নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: লোকসভা ভোটের পর তৃতীয় মোদি সরকার ক্ষমতায় এসেই ২০২৪ সালের ২৩ জুলাই প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করল। এই বাজেট নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি একের পর এক বিরুদ্ধ মন্তব্য করেছে। কংগ্রেস নেতা শশী থারুর থেকে শুরু করে তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কেউই কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। শশী থারুর এই বাজেটকে নিম্নগতির বাজেট বলে মন্তব্য করেছেন। একইভাবে তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই বাজেটকে সরকার বাঁচানোর বাজেট বলে অভিহিত করেছেন। বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের তৃতীয় বৃহত্তম দল তৃণমূলের জাতীয় নেতা অভিষেকের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।
এদিন অভিষেক এই বাজেটের সমালোচনা করে তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন, ‘জিরো ওয়ারেন্টি যুক্ত ব্যর্থ বাজেট এটি। যেটি পেশ করেছেন ব্যর্থ সরকারের, ব্যর্থ অর্থমন্ত্রী। মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলির দিকে নজর না দিয়ে শুধুমাত্র শরিকদের ঘুষ দেওয়ার বাজেট এটি। যাতে সরকার আরও কিছুদিন টিকে থাকে।’
প্রসঙ্গত ২০১৪ ও ২০১৯ সালে পরপর দুইবার দেশবাসী মোদীর ওপর ভরসা রেখে বিপুল জনসমর্থন দিয়েছে। দুই বারেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি। এনডিএ-র শরিকরা সরকারে থাকলেও তাঁদের ওপর সেভাবে নির্ভর করতে হয়নি নরেন্দ্র মোদিকে। কিন্তু মোদি সরকারের এই দশ বছরের শাসনকালে দেশে বেড়েছে বেকার সমস্যা, মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মতো ঘটনা। আর এই সময়েই কালো টাকা উদ্ধার ও সন্ত্রাস দমনের নামে নোট বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যার ফলে ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছেন। নোট বাতিলের ফলে বাজারে তার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে। কর্মী ছাঁটাই থেকে শুরু করে বেতন সংকোচন, একাধিক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। মানুষের হাতে টাকার জোগান কমেছে। সমস্যায় জেরবার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। করোনা মহামারী ও বেকার সমস্যা সেই সঙ্কটে আরও ঘৃতাহুতি দিয়েছে। ফলস্বরূপ ২০২৪ লোকসভা ভোটে মন্দির ও হিন্দুত্বের রাজনীতি দিয়েও মানুষের সেই ক্ষোভ প্রশমন করা যায়নি। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে বিজেপি। অভিষেক ও বিরোধী দলের নেতাদের প্রতিক্রিয়ায় সেই সিদ্ধান্তের প্রতিফলন ঘটেছে।
উল্লেখ্য, ৪ জুন লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় গতবারের দুর্বল বিজেপি। সেজন্য নীতিশ ও চন্দ্রবাবু নাইডুকে নিয়ে গঠিত তৃতীয় মোদি সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল দেশের রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে ইন্ডিয়া জোটের শরিকরা। এইসব বিরোধী দলের নেতা নেত্রী ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছিলেন, শরিকদের বিশেষত চন্দ্রবাবু ও দলবদলু নীতীশের মন জুগিয়ে চলা মোদি সরকারের পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার। সরকার গঠনের সময় নীতিশ ও চন্দ্রবাবুর অফুরন্ত দাবি দাওয়ার ফলে সেই সময়েই নানা সংশয় দেখা দিয়েছিল।
যদিও সরকার গঠনের পরেও সেই সংশয় উবে যায়নি। তাঁদের দাবি পূরণ করতে না পারলেই সরকার ফেলে দেবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া বিজেপির নেতৃত্বাধীন তৃতীয় মোদি সরকার। যা আগে থেকেই বিরোধীরা দাবি করে আসছে। আর সেই শরিকদের মন জুগিয়ে চলাটা তৃতীয় মোদী সরকারের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে মঙ্গলবারের বাজেটে চন্দ্রবাবু ও নীতীশের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ ও বিহারের জন্য ঢালাও প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের পেশ করা বাজেটে।
রবিবার ২১ জুলাইয়ের মঞ্চেই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই আশঙ্কা ভাসিয়ে রেখেছেন রাজনৈতিক মহলে। তিনি বলেছেন, এই সরকার বেশিদিন থাকবে না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মতো একই দাবি করেছেন সমাজবাদী পার্টি সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব। তিনি বলেন, কেন্দ্রে এখন অতিথি সরকার রয়েছে। এই সরকার দ্রুত চলে যাবে।