আজ রাজ্যের ৪ বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন, মধুপর্ণা কি হতে পারবেন বিধানসভার সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক ?

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আজ পশ্চিমঙ্গের ৪টি বিধানসভা আসনে রয়েছে উপনির্বাচন৷ সোমবারই শেষ হয়েছে প্রচারপর্ব৷ এবার শুধু মাঠে নামার পালা৷ কলকাতার মানিকতলা, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা, নদিয়ার রানাঘাট দক্ষিণ ও উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ আসনের প্রার্থীরা নিজেদের নির্বাচনী ক্ষেত্রে ঘুঁটি সাজিয়ে নিয়েছেন৷ শেষ হাসি কে হাসে সেটাই এখন দেখার৷

অনেকদিন ধরেই আটকে ছিল মানিকতলা আসনে উপনির্বাচন৷ বিধায়ক সাধন পাণ্ডে মারা যাওয়ার পর থেকেই বিধায়ক-শূন্য ছিল এই আসন৷ পরে উপনির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর সাধন-পত্নী সুপ্তি পাণ্ডেকে প্রার্থী নির্বাচন করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জানা যায়, সুপ্তি ও মমতা এককালে সহপাঠী ছিলেন৷ এই আসনে কল্যাণ চৌবেকে প্রার্থী করেছে বিজেপি৷ কল্যাণকে নিয়ে প্রথম থেকেই আত্মবিশ্বাসী পদ্ম শিবির৷ কিন্ত্ত এই কেন্দ্রে সাধন পাণ্ডের জনপ্রিয়তা এখনও বিরাজমান৷ তাই এবার বৌদি সুপ্তির পাল্লা অনেকটাই ভারী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ৷ প্রচারেও অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল৷ বিতর্ক এড়াতে সাধন পাণ্ডের মেয়ে শ্রেয়াকে মায়ের হয়ে প্রচারে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল দলের তরফে৷ সেই মতো মায়ের প্রচারে শ্রেয়াকে দেখা যায়নি৷ কিন্ত্ত তৃণমূলের হয়ে প্রচারে একাধিক নেতা মন্ত্রী থেকে শুরু করে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ নুসরত জাহানকেও৷ অন্যদিকে প্রচারে খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে বিজেপি৷ মানিকতলার তৃণমূল প্রার্থী সুপ্তি পাণ্ডে বলেছেন, ‘বিরোধী প্রার্থীকে আমি দুর্বল ভাবি না৷ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সঙ্গে আছেন৷ মানুষের ভালোবাসাও আছে৷’

উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলেই মানিকতলার পরে সবথেকে বেশি আলোচনা হচ্ছে বাগদা নিয়ে৷ এই কেন্দ্রে তৃণমূল জিতলে ২৫ বছরের মধুপর্ণা ঠাকুর হবেন বিধানসভার সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক৷ তিনি তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের মেয়ে৷ ঠাকুরবাড়ির মেয়েকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল৷ মতুয়া অধু্যসিত ও তফসিলি সংরক্ষিত এই আসন দখল করতে মরিয়া জোড়াফুল শিবির৷ ২০১১ ও ২০১৬ সালে পর পর তৃণমূলের জয়ের পর ২০২১ সালে বাগদা আসন দখল করে বিজেপি৷ বিধায়ক নির্বাচিত হন বিশ্বজিৎ দাস৷ ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন বিশ্বজিৎ৷ এরপর তাঁকে বনগাঁ লোকসভা আসনে টিকিট দেয় তৃণমূল কংগ্রেস৷ কিন্ত্ত তিনি এই আসনে লড়াই করে জিততে পারেননি৷ বিধানসভা উপনির্বাচনে বিশ্বজিৎকেই তৃণমূলের প্রার্থী করা হবে বলে মনে করেছিল রাজনৈতিক মহলের একাংশ৷ কিন্ত্ত তাঁর বদলে প্রার্থী করা হল রাজনীতিতে একেবারে নতুন মুখ মধুপর্ণাকে৷


তরুণ প্রজন্মের ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূল প্রার্থী এগিয়ে থাকলেও অনেকগুলি ফ্যাক্টর এই ভোটে কাজ করবে বলে জানা গেছে৷ চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সায়নী ঘোষ, ফিরহাদ হাকিম, পার্থ ভৌমিক, নারায়ণ গোস্বামী, সহ অনেকেই মধুপর্ণার হয়ে প্রচার করছেন৷ অপরদিকে বিজেপি প্রার্থী বিনয় বিশ্বাসকে নিয়ে গোষ্ঠী কোন্দলের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে৷ স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের কথা না মানার অভিযোগ তুলে দলের আর এক গোষ্ঠী সত্যজিৎ মজুমদারকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন৷ তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এই গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে বিজেপি অনেকটা ব্যাকফুটে চলে গেছে৷ যদিও গোষ্ঠী কোন্দলের অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি৷ নিজেকে ভূমিপূত্র হিসেবে দাবি করে ময়দানে নেমেছে কংগ্রেস প্রার্থী পেশায় শিক্ষক অশোক হালদারও৷ এই আসনে বাম-কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতা না হওয়ায় গৌরাদিত্য বিশ্বাসকে প্রার্থী করেছে ফরওয়ার্ড ব্লক৷ চতুর্মুখী এই লড়াইতে জয়ের হাসি কে হাসে সেদিকেই চোখ রয়েছে রাজ্যবাসীর৷

ভোটের অঙ্ক কষলে রানাঘাট দক্ষিণ আসনে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৭ হাজার ভোটে জিতেছিল৷ ২০২৪ -এর লোকসভা নির্বাচনে এই বিধানসভাতে তৃণমূল প্রায় ৩৬ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল৷ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে বিজেপির টিকিটে জিতেছিলেন মুকুটমণি অধিকারী৷ পরে মুকুটমণি তৃণমূলে যোগদান করেন৷ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল টিকিটও দেয় তাঁকে৷ কিন্ত্ত তৃণমূলের টিকিটে তিনি জিততে পারেননি৷ এবার বিধানসভা উপনির্বাচনে ফের তাঁর উপরই আস্থা রাখল তৃণমূল৷ প্রচারে ঝড় তুলেছেন এই তৃণমূল প্রার্থী৷ এবার জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা- এটাই মনে করছেন স্থানীয় নেতৃত্ব৷ অপরদিকে রানাঘাট দক্ষিণেও মতুয়া ভোট একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷ বিজেপির শিবিরে থাকা একচেটিয়া ভোট কীভাবে তৃণমূলে ফিরবে সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ৷ অপরদিকে, বিজেপি প্রার্থী মনোজকুমার বিশ্বাস আমজনতার কাছে ততটা পরিচিত নয়৷ তাই এক্ষেত্রে খানিকটা ব্যাকফুটে বিজেপি৷

উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে এবার মুখোমুখি হতে চলেছে এককালের সহযোদ্ধা ২ রাজনীতিবিদ৷ একজন তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী অন্যজন, বিজেপি প্রার্থী মানস ঘোষ৷ এই দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আবার মাঠে নেমেছেন কংগ্রেসের মোহিত সেনগুপ্ত৷ মোহিতের বিরুদ্ধে দল বদলের কোনও অভিযোগ না থাকায় রাজনৈতিক আদর্শের ইসু্য তুলে ধরে প্রচারে নেমেছিলেন তিনি৷ উল্লেখ্য, ২০২১ সালে রায়গঞ্জ বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে হারিয়ে জয়ী হন বিজেপির কৃষ্ণ কল্যাণী৷ যদিও বিধায়ক হওয়ার মাস তিনেকের মধ্যেই তৃণমূলে যোগদান করেন কৃষ্ণ৷ লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী করেও তাঁকে সংসদে পাঠাতে পারেনি জোড়াফুল শিবির৷ অপরদিকে, বিজেপি প্রার্থী মানস ঘোষ ছিলেন জোড়াফুল শিবিরে৷ ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তিনি বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন৷

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, উপনির্বাচনে সাধারণত শাসকদলের পাল্লাই ভারী থাকে৷ কিন্ত্ত ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের বিধানসভাভিত্তিক ফলাফলের দিকে নজর রাখলে দেখা যাবে, এই চার বিধানসভা আসনের মধ্যে ৩টি আসনেই বিপুল মার্জিনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি৷ এই আসনগুলি হল, বাগদা, রানাঘাট দক্ষিণ ও রায়গঞ্জ৷ কেবলমাত্র মানিকতলা আসনে সামান্য এগিয়ে আছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ তাই এবার উপনির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে রাজ্যবাসী৷ জোড়াফুল নাকি পদ্মফুল ? কতটা ভোট কাটতে সক্ষম হবে বাম ও কংগ্রেস? নাকি বাজিমাতের সম্ভাবনা রয়েছে তাঁদের ? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে ১৩ জুলাই পর্যন্ত৷