মেদিনীপুরের পঁাঁচটি বিধানসভাতেই ধরাশায়ী বিজেপির অগ্নিমিত্রা

নিজস্ব সংবাদদাতা, খড়গপুর, ৫ জুন– মেদিনীপুর লোকসভা আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী জুন মালিয়া ২৭ হাজার ১৯১ ভোটে হারিয়ে দিলেন বিজেপির অগ্নিমিত্রা পালকে৷ মেদিনীপুর লোকসভার সাতটি বিধানসভার আসনের মধ্যে পাঁচটিতেই হেরে গেলেন অগ্নিমিত্রা৷ এই আসনগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে পরাজয় হয়েছে খড়গপুর আসনে৷ এই আসনে জুন জিতেছেন ৩২ হাজার ২৩৮ ভোটে৷ এছাড়াও নারায়ণগড় আসনে ১০৬১৪ ভোটে, কেশিয়ারি আসনে ৭৭৮২ ভোটে, দাঁতন আসনে ৬৩৩৪ ভোটে এবং মেদিনীপুর আসনে ২১৭০ ভোটে জিতেছেন জুন৷ অগ্নিমিত্রা জিতেছেন খড়গপুর সদর আসনে ২১৯০৬ ভোটে এবং এগরায় ৮৯৯৮ ভোটে৷

২০১৯ সালে মেদিনীপুর লোকসভায় জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির দিলীপ ঘোষ৷ খড়গপুর আসন ছাড়া বাকি ছটি বিধানসভাতেই দিলীপ জয়ী হয়েছিলেন৷ প্রায় ৪৬ হাজার ভোটে দিলীপ হারিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ডাক্তার মানস রঞ্জন ভূঁইয়াকে৷ কিন্ত্ত পাঁচ বছর বাদে বিজেপি দিলীপবাবুকে সরিয়ে অগ্নিমিত্রাকে প্রার্থী করে৷ ব্যবধান ধরে রাখতে উদয়াস্ত পরিশ্রম করেছেন অগ্নিমিত্রা৷ কিন্ত্ত শাসক দলের সংগঠনের কাছে একক শক্তির অগ্নিমিত্রা হেরে গিয়েছেন৷ মেদিনীপুর লোকসভা এলাকায় বিজেপির সংগঠন বলতে কিছুই ছিল না৷ যেটুকু লোকজন ছিল তারা দিলীপ ঘোষের সঙ্গে ঘোরাফেরা করতো৷ এই নির্বাচনে তাদের একাংশ অগ্নিমিত্রার আশেপাশে ঘুরঘুর করেছেন কিন্ত্ত বেশিরভাগটাই বসে গিয়েছেন৷ বিজেপির পুরনো কর্মীদের কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন অগ্নিমিত্রা৷ এরা দলের মধ্যে দিলীপ ঘোষের আমলেও ব্রাত্য ছিলেন৷ অগ্নিমিত্রাও তাদের দূরে সরিয়ে রেখেছেন৷ তিনি নির্ভর করেছিলেন যাদের উপর কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল তারা প্রত্যাশিত ফল আনতে ব্যর্থ হয়েছেন৷

খড়গপুর আসনে ২০১৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ১৮ হাজার ভোটে এগিয়েছিল৷ এবারে এক ধাক্কায় সেই ব্যবধান তারা ৩২ হাজারে নিয়ে গিয়েছে৷ মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাঁচটি অঞ্চল সংখ্যালঘু অধু্যষিত৷ সেই অঞ্চল গতবারেও একতরফা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছিল এবারেও দিয়েছে৷ কিন্ত্ত খড়গপুর এক নম্বর ব্লকের সাতটি অঞ্চলের মধ্যে একটি ছাড়া অন্য অঞ্চলগুলিতে ধুয়ে মুছে গিয়েছে বিজেপি৷ ফলে ব্যবধান অনেকটাই বাডি়য়ে নিতে পেরেছে তৃণমূল৷ খড়গপুরের বিধায়ক দীনেন রায় বলেন, সারা বছর রাজনৈতিক রঙ না দেখে মানুষের পাশে থেকে কাজ করি৷ তার সুফল ভোটে মিলেছে৷ এছাড়া মানুষকে আমরা বোঝাতে পেরেছি যে তৃণমূল কংগ্রেস গরিব ও সাধারণ মানুষদের কথা ভাবে অন্যদিকে বিজেপি বড়লোক ও ব্যবসায়ীদের দল৷ মমতা ব্যানার্জির উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথাও মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি৷ তবে ভোটের ফলে সন্ত্তষ্ট নই৷ ভোটের ব্যবধান আরো একটু বাড়লে খুশি হতাম৷


একইভাবে মেদিনীপুরের শালবনী অঞ্চল বিরাট ব্যবধানে জুনকে এগিয়ে রেখে মেদিনীপুর পুর এলাকার খারাপ ফলকে ডিঙিয়ে গিয়ে জুনকে বিধানসভা ক্ষেত্রে দু হাজার ভোটের লিড দিতে পেরেছে৷ অগ্নিমিত্রার ইলেকশন এজেন্ট রমা প্রসাদ গিরি ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নারায়ণগড় থেকে প্রতিদ্বন্দিতা করে ৬০০০ ভোটের ব্যবধানে তৃণমূলের সূর্য অট্টের কাছে হেরে যান৷ সূর্য অট্টের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের ক্ষোভ ছিল কিন্ত্ত সেই ক্ষোভকে ছাপিয়ে গিয়ে তৃণমূল দশ হাজার ভোটের ব্যবধান তৈরি করে নিতে পারল কার্যত রমা গিরির অযোগ্যতায়৷ রমার উপরে অনেকটাই নির্ভর করেছিলেন অগ্নিমিত্রা৷ নারায়ণগড় এলাকায় বিজেপির পুরনো কর্মীদের একটা বড় অংশ বসে গিয়েছিলেন৷ অগ্নিমিত্রা তাদের কাজে লাগাতে বা কাজে নামাতে পারেননি৷ পুরনো কর্মীরা প্রচারে থাকলে বিজেপির সাংগঠনিক ক্ষমতা অনেকটাই বেডে় যেত৷ কিন্ত্ত বাস্তবে তা হয়নি৷

অন্যদিকে খড়গপুর সদর আসনে পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৪টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছেন জুন মালিয়া৷ বাকি ৩১টি ওয়ার্ডেই এগিয়ে রয়েছে বিজেপি৷ মজার ব্যাপার ২০১৯ সালে দিলীপ ঘোষ প্রায় ৪৬ হাজার ভোটে খড়গপুর সদর আসনে এগিয়েছিলেন৷ দিলীপবাবুর সময় ৬টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস৷ কিন্ত্ত এবারে ৩১টি ওয়ার্ডে এগিয়ে থেকেও বিজেপি মাত্র ২২ হাজার ভোটের ব্যবধান তৈরি করতে পেরেছে৷