মধুছন্দা চক্রবর্তী: কামারহাটি থেকে সিঁথি মোড় পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার পদাযাত্রার পরে ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার মোডে় জনসভা করে বৃহস্পতিবার শহর কলকাতায় এবারের প্রথম নির্বাচনী প্রচারের সূচনা করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিনের পদযাত্রায় দমদম লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী সৌগত রায় এবং বরানগর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে পদযাত্রা করে জনসংযোগের মাধ্যমে ভোটপ্রার্থনা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ বিকেল পাঁচটা নাগাদ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার মোডে় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে ভোট প্রার্থনা করে বললেন, সুদীপদা এরপর আর ভোটে দাঁড়াবেন কিনা জানি না, এবার আপনারা অন্তত ওঁকে ভোট দিয়ে জিতিয়ে আনুন৷ উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী তৃণমূল থেকে দলবদল করে বিজেপিতে যাওয়া তাপস রায়কে নাম না করে বিঁধলেন তৃণমবল সুপ্রিমো৷ বললেন, সিবিআই-এর ভয়ে তিনি পালিয়ে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন৷ বছরখানেক আগে থেকে তিনি বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন এমন অভিযোগও করলেন৷ নাম না করলেও তাপস রায় যে সোমেন মিত্রের অনুগামী ছিলেন, সেকথাও জানিয়ে দিলেন৷ প্রয়াত ব্যক্তির কোনও সমালোচনা করতে চান না জানিয়ে মমতা বলেন, তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে সোমেন মিত্রকেও তিনিই টিকিট দিয়েছিলেন৷ এবারের লোকসভা ভোটে উত্তর কলকাতা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীর জামানত জব্দ হবে বলেও জানিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
বৃহস্পতিবার কামারহাটি থেকে যখন পদযাত্রা শুরু হয়, তখন মাথার ওপর গনগনে সূর্য৷ তার মধ্যেই পদযাত্রা এগোতে থাকে৷ সেই পদযাত্রায় মমতার পথহাঁটার সঙ্গী দুই প্রার্থী সৌগত রায়, সায়ন্তিকা তো ছিলেনই, এছাড়াও ছিলেন সুজিত বসু, মদন মিত্র প্রমুখ তৃণমূল নেতারা৷ আর সাক্ষী ছিলেন বহু মানুষ৷ তাঁদের কেউ ডিভাইডারে উঠে মমতার সঙ্গে হাত মেলাতে চেয়েছেন, কেউ ফুলের তোড়া এনে দিয়েছেন৷ দুই কিশোরকে ছবি এনে মমতার হাতে তুলে দিতেও দেখা গিয়েছে৷ ডানলপের কাছে খালসা মডেল স্কুলের কাছে শিখ সম্প্রদায়ের বহু মানুষ এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন৷
এরপর ব্যাংক ইন্ডিয়ার মঞ্চের পথসভায় রাখা হয়েছিল আদিবাসী সম্প্রদায়ের আলোর দিশারী রঘুনাথ মুর্মু এবং বুদ্ধেদেবের ছবি৷ এই দুজনের ছবিতে পুষ্পার্ঘ্য দিয়েই মমতা এদিনের জনসভা শুরু করেন৷ এদিন মমতার আক্রমণের লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের ওবিসি আইন বাতিল, ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু করার প্রসঙ্গ৷ মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়ে দেন, এই ওবিসি বিধি বাতিলের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাবে তৃণমূল৷ কীভাবে আইন বাতিল রদ করতে হয়, তা জানা আছে বলেও চ্যালেঞ্জ ছুঁডে় দেন৷ এর আগে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিয়োগ বাতিলের বিরুদ্ধেও শীর্ষ আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ পেয়েছেন তারা৷ মমতা বলেন, মোদি সরকার একটা অপপ্রচার চালাচ্ছে, মুসলিমদের জন্য ওবিসিদের সংরক্ষণ কমে যাবে৷ যা আসলে মুসলিমদের সঙ্গে ওবিসিদের একটা বিভেদ তৈরির চেষ্টা৷ মমতা বলেন, সংসদে ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু করে দিয়ে মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণ বিষয়টি উঠিয়ে দেওয়ার ভাবনা রয়েছে মোদি সরকারের৷ মমতা বলেন, এবার মোদি সরকার জিতলে সেটাই হবে ভারতের শেষ নির্বাচন৷
কারণ মোদি দেশে ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন চালু করবেন৷ মমতার কথায, যা আসলে ওয়ান ম্যান, ওয়ান ইলেকশন৷ মোদি সরকারের আমলে বেকারি তুঙ্গে পোঁছেছে৷ বিনামূল্যে গ্যাস, বিদু্যত, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পনেরো লক্ষ টাকা – কোনও কিছুই জোটেনি মানুষের৷ এসব গ্যারান্টি আসলে ফোর টুয়েন্টি বলেই আক্রমণ করেন মমতা৷
তাঁর কথায় উল্টে বাংলার একশো দিনের টাকা, আবাস ইত্যাদির টাকা বন্ধ করে দিয়ে বাংলাকে বঞ্চনা করেছে এই কেন্দ্রীয় সরকার৷ বাংলায় মানুষ সমস্ত ধর্মকে নিরুপদ্রবে পালন করতে পারলেও মোদি-শাহ প্রচার চালান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গা-পুজো সরস্বতী পুজোতে বাধা দেন৷ মোদিকে জগন্নাথ দেবও গুরু মানেন, এমন কথার প্রচারকেও কটাক্ষ করেন মমতা৷ একাধিক শ্লোক আবৃত্তি করে মোদিকে চ্যালেঞ্জ জানান মন্ত্র উচ্চারণের প্রতিযোগিতার জন্য৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, তিনি যদি মানুষের মন ঠিক বুঝে থাকেন, তাহলে বিজেপি এবার দু্শো আসনও পাবে না৷ এবারের লোকসভা ভোটে ইন্ডিয়া জোটই সরকার গড়বে বলে ফের ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এবং সেক্ষেত্রে বাংলা তাদের বিজয়ী সাংসদের নিয়ে সরকার গড়ায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবেন বলেই স্থির বিশ্বাস তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷