বারাসত মেট্রো লাইনের জন্য সংসদে বরাদ্দ বৃদ্ধির আর্জি কাকলির
প্রশান্ত দাস: ধারাবাহিক রেল দুর্ঘটনা এবং রেলের কাঠামোগত বেহাল দশার প্রসঙ্গ তুলে এবার সংসদে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হলেন বারাসতের চতুর্থবারের সাংসদ তথা লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের ডেপুটি লিডার ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। কেবল রেল দুর্ঘটনা নিয়ে কেন্দ্র সরকারকে আক্রমণই নয়, রেলের একাধিক সমস্যার সমাধানও সংসদে বাতলে দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বারাসত মেট্রো লাইনের অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দের আবেদন জানিয়েছেন কাকলি। বারাসতবাসীর অধিকারের জন্য দৃঢ় কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছেন সংসদের বুকে। মঙ্গলবার সংসদে নিজ বক্তৃতার সূচনায় কাকলি বলেন, “আমি আমার বক্তব্য শুরু করার পূর্বে এই সংসদে উপস্থিত সকলের কাছে অনুরোধ করব, তাঁরা যেন একবার উঠে দাঁড়িয়ে বিগত ২-৩ মাসে যাঁরা রেল দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। কারণ, এই দুর্ঘটনায় তাঁদের কোনও দোষ ছিল না। শতাধিক তরতাজা প্রাণ চলে গিয়েছে গত কয়েক মাসের ধারাবাহিক রেল দুর্ঘটনায়। এই দায় রেল মন্ত্রকের।” এরপরই রেল মন্ত্রকের দিকে আঙ্গুল তুলে কাকলি বলেন, “এই মৃত্যু মিছিলের জন্য দায়ী কেন্দ্র সরকার, যে নিজ চেয়ার রক্ষার ক্ষেত্রে বেশি মনোযোগী, মানুষের জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে নয়। নিত্যদিনের রেল দুর্ঘটনায় কবে ইতি পড়বে? দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেন থেকে কি নিরাপত্তার সংকেত দেওয়া হয় অপর ট্রেনগুলিকে? ট্রেন চলাচলের ট্র্যাকগুলি কি প্রতিনিয়ত দেখা হয়?”
এদিন বারাসত মেট্রো লাইনের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির আর্জি জানিয়ে কাকলি বলেন, “বাংলার ক্ষেত্রে আরও বেশি মেট্রো লাইনের প্রয়োজনীয়তা আছে। কারণ রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ তাঁদের নিত্য যাত্রার জন্য ট্রেন অথবা মেট্রোর উপরই নির্ভরশীল। আমি অনুরোধ করব, আমার সংসদীয় অঞ্চলে বারাসত মেট্রো লাইনের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হোক। বিমানবন্দর থেকে বারাসত মেট্রো লাইনের কাজ চলছে। মাইকেল নগর থেকে বারাসত মেট্রো লাইনের কাজ বর্তমানে স্তব্ধ আছে। তাই আমার অনুরোধ, বারাসত মেট্রো লাইনের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হোক, যাতে এই কাজ সম্পূর্ণ হয়।” রেল বাজেট নিয়ে কেন সংসদে আলোচনা হয় না, এই প্রসঙ্গেরও উত্থাপন করেছেন কাকলি। তিনি বলেন, “রেল বাজেট এবং সেই সংক্রান্ত আলোচনা পূর্বেই বর্জন করা হয়েছে। এমনকি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন নিজের বক্তৃতায় (বাজেট) এ প্রসঙ্গে কিছুই উল্লেখ করেননি।” এরপরই রেলের একাধিক প্রযুক্তিগত সমস্যা তুলে ধরেন সাংসদ। তাঁর ভাষায়, “আমাদের অর্থাৎ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন রেলে এক প্রকার ‘সংঘর্ষ-বিরোধী’ যন্ত্র থাকত। এখন ‘কবচ’ কোথায়? কবে আমরা যাত্রীরা রেলের সুরক্ষা পাব? আমি রেলমন্ত্রীকে বলতে চাইব, সম্ভব হলে এরোপ্লেনের মতো ট্রেনেও সিট বেল্টের ব্যবস্থা করা হোক। কারণ বিগত একমাসে দুইজন যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন কেবল ট্রেনের ঝাঁকুনির জন্য।”
রেলের প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধান বাতলে দিয়ে কাকলি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের চিত্তরঞ্জনের কোচ কারখানাতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরির অর্ডার দেওয়া যেতে পারে। ফলে রেলের উন্নয়নের পাশাপাশি সেখানকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগও হবে। রেলে নিয়োগের বিষয়েও রেল মন্ত্রককে দৃষ্টিপাত করার পরামর্শ দিয়েছেন কাকলি। ট্র্যাকের ফিশপ্লেটগুলির বেহাল দশা নিয়েও এদিন সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বারাসতের সাংসদ। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, “সম্প্রতি কিছু বাচ্চা রেল লাইনের ধারে খেলতে গিয়ে দেখেছিল ট্র্যাকের ফিশপ্লেট খুলে গিয়েছে। সেই মুহূর্তে একটি বাচ্চা নিজের জামা খুলে ট্রেনের দিকে উড়িয়েছিল। ফলে ট্রেনটি থেমে যায় এবং দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু এটা কোনও বাচ্চার দায়িত্ব নয় রেলের ট্র্যাকগুলির পরিদর্শন করা। এই দায়িত্ব রেলের।” পাশাপাশি ঘন ঘন ট্রেন দুর্ঘটনা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের একটি নেতিবাচক রূপ প্রতিফলিত করছে, যেটি কাম্য নয় – এভাবেই সংসদে প্রতিবাদ জানিয়েছেন কাকলি। পাশাপাশি এদিন কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিজ বক্তব্যে কাকলি তুলে ধরেছেন রেলগেটের সাথে সংযুক্ত রাস্তাগুলির বেহাল দশা, রেল স্টেশনগুলিতে মহিলাদের জন্য বিশ্রাম কক্ষের সুব্যবস্থা না থাকা ও মহিলা বাথরুমের শোচনীয় অবস্থা সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।