পেনসিলভেনিয়া, ১৪ জুলাই: আমেরিকায় ভয়াবহ ঘটনা। শত্রুদের বন্দুকের নিশানায় প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার সন্ধ্যায় পেনসিলভেনিয়ায় একটি প্রকাশ্য সভায় তাঁকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে এক আততায়ী। কিন্তু অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি। তাঁর ডান কানের ওপর দিয়ে গুলি ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে গুলিবিদ্ধ কানের থেকে রক্ত বেয়ে মুখের ওপর গড়িয়ে পড়ে। প্রথমে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে বসে পড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা রক্ষীরা ওই বন্দুকবাজকে গুলি করে নিকেশ করে।
জানা গিয়েছে, যেখানে এই নির্বাচনী প্রচার সভাটি চলছিল, সেখানকার একটি বাড়ির ছাদ থেকে বছর কুড়ির ওই যুবক এই গুলি চালায়। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীরা গুলি করে তাকে নিকেশ করে। মৃত ওই বন্দুকবাজের নাম থমাস ম্যাথিউ ক্রুকস। মঞ্চ থেকে মাত্র ১২০ মিটার দূরের ওই বাড়ির ছাদ থেকেই ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলি করে সে।
Gunshots ring out at #Trump rally, secret service shield, evacuate Former US President#gunshots #DonaldTrump #ShootingIncident #shooters pic.twitter.com/HA511pk9Hn
— The Statesman (@TheStatesmanLtd) July 14, 2024
এদিকে দ্রুত সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা তাঁকে ঘিরে দাঁড়ান। যাতে ট্রাম্পের গায়ে ফের গুলি লাগতে না পারে। এরপর প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। ঘটনায় দর্শকদের একজন সদস্যও মারা গিয়েছেন। আরও একজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে এদিন তিনি পেনসিলভেনিয়ার নির্বাচনী প্রচারে যোগ দেন। সেসময় গুলির আওয়াজ পেয়ে প্রথমে তিনি বক্তৃতা থামিয়ে বিষয়টি অনুধাবন করার চেষ্টা করেন। দ্বিতীয় গুলিটি তাঁর ডান পাশের কান ছুঁয়ে যেতেই সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে বসে পড়েন মঞ্চে থাকা রিপাবলিকান পার্টির অন্যান্য সদস্যরাও। ঘটনার পর সভাস্থলে সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্কে রীতিমতো হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে চলে আসেন সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা। এভাবে তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ফের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করা হয়। এরপর নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেসময় ট্রাম্প হাতের মুষ্টি শূণ্যে তুলে বুঝিয়ে দেন, তিনি এখনও অক্ষত আছেন।
আচমকা গুলি চালানোর ঘটনায় সভাস্থলে আতঙ্কে শুরু হয়ে যায় হুড়োহুড়ি। ট্রাম্পের মুখপাত্র একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আছেন। স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে তাঁর চিকিৎসা করা হচ্ছে। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন। ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও তাঁকে উদ্ধারের জন্য পুলিশ প্রশাসনকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন ট্রাম্প। সিক্রেট সার্ভিসের যোগাযোগ প্রধান অ্যান্টনি গুগলিয়েলমি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ট্রাম্পের কমিউনিকেশন ডিরেক্টর স্টিভেন চেউং এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প “ভালো আছেন এবং একটি স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে তাঁর চিকিৎসা চলছে।”
এদিকে এই ঘটনায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ট্রাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি চিকিৎসাধীন থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনি বিষয়টি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন ও ধিক্কার জানান। বাইডেন বলেন, “আমি শীঘ্রই তাঁর সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনা করছি। আমেরিকাতে এই ধরনের সহিংসতার কোনও স্থান নেই। এটা খুবই অসুস্থ কার্যকলাপ। সবাইকে একসঙ্গে এর মোকাবিলা করতে হবে। সবথেকে বড় কথা হল, কোনও সমস্যা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করা উচিত ছিল।” যদিও এই ঘটনাটি একটি হত্যার প্রচেষ্টা ছিল কিনা, সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যান বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, এবিষয়ে তাঁর একটি মত রয়েছে। তবে তিনি সত্যিটা জানার জন্য অপেক্ষা করবেন। তিনি বলেন, “সিক্রেট সার্ভিস প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছে এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি নিরাপদ আছেন।”
ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা লেখেন, “আমাদের গণতন্ত্রে রাজনৈতিক হিংসার কোনও স্থান নেই। আমরা জানি না ঠিক কী হয়েছে, তবে স্বস্তির বিষয় হল, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গুরুতর আহত হননি।” ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন।