এবার আরজি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের মোটিভ খুঁজে বার করতে তৎপর সিবিআই। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে বুধবার থেকে তদন্ত নেমেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্ত ভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। পাশাপাশি এদিন ধৃত সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয়ের রায়কে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে সিবিআই। এদিন সঞ্জয়ের মেডিক্যাল পরীক্ষা করিয়ে অভিযুক্তকে সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছে দেয় পুলিশ। একইসঙ্গে কলকাতা পুলিশের সিটের সদস্যরা সিজিওতে পৌঁছে যাবতীয় নথি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে। পাশাপাশি এদিন তাঁরা সিবিআই অফিসারদের কেস ডায়েরির যাবতীয় তথ্য বুঝিয়ে দেন।
সে ক্ষেত্রে একাধিক বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করতে চাইছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। বুধবার দিল্লি থেকে কলকাতায় উড়ে এসেছে সিবিআইয়ের একটি বিশেষ দল। পাশাপাশি এদিন সিজিও কমপ্লেক্সে স্পেশ্যাল ক্রাইম ব্রাঞ্চের বৈঠকও হয়। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্পেশ্যাল ক্রাইম ব্রাঞ্চের ডিআইজি।
সূত্রের খবর, এই বৈঠকে তদন্তকারী অফিসারদের খুনের মোটিভ খুঁজে বার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা থেকে শুরু করে, এই ঘটনার পিছনে কার কার গাফিলতি ছিল, যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। জাতীয় একটি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, আরজি কর কাণ্ডে মূলত একাধিক বিষয় উপরে জোর দিচ্ছেন তদন্তকারী অফিসাররা। সেক্ষেত্রে এই বিষয়ের উপর তদন্ত করেই, আসল তথ্য বের করতে চাইছেন গোয়েন্দারা।
সেগুলো কি কি?
এই বিষয়গুলোর মধ্যে হল–প্রথমত, ওই তরুণী চিকিৎসক একজনের দ্বারা নাকি একাধিকজনের দ্বারা ধর্ষিতা হয়েছেন? দুই, যখন ঘটনাটি ঘটেছে, অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় কি তখনও সিভিক ভলান্টিয়ার ছিল? তিন, এই ঘটনার পর তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়েছে কি না। চার, কেন খুনকে প্রথমে আত্মহত্যা বলা হয়েছিল? পাঁচ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি এই ঘটনায় জড়িত? ছয়, চিকিৎসকের খুনের পর সকালে কেন পুলিশকে খবর দেওয়া হল? সাত, নির্যাতিতাকে কি আগে থেকে টার্গেট করেছিল অভিযুক্ত? তাঁর উপর কি নজর রাখা হয়েছিল? আট, অভিযুক্ত কি আগেই হাসপাতালে ঢুকেছিল?
সূত্রের খবর, এই দিকগুলির ক্ষেত্রেও বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে ফিঙ্গার প্রিন্ট, ফুট প্রিন্ট যা মিলেছে, তার সঙ্গে অভিযুক্তের কতটা মিল রয়েছে, সেটাও এখন দেখা হচ্ছে। এমনকী, মৃতা ওই চিকিৎসকের মোবাইল ফোনের লোকেশনও ট্র্যাক করছেন সিবিআই আধিকারিকেরা। যাতে সঞ্জয় রায় ছাড়া আর কে কে ছিল, সেটা বোঝা যায়। একইসঙ্গে পুলিশের কাছে থাকা তথ্য এবং সঞ্জয়ের বয়ান খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে, এই ঘটনার পর এখন বড় চিকিৎসকদের এবং ফরেনসিক টিম কলকাতায় রয়েছে। ওদিকে কলকাতা পুলিশ যতটুকু তথ্য জোগাড় করতে পেরেছিল, সিবিআইকে ততটুকুই দিতে পেরেছে।
প্রসঙ্গত, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, রবিবারের মধ্যে যদি কলকাতা পুলিশ এই ঘটনার কিনারা করতে না-পারে, তাহলে মামলা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেবো। কিন্তু রবিবার গড়ানোর অনেক আগেই সিবিআইকে তদন্তভার দিয়ে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। ফলে, তদন্ত করার আর সুযোগই পায়নি কলকাতা পুলিশ।