর ছোড়া হয়৷ চলে গুলিও, অভিযোগ এমনটাই৷ এই ঘটনায় দুই প্রাক্তন ছাত্র রাজেশ সরকার এবং তাপস বর্মণের মৃতু্য নিয়ে রীতিমতো উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি৷ এলাকাবাসীর বিক্ষোভে প্রায় দুই মাস বন্ধ ছিল দাডি়ভিট স্কুল৷ স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, ‘পুলিশ গুলি চালিয়েছে’৷ যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ৷ প্রথমে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয় এই মামলায়৷ কিন্ত্ত, গত বছর মে মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথাও বলেন বিচারপতি৷ কিন্ত্ত, মামলাকারীরা কলকাতা হাইকোর্টে অভিযোগ জানায় যে, ‘এই নির্দেশের পর দশ মাস কেটে গিয়েছে কিন্ত্ত এখনও পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টের রায় কার্যকর করে ক্ষতিপূরণ দেয়নি রাজ্য সরকার৷ এর পাশাপাশি সিআইডিকে এনআইএর হাতে কোনও নথিও তুলে দেয়নি৷ এরপরেই রাজ্যের তিন উচ্চ পদস্থ আধিকারিকের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি৷


পাশাপাশি প্রথমে তাঁদের সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল হাইকোর্টের তরফে৷ কিন্ত্ত, তাঁরা হাজিরা দেননি৷ এরপরেই গত ১২ এপ্রিল আদালত স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল, তিন জনকেই ভার্চুয়ালি হাজির থাকতে হবে৷ মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং এডিজি সিআইডির বিরুদ্ধে রুলও জারি করেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার৷ এরপর বিচারপতি মান্থার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য৷ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে ওঠে এই মামলা৷ রাজ্য সেখানেও ধাক্কা খায়৷ এনআইএ তদন্ত এবং ক্ষতিপূরণ দুই নির্দেশই বহাল রাখা হয়৷ সোমবার আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ভার্চুয়ালি হাজিরা দেন এই রাজ্যের শীর্ষ তিন আধিকারিক৷