নিজস্ব প্রতিনিধি— ‘বিজেপি বিরুদ্ধ রাজনৈতিক দল গুলিকে টার্গেট করা হচ্ছে এবং সেই দলের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে” এবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেফতারির প্রসঙ্গ নিয়ে সরব হলেন তৃণমূল নেত্রী শশী পাঁজা৷ শুক্রবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র শশী পাঁজা এবং অরূপ চক্রবর্তী৷ এই সাংবাদিক বৈঠক থেকেই কেন্দ্র তথা কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে কটাক্ষ শশী পাঁজা এবং অরূপের৷ ‘বাংলায় কথা বললে বাংলাদেশি, পাগড়ি পরলে খলিস্তানি এইভাবেই বিভাজনের রাজনীতি করছে’ বিজেপিকে নিশানা অরূপের৷
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের বিজেপিকে দেওয়া ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’-এর ২০০ ঘন্টা পাড়৷ তাও চ্যালেঞ্জ গ্রহণে নারাজ বিজেপি৷ অন্যদিকে বাংলায় বিজেপির দ্বিতীয় প্রার্থী তালিকা এখনও প্রকাশিত হয়নি৷ সব মিলিয়ে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি৷ বিজেপি কেন এগিয়ে আসছে না, সাংবাদিক বৈঠক থেকে বিজেপির দিকে সেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন শশী পাঁজা৷ পাশাপাশি তিনি তীব্র নিন্দা করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারির ঘটনাকে৷ দেশ জুড়ে নির্বাচনের ঘন্টা বেজে গিয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে এক নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার? কেন বারংবার বিজেপি বিরুদ্ধ রাজনৈতিক দল এবং তাদের রাজ্যকে টার্গেট করছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি? প্রশ্ন শশী পাঁজার৷ এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে কেবলমাত্র বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলিতেই ডিজিপি, ডিএম সহ একাধিক আধিকারিকদের বারংবার বদলি অথবা অপসারণ করা হচ্ছে৷ যেখানে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে অথবা কেন্দ্রের বিভিন্ন সংস্থাগুলিতে এমন কিছুই হচ্ছেনা৷ তাছাড়াও ইডির একাধিক তৃণমূল নেতৃত্বের বাড়ি তল্লাশি করা থেকে কংগ্রেসের ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ করা সবই প্রমান করে যে কিভাবে বিজেপি কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে হাতিয়ার করে বিরোধী দলগুলির কণ্ঠ রোধ করতে চাইছে৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতার প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হবে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রতিনিধি দল৷ তাতে থাকবেন তৃণমূলের দুই সদস্য ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং নাদিমুল হক৷ সে বিষয়ও জানিয়ে দেন শশী পাঁজা৷
সিএএ নিয়েও সরব হয়েছেন অরূপ, শশী৷ আসামের প্রসঙ্গ টেনে শশী পাঁজা বলেন, কিভাবে আসামের ২০ লক্ষ নাগরিকদের বাদ দেওয়া হলো৷ নাগরিক হওয়ার উপযুক্ত নথি থাকার পরও মানুষ চিন্তামগ্ন৷ আর এই উদ্বেগের সঞ্চার ঘটিয়েছে কেন্দ্র৷ বিজেপি নেতৃত্ব শান্তনু ঠাকুরকে কটাক্ষ করে বলেন, তিনি একজন সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে নিজের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ বৃহস্পতিবার কলকাতার নেতাজিনগরের বছর ৩৭ এর যুবক দেবাশীষ সেনগুপ্তের মৃতু্য প্রসঙ্গে অরূপ বলেন, ‘তার অপরাধ যে সে এই দেশের নাগরিক, তার কাছে জন্মশংসাপত্র নেই৷ ভোটার কার্ডে জন্মের সাল ভুল দেওয়া৷ এই আতঙ্ক যদি একটা মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে তাহলে কত দেবাশীষকে হারাতে হবে? কত মানুষের মৃতু্য মিছিলের পর এই দানবিক আইন থামবে?” প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দিকে৷
দেশ জুড়ে মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট চলাকালীন কেন বারংবার অবিজেপি দলের নেতৃত্বরা হেনস্থার শিকার হবেন কেন্দ্রীয় সংস্থা কর্তৃক সেই প্রশ্ন তোলেন শশী অরূপ৷ বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধে ইডি সিবিআই এর মামলা রয়েছে প্রায় ৯৬% কিন্ত্ত তার কনভিকশন রেট মাত্র ০.০১%৷ এ প্রসঙ্গে অরূপ চক্রবর্তী মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চহ্বাণের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, আদর্শ আবাসন কেলেঙ্কারিতে তার বিরুদ্ধে ইডি নোটিশ জারি করেছিল কিন্ত্ত তিনি রাজ্যসভার সদস্য হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলোনা৷ তাহলে এমসিসি চলাকালীন কেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার হতে হবে? এর কারণও ব্যাখ্যা করে অরূপ বলেছেন, ‘বিজেপি কোনো রাজনৈতিক শরিক পাচ্ছে না, এদের রাজনৈতিক শরিক বর্তমানে ইডি, সিবিআই, আয়কর বিভাগ, কোথাও কোথাও নির্বাচন কমিশন৷ এটিই অমিত শাহের ক্রনোলজি৷ প্রথমে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসবে, সেটি গ্রহণ না করলেই জেল যেতে হবে৷’
এদিনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থানও স্পষ্ট করেন শশী পাঁজা৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইন্ডিয়া জোটে তৃণমূল কংগ্রেস আছে এমনকি জাতীয় কংগ্রেসের সাথেও সুসম্পর্ক রয়েছে তৃণমূলের৷ কেবল বাংলায় ‘অধীর রঞ্জন কংগ্রেস’ চলে৷ তিনি বরাবরই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন বিভিন্ন ভাবে৷ ইন্ডিয়া জোটের সম্পর্ক প্রভাবিত হলে তার কারণ হবেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী৷ এমনকি শশী পাঁজা আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন, অধীর রঞ্জন চৌধুরীর কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৃণমূল থেকে ইউসুফ পাঠান, সুতরাং অধীর রঞ্জন চৌধুরীর কেন্দ্রে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত৷
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মুখ্যমন্ত্রীকে কটূক্তি করার প্রসঙ্গে তাঁকে কটাক্ষ করে শশী পাঁজা বলেন, ‘নিজের চরকায় তেল দিন৷ আর একটু বিদ্বেষের কথা বললেই ডিসকোয়ালিফিকেশিন চাইবো৷’ সুর মিলিয়েছেন অরূপ চক্রবর্তীও৷ এ প্রসঙ্গেই বিজেপিকে ‘নারী বিদ্বেষী দল’ বলে উল্লেখ অরূপের৷ তাঁর দাবি, ‘আগামীদিনে বিজেপিকে ওপেন টেন্ডার ডাকতে হবে প্রার্থী হওয়ার জন্য৷’ পাশাপাশি মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে সিবিআই এর এফআইআর দায়ের করার প্রসঙ্গে অরূপ বলেন, মহুয়া মৈত্রের মতো প্রতিবাদী কণ্ঠকে রোধ করার জন্য গায়ের জোরে তাঁকে সাংসদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল৷ এবারও একই প্রয়াস করবে বিজেপি৷ গেরুয়া শিবিরের এই কার্যাবলী প্রমান করে, কৃষ্ণনগরে তারা নির্বাচনের আগেই হেরে গেছে৷