নিজস্ব প্রতিনিধি— বহু বিতর্কের পর অবশেষে সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে নিয়ে এল রাজভবন৷ বৃহস্পতিবার সকালে ‘সচ কে সামনে’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজভবনের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে৷ অনুষ্ঠানে মূলত দেখা গিয়েছে রাজভবনের নর্থ গেট থেকে প্রকাশ করা ফুটেজ৷ তিন দফা মিলিয়ে মোট ১ ঘন্টা ১৯ মিনিটের ফুটেজ দেখা গিয়েছে৷ যার মধ্যে প্রথমটি ২ মে বিকেল ৫টা ৩১ মিনিট থেকে ৫টা ৪২ মিনিট পর্যন্ত৷ দ্বিতীয়টি বিকেল ৫টা ৩২ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত এবং তৃতীয় অর্থাৎ শেষ ফুটেজটি সন্ধ্যা ৬টা ৩২ মিনিট থেকে ৬টা ৪১ মিনিট পর্যন্ত৷
রাজভবনের ফুটেজে গত বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তোলা ওই মহিলাকে দেখা গিয়েছে৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রথমে বিকেল ৫টা ৩২ নাগাদ মহিলা রাজভবন থেকে বেরিয়ে সংশ্লিষ্ট ওসির কাছে যাচ্ছেন৷ তারপরে বিকেল ৫টা ৪০ নাগাদ ওসির ঘর থেকে বেরিয়ে তাঁকে পাশের ঘরে যেতে দেখা গিয়েছে৷ তবে তিনি একা নন, তাঁর সঙ্গে কিছু পুলিশকর্মীকেও দেখা গিয়েছে৷ যদিও তিনি ওই ঘর থেকে কখন বেরিয়েছেন তা ফুটেজে দেখা যায়নি৷
উল্লেখ্য, রাজভবনের তরফ থেকে বুধবার রাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশের কথা জনানো হয়েছিল৷ তাতে বলা হয়েছিল, বৃহস্পতিবার সকালে ভিডিও প্রকাশ করা হবে৷ তবে তা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশ দেখতে পারবেন না৷ রাজভবন সূত্রে খবর, তারপরেই রাজভবনে ফোন করে প্রায় ৭৫ জন নাম নথিভুক্ত করেন সিসিটিভি ফুটেজ দেখার জন্য৷
গত ২ মে শ্লীলতাহানির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর বিবৃতি দিয়ে রাজ্যপাল বোস রাজভবনের স্থায়ী, অস্থায়ী কর্মীদের জানিয়েছেন, ‘এ ব্যাপারে পুলিশ কোনওরকম তথ্য চাইলে তা না দিতে’৷ তাঁর যুক্তি, ‘সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি পদক্ষেপ করা যায় না’৷ কিন্ত্ত ইতিমধ্যেই লালবাজারের তরফে এই ইসু্যতে তদন্ত করা হচ্ছে৷ যা নিয়ে অখুশি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস৷ সেই পরিপ্রেক্ষিতে এবার রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছেন তিনি৷ ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আট সদস্যের সিট গঠন করেছে লালবাজার৷ রাজভবনের ওসির কাছে সেদিনের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ চেয়েছে পুলিশ৷ সূত্রের খবর, মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে অনুসন্ধান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল৷ তিনি জানিয়েছেন, ‘সংবিধানের ৩৬১ ধারা অনুযায়ী রাজ্যপালের রক্ষাকবচ রয়েছে’৷ সেক্ষেত্রে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে যে অনুসন্ধান চালাচ্ছে তা বেআইনি বলে মনে করছেন তিনি৷ এদিকে পুলিশ যে সিসিটিভি ফুটেজ চেয়েছে তাও রাজভবন দেবে না বলে জানিয়েছে৷ যদিও সাধারণ মানুষকে সেই ফুটেজ দেখাতে উদ্যোগ নিয়েছেন রাজ্যপাল বোস৷ গত বুধবার রাজভবনের এক্স হ্যান্ডেলে একটি বিবৃতি পোস্ট করা হয়৷ তাতে বলা হয়ে, ‘সচ কা সামনা’ নামে এক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন রাজ্যপাল বোস৷ সেখানে ই-মেল আইডি ও ফোন নম্বর জানিয়েছেন তিনি৷ প্রথম ১০০ জন আবেদনকারীকে রাজভবনের ভিতরের সিসিটিভি ফুটেজ দেখানো হয় বৃহস্পতিবার৷ শুরু থেকেই অবশ্য শ্লীলতাহানির অভিযোগ উডি়য়ে দিয়ে রাজ্যপাল দাবি করেছেন, তাঁকে অপদস্থ করতে চক্রান্ত করা হচ্ছে৷ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন রাজ্যপাল৷ তাঁর দাবি, ”মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নোংরা রাজনীতি করছেন৷ আমি যত রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকতে চাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে ততই রাজনীতিতে টেনে আনছেন৷”
তবে বিবৃতি দিয়ে তিনি স্পষ্ট করে দেন, রাজ্যপাল বেশ কিছু বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী৷ যেখানে কোনও আদালতের কাছে তাঁরা জবাবদিহি করেন না৷ পদে থাকাকালীন কোনও রাজ্যের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ফৌজদারি প্রক্রিয়া চালানো যায় না৷
এবার রাজভবনের অস্থায়ী কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন করতে শুরু করল রাজভবন৷ রাজভবন সূুত্রে খবর, বর্তমানে রাজভবনে প্রায় ৪০ জন অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন৷ তাঁরা কোন বিভাগে কাজ করেন, সারাদিনের কতক্ষণ সময় তাঁরা রাজভবনে কাটান সেই সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ অস্থায়ী কর্মীদের কাজের পর্যালোচনা শেষ হতেই রিপোর্ট যাবে রাজ্যপালের কাছে৷ যদিও রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে তিনি কী পদক্ষেপ করবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়৷
অন্যদিকে অনুসন্ধানে নেমে রাজভবনে দু’বার তদন্ত করে গিয়েছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ দল৷ পুলিশ সূত্রে খবর, রাজভবনে কর্মরত ১০ জন কর্মীকে ডেকেও পাঠানো হয়েছিল৷ তবে তাঁদের মধ্য থেকে কলকাতা পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন মাত্র একজন৷ পাশাপাশি, সাংবিধানিক রক্ষাকবচকে ঢাল করে পুলিশি তদন্তকে বন্ধ করতে বলা হয়েছে রাজভবনের তরফ থেকে৷