বিজেপির দর্পচূর্ণ, জনতাই কিং মেকার : অভিষেক

প্রশান্ত দাস: “কখনও ক্ষমতার আস্ফালন দেখাতে নেই৷ কখনও মানুষের ক্ষমতাকে অবজ্ঞা করতে নেই”, দিল্লি পাড়ি দেওয়ার পূর্বেই বিজেপিকে প্রচ্ছন্ন উপদেশ দিয়ে গেলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের তৃতীয়বারের নবনির্বাচিত সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ উল্লেখ্য, এবারের লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে রেকর্ড মার্জিনে জয়ী হয়েছেন অভিষেক, গড়েছেন ইতিহাস৷ ৭ লক্ষের বেশি লিড নিয়ে ডায়মন্ড হারবার থেকে তৃতীয় বার জয়ের মুকুট পরেছেন তিনি৷ পরপর তিনবার জয়ী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর চোখে মুখে নেই বিন্দুমাত্র ক্ষমতার আস্ফালনের ছাপ৷ নম্রভাবে জবাব দেন প্রত্যেকের প্রশ্নের, সাড়া দেন জনসাধারণের ডাকে৷ এবার তৃণমূলের ‘দূত’ হয়ে দিল্লি পাড়ি দিয়েছেন অভিষেক, ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে বসেছেন তিনি৷ ইন্ডিয়া জোটের ভাগ্য এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে চলেছেন যুবরাজ৷ বুধবার দুপুরে দিল্লি যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে অভিষেক সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “যাঁরা এক মাস আগে বাংলায় এসে বলেছিলেন, বিজেপি ৩০টি আসন পেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ফুস হয়ে যাবে, এখন তাঁদের সরকার গঠন করা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে৷ ” এদিন বিজেপিকে বিঁধে অভিষেক আরও বলেন, “এবারের ভোটে দেশের মানুষ বিজেপির দর্পচূর্ণ করে দিয়েছে৷ জনতাই কিং মেকার৷ আগামীদিনে জনতাই ঠিক করবে দেশ কোন পথে চলবে৷ ”

৪০০ পারের ডাক দিয়ে তিনশোও ছুঁতে পারেনি এনডিএ জোট৷ নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর সিংহাসনে বসতে পারবেন কিনা তা নিয়েও খানিক দোলাচাল রয়েছে৷ যে রামের দোহাই দিয়ে ভোট বৈতরণী পারের চেষ্টা করেছিল বিজেপি, সেই রামের নাম নিয়েই বিজেপিকে খোঁচা অভিষেকের৷

বিজেপি-গড় উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ধাক্কা নিয়ে অভিষেক বলেন, “ওঁরা বলছিল, ঈশ্বরকে প্রতিষ্ঠা করেছে! আমরা ঈশ্বরকে প্রতিষ্ঠা করতে পারি? এই ফল দেখে বলতে হয়, রাম আয়া, ইনসাফ আয়া৷” আত্মবিশ্বাসী অভিষেক দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “বিজেপি নেতারা ভবিষ্যৎবাণী করতে থাকুন৷ ২১ এর ভোটে ২০০ পারের কথা বলেছিলেন৷ বাংলার মানুষ তৃণমূলকে সেটা করে দিয়েছিল৷ এবারে লোকসভায় বাংলা থেকে ৩০টি আসনের ঘোষণা করেছিল৷ তৃণমূলকে ২২ থেকে ২৯ এ পৌঁছে দিয়েছে মানুষ৷ ওঁরা তৃণমূলকে যত বদনাম করবে, মানুষ ততই তৃণমূলকে শক্তিশালী করবে৷” ইন্ডিয়া জোটের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে সে প্রসঙ্গে অভিষেককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আগে দিল্লি যাই, বৈঠক হোক৷ তারপরে কলকাতায় ফিরে এসে যা বলার বলব৷ নেত্রীর নির্দেশে বৈঠকে যাচ্ছি৷ সকলের সঙ্গে দেখা হবে, আলোচনা হবে৷ দেশকে বাঁচাতে ইন্ডিয়া জোটকে আরও শক্তিশালী করতে হবে৷” পাশাপাশি, অভিষেক কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁডি়য়ে মুচকি হেসে বলেন, “পাঞ্জাব, বিহার, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক থেকে অনেকে দিল্লি পৌঁছচ্ছেন৷ সকলের সঙ্গে বৈঠকে কথা হবে৷”


এই ইঙ্গিতপূর্ণ জয়ের হাসি প্রমাণ করে দেয়, ইন্ডিয়া জোট এবার নিদারুন চাপ সৃষ্টি করেছে বিজেপির ওপর৷ মঙ্গলবার লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশ হতেই একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়, বিজেপি আর একক সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাবে সরকার চালাতে পারবে না৷ শরিকদলগুলির ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে৷ তাতেই আশার মুখ দেখেছে ইন্ডিয়া জোট৷ এদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার ফলপ্রকাশের পর মমতা জানিয়ে দিয়েছিলেন, ইন্ডিয়ার বৈঠকে তিনি থাকতে পারবেন না৷ তবে আমন্ত্রণ পেলে নিশ্চয়ই তিনি অভিষেককে পাঠাবেন৷ সেই মতোই দিল্লি পাড়ি দিয়েছেন অভিষেক৷ যাওয়ার আগে বলেছেন, “আমাদের দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ আমি দলের তরফে সেই বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছি৷ ” ভোটের সার্বিক ফল দেখে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অভিষেককে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়৷ সেখানে সেনাপতির ভূয়সী প্রশংসা করে নেত্রী বলেছিলেন, “এই জয় মানুষের জয়৷ বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার জয়৷ আমি আমার সমস্ত ইন্ডিয়ার সঙ্গীকে সমর্থন জানাচ্ছি৷ যাঁরা আছেন, যাঁরা আমাদের সঙ্গে জুড়তে চান, তাঁদের প্রত্যেককে আমার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি৷ ” এরপর মমতার সংযোজন, “অভিষেক সাত লক্ষের বেশি ভোটে জিতেছে৷ গোটা দেশে রেকর্ড করেছে৷ ওঁকে দেখে দিল্লির শেখা উচিত, শুধু রিগিং করে ভোট হয়না৷ ওঁকে আপনারা সবাই অভিনন্দন জানান৷”