• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করে বিজেপি জানাল, কথা ও কাজের মধ্যে কোনও ফারাক নেই

দিল্লি, ১৪ এপ্রিল– অবশেষে কাকতালীয়ভাবে আজ রবিবার বাংলা নববর্ষের দিন নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করল ভারতীয় জনতা পার্টি৷ তবে বাংলা ছাড়া ওড়িশা, অসম ও কেরলেও নববর্ষ উৎসব রয়েছে৷ সেই সব দিক বিবেচনা করেই আজ, রবিবার দিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তর থেকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহার প্রকাশ করল গেরুয়া শিবির৷ এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক মহলের৷ এই ইস্তেহারের নামকরণ করা

দিল্লি, ১৪ এপ্রিল– অবশেষে কাকতালীয়ভাবে আজ রবিবার বাংলা নববর্ষের দিন নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করল ভারতীয় জনতা পার্টি৷ তবে বাংলা ছাড়া ওড়িশা, অসম ও কেরলেও নববর্ষ উৎসব রয়েছে৷ সেই সব দিক বিবেচনা করেই আজ, রবিবার দিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তর থেকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহার প্রকাশ করল গেরুয়া শিবির৷ এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক মহলের৷ এই ইস্তেহারের নামকরণ করা হয়েছে ‘সংকল্পপত্র’৷ এই ইস্তেহার কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন দলের বর্ষীয়ান নেতা ও কেন্দ্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং৷ আজ বিজেপির ইস্তেহার প্রকাশের সময় রাজনাথ বলেন, “আমরা সমস্ত সংকল্প উপলব্ধি করেছি৷ আমরা যা বলি এবং যা করি তার মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই..৷’’ তিনি ৩৭০ ধারা বাতিল এবং রাম মন্দির উদ্বোধনকে সেই সংকল্পের কয়েকটি উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরেন৷

এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বিজেপি প্রধান জেপি নাড্ডা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং অন্যান্য নেতাদের উপস্থিতিতে ইস্তেহারটি প্রকাশিত হয়৷ বিজেপি-র সর্ব ভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা বলেন, “আজ ভারতরত্ন ডঃ বি আর আম্বেদকরের জন্মবার্ষিকী৷ আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই৷ আমরা সবাই জানি যে, তিনি সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেছিলেন৷ তাঁর পথ অনুসরণ করে বিজেপি সর্বদা সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেছে৷”

এই ইস্তেহারটি তৈরি করার জন্য, বিজেপি ১৫ লক্ষেরও বেশি সুপারিশ সংগ্রহ করেছে৷ যার মধ্যে চার লক্ষ সুপারিশ NaMo নামো অ্যাপের মাধ্যমে এসেছে এবং ১১ লক্ষ ভিডিওর মাধ্যমে সেই সুপারিশ জমা দেওয়া হয়েছে৷ এই ইস্তেহারে প্রকাশের পর মোদী একটি দীর্ঘ ভাষণ দেন৷ সেই ভাষণে ইস্তেহারের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করা হয়৷ এদিন মোদির ভাষণে উঠে আসে দুর্নীতি দূর করার কথাও৷ তিনি বলেন, ‘আগামীদিনে দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷ গরিবদের টাকা যারা লুট করেছেন তাঁদের জেলে পাঠানো হবে৷’ এই বিষয়ে আরও কঠোর আইন আনার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি৷

লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই চার শ্রেণীর উপর কাজ করার কথা বলে আসছিলেন৷ এবার সংকল্পপত্রে সেই বিষয়ে জোর দিয়েছে বিজেপি৷ সেজন্য ইস্তেহারে জোর দেওয়া হয়েছে সমাজের চার শ্রেণীর উপর৷ মহিলা, যুব, কৃষক ও গরিব শ্রেণীর ওপর৷ এতদিন মোদি অনুদানের রাজনীতি করেন না বললেও এবারের ইস্তেহারে একাধিক অনুদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷ যদিও একাধিক সভামঞ্চ থেকে বারবার অনুদান বিরোধিতার দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ কিন্ত্ত এবারের ইস্তেহারের ছত্রে ছত্রে সেই অনুদানই রয়েছে৷

GYAN এই শব্দবন্ধের ব্যবহার করেন প্রধানমন্ত্রী৷ যার মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, G মানে গরিব, Y মানে যুব, A মানে অন্নদাতা অর্থাৎ কৃষক ও N মানে নারী৷ ইস্তেহার প্রকাশের পর এদিন প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘নারী শক্তি, যুব শক্তি, কৃষক শক্তি এবং গরিবদের উন্নয়নই মূল লক্ষ্য বিজেপির৷ যাঁদের কেউ গুরুত্ব দেয় না৷ মোদি তাঁদের পুজো করে৷ এটাই বিজেপির সংকল্পপত্রের আত্মা৷ যা বিকশিত ভারতের সংকল্প পত্র৷’

ইস্তেহারে গরিবদের কথা মাথায় রেখে একগুচ্ছ প্রকল্প আনা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে৷ যার মধ্যে ‘প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর ফ্রি ইলেকট্রিসিটি স্কিম’ রয়েছে৷ যার মাধ্যমে বিনামূল্যে বিদু্যৎ পরিষেবা পাওয়ার পাশাপাশি বিদু্যৎ বিক্রির সুযোগও থাকবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ পাশাপাশি মোদী ঘোষণা করেন, আগামী পাঁচ বছর দেশের ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হবে৷ প্রত্যেক গরিবের থালায় পুষ্টিযুক্ত খাবার দেওয়াই বিজেপির লক্ষ্য৷ সেই সঙ্গে বিজেপির প্রতিশ্রুতিতে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে মহিলা ও কৃষকরা৷ কৃষকদের ন্যায্য সহায়ক মূল্য (এমএসপি)-র আইনি নিরাপত্তা ও তাঁদের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে৷

‘আয়ুষ্মান ভারত’ নিয়েও বেশ কয়েকটি ঘোষণা রয়েছে৷ তিনি সত্তরোর্দ্ধ সকল নাগরিককে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়েছেন৷ পাশাপাশি সার্ভাইকাল ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জোর প্রচার, তিন কোটি লাখপতি দিদি, গ্রামে গ্রামে মহিলা ড্রোন পাইলট, কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার, মুদ্রা যোজনা প্রকল্পে ঋণ নেওয়ার সর্বোচ্চ সীমা ১০ লক্ষ থেকে বাডি়য়ে ২০ লক্ষ টাকা করার ঘোষণা করা হয়েছে এই ইস্তেহারে৷ একইসঙ্গে রূপান্তরকামীদের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় আনা ও দিব্যাঙ্গদের জন্য বিশেষ বাড়ি বানানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে৷

এছাড়া ইস্তেহারে দেশের পরিকাঠামোতে উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন চাকরির সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ ৫জি-র পর ৬জি নেটওয়ার্ক আনার ব্যবস্থা করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে৷ বুলেট ট্রেন সম্পর্কেও রয়েছে বিশেষ ঘোষণা৷ মোদি ভারতের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণেও বুলেট ট্রেন চালানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে দেশে আরও তিন কোটি পাকা বাডি় তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷

এইসব ঘোষণার সঙ্গে ইস্তেহারে ফের এক দেশ এক ভোটের পক্ষে আওয়াজ তুলেছেন মোদি৷ তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘এক দেশ এক নির্বাচনের সংকল্প নিয়ে এগোচ্ছে বিজেপি৷ দেশে লাগু হবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি৷’ ভাষণে তিনি বলেন, ‘বিজেপি-ই ৩৭০ ধারা বিলোপ ও সিএএ লাগু করেছে৷’ একই সঙ্গে আদিবাসী ও দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দাদের জন্য দুটি বিশেষ প্রকল্পের কথা ইস্তেহারে উল্লেখ করা হয়েছে৷ সেই দুটি হল তামিল ভাষাকে গোটা দেশে ব্যবহারের চেষ্টা ও ২০২৫ সালকে ‘জনজাতি গৌরব বর্ষ’ হিসাবে পালন করার পরিকল্পনা৷