নিজস্ব প্রতিনিধি— পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভূপতিনগরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা শুধু রাজ্য রাজনীতিতে নয় সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী সভায় উঠে এসেছে এই ভূপতিনগর৷ ইতিমধ্যেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস৷
ঠিক এহেন পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাসে সংশ্লিষ্ট থানার ওসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ বিচারপতি! ‘আদালতের রক্ষা কবচের ফলে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করতে পারে অভিযুক্তরা৷’ ভূপতিনগরকাণ্ডে পুলিশের এই রিপোর্টে ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট৷ সোমবার ভূপতিনগর মামলার শুনানি চলে বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চে৷ ভূপতিনগর থানা যে রিপোর্ট এদিন আদালতে জমা করে, তা দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি৷
এদিন এই মামলার শুনানি পর্বে ক্ষুব্ধ বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “ওসিকে বলতে হবে আদালতের রক্ষাকবচের ফলে কবে কোথায় কোন নির্বাচন বানচাল হয়েছে?” আদালতের নির্দেশ, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই রিপোর্টের ব্যাখ্যা দিতে হবে ভূপতিনগর থানার ওসিকে৷ এই রিপোর্টে আদালতের অবমাননা হয়েছে বলে মনে করছেন বিচারপতি৷ বিচারপতি আরও প্রশ্ন করেন, “এই ধরনের রিপোর্ট লেখার সাহস পেলেন কী করে ওসি?”
আদালত সুত্রে প্রকাশ, তপন মিদ্দা নামে ভূপতিনগরের স্থানীয় এক বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে গত তিন বছরে ২৬টি ফৌজদারি মামলা রুজু করেছে পুলিশ৷ ১৫টি চার্জশিটও জমা করেছে পুলিশ৷ কিন্ত্ত মামলাকারীর অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর-ই নেই৷ একটি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়৷ তারপর একের পর এক মামলায় তাঁকে ‘সোন অ্যারেস্ট’ দেখানো হয়৷ তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন৷
আদালত এবার পুলিশের কাছে জানতে চায়, আদতে তপন মিদ্দার বিরুদ্ধে কতগুলো মামলা রয়েছে? কতগুলো মামলায় অভিযোগ রয়েছে, তা নিয়ে রিপোর্ট তলব করা হয়৷ ভূপতিনগর থানার তরফে সোমবার রিপোর্ট জমা করা হয়৷ সেখানে পুলিশের তরফে বলা হয়, আদালতের নির্দেশে রক্ষাকবচ দেওয়া হলে, নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করতে পারে৷ আর সেই রিপোর্ট দেখেই ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি৷ ভূপতিনগরের বিজেপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলায় পুলিশের রিপোর্টে ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট৷ অভিযুক্তরা হাইকোর্টের রক্ষাকবচ পেলে লোকসভা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে, পুলিশের এই রিপোর্টের পরিপেক্ষিতে সোমবার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত৷ রিপোর্টের ব্যাখ্যা তলব করে ভূপতিনগর থানার ওসিকে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট৷ গত ২০২২ সালে ভূপতিনগরে তৃণমূলের বুথ সভাপতি রাজকুমার মান্নার বাডি়তে বিস্ফোরণের ঘটনায় ২০ জন বিজেপি নেতার নামে মামলা করেছিল পুলিশ৷ ভুয়ো মামলায় তাদের ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই বিজেপি নেতারা৷