অটোয়া, ৫ মে: কানাডায় স্বাধীন ও শক্তিশালী বিচার ব্যবস্থা এবং সম্পূর্ণ আইনের শাসনে চলে। গত বছর জুনে খলিস্তানি আতঙ্কবাদী হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যা মামলায় তিন ভারতীয় অভিযুক্তের গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে একথা বলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এদিন নির্জ্জর হত্যায় তিন ভারতীয়র গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে গতকাল শনিবার প্রথম প্রতিক্রিয়ায় ট্রুডো বলেন,’এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, কানাডা মূলত আইনের শাসনের দ্বারা পরিচালিত দেশ। যেখানে স্বাধীন এবং শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা রয়েছে। দেশের সমস্ত নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য এটা একটা মৌলিক প্রতিশ্রুতি।’ এদিন সিবিএস-কে উদ্ধৃত করে ট্রুডো একথা বলেন। তিনি আরও বলেন,’আরসিএমপি (রয়াল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ) বলেছে যে, স্বাভাবিক নিয়মেই তদন্ত চলছে। এবং পৃথক ও স্বতন্ত্রভাবেই এই তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে। এমন নয় যে, গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের জন্যই শুধু এই তদন্ত করা হচ্ছে।’
ট্রুডোর এই মন্তব্যের কয়েক ঘন্টা পরেই রয়াল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ(আরসিএমপি) জানিয়েছে, নিজ্জর হত্যা কাণ্ডে যোগ থাকার জন্য তদন্তকারী সংস্থা (আইএইচআইটি) এবং ফেডারেল পুলিসিং প্রোগ্রাম প্যাসিফিক রিজিয়ন তিন ভারতীয়কে গ্রেপ্তার করেছে। আরসিএমপি আরও জানিয়েছে,’তবে তদন্ত এখানেই থেমে থাকছে না। পৃথক এবং স্বতন্ত্রভাবে আরও বিস্তারিত তদন্ত চলছে।’
কানাডার সংবাদ সংস্থা দাবি করেছে, ধৃত তিন ব্যক্তির নাম কমলপ্রীত সিং, করণপ্রীত সিং এবং করণ ব্রার। নিজ্জরকে যেদিন হত্যা করা হয়, সেদিন ধৃত তিন অভিযুক্ত ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারে পার্কিং লটে শ্যুটার, ড্রাইভার এবং স্পটার হিসেবে পৃথক পৃথক ভূমিকা পালন করেছে। নিজ্জর মামলায় পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ফার্স্ট-ডিগ্রি হত্যা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছে। যদিও আদালতের পক্ষ থেকে অভিযোগগুলো এখনও পরীক্ষা করা হয়নি।
এদিকে এই গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন যে, ‘সন্দেহভাজন এই ভারতীয়রা নিঃসন্দেহে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত।’ কিন্তু নিউ দিল্লি এবিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য পুলিশের তদন্তের অপেক্ষায় আছে।
রয়টার্স সূত্রে জানা গিয়েছে, জয়শঙ্কর বলেছেন,’পুলিশ কী বলে আমরা সেই অপেক্ষায় আছি। কিন্তু পাশাপাশি বলব, আপনারা জানেন যে এটা আমাদের কাছে খুবই উদ্বেগের বিষয়, তারা ভারত থেকে বিশেষত পাঞ্জাব থেকে কানাডায় গিয়ে সংগঠিত অপরাধ পরিচালনা করছে।’
প্রসঙ্গত গত বছর কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিজ্জর হত্যায় ভারত সরকারের হাত থাকার অভিযোগের পর ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে চিড় ধরে। এক্ষেত্রে খালিস্তানি সন্ত্রাসীর হত্যার বিষয়টি আলোচ্য বস্তু হয়ে ওঠে। কারণ গত বছর ট্রুডো দাবি করেন, নিজ্জর হত্যার পিছনে ভারত সরকারের এজেন্টদের হাত রয়েছে। অটোয়ার সংসদে এবিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করা হয়।
নয়াদিল্লি সেই অভিযোগগুলিকে প্রত্যাখ্যান করে। এবং এই অভিযোগকে “অযৌক্তিক” এবং “রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে অভিহিত করে। এবিষয়ে ভারত সরকারের বিদেশ মন্ত্রক উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দাবি করলেও কানাডা সরকার তা দেখাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়।