• facebook
  • twitter
Sunday, 8 September, 2024

নির্বাচনে হেরে বাংলাকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র বিজেপি-র?

উত্তরবঙ্গ ইস্যুতে নিজের দলেই কোণঠাসা সুকান্ত নিজস্ব প্রতিনিধি: সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে পারেনি বিজেপি৷ এনডিএ শরিক দলগুলির সাহায্যে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসতে হয়েছে নরেন্দ্র মোদিকে৷ বাংলাতেও আশানুরূপ ফলাফল করতে পারেনি পদ্মশিবির৷ এই কারণেই বিভিন্নভাবে বাংলাকে কোণঠাসা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের৷ করা হচ্ছে বাংলা ভাগের চক্রান্ত৷ সংসদে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করার পর

উত্তরবঙ্গ ইস্যুতে নিজের দলেই কোণঠাসা সুকান্ত

নিজস্ব প্রতিনিধি: সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে পারেনি বিজেপি৷ এনডিএ শরিক দলগুলির সাহায্যে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসতে হয়েছে নরেন্দ্র মোদিকে৷ বাংলাতেও আশানুরূপ ফলাফল করতে পারেনি পদ্মশিবির৷ এই কারণেই বিভিন্নভাবে বাংলাকে কোণঠাসা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের৷ করা হচ্ছে বাংলা ভাগের চক্রান্ত৷ সংসদে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করার পর থেকে উঠেছে বাংলাকে বঞ্চনা করার অভিযোগও৷ পাশাপাশি, এবার রাজ্য ভাগ না করেই উত্তরবঙ্গের আট জেলাকে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার৷ একাধিক ইস্যুতে বাংলাকে নতুনভাবে আক্রমণ করাই বিজেপির উদ্দেশ্য বলে দাবি করেছে তৃণমূল৷

অপরদিকে এই প্রস্তাব এনে নিজের দলেই সমালোচনার মুখে পড়লেন সুকান্ত৷ উত্তরবঙ্গ ইসু্যতে দলের রাজ্য সভাপতিকেই তুলোধনা করলেন কার্শিয়াঙের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা৷ একে ‘অবাস্তব’ বলেও দাবি করেছেন তিনি৷ সুকান্তের তরফে এই প্রস্তাব পেশের পরেই আবার গ্রেটার কোচবিহারের দাবিতে সরব হয়েছেন অনন্ত মহারাজ৷ কেন্দ্রের তরফে তাঁকে এই বিষয়ে মৌখিক আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে বলেও তাঁর দাবি৷

এদিকে উত্তরবঙ্গ ইস্যুতে লোকসভায় নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে৷ তাঁর দাবি, জনবিন্যাসের ভারসাম্য বজায় রাখার কারণ দেখিয়ে বাংলার মালদা, মুর্শিদাবাদ জেলাকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে দেওয়া হোক৷ সেই সঙ্গে বিহারের কিষাণগঞ্জ, অরারিয়া এবং কাটিহার জেলাকেও ওই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সঙ্গে অর্ন্তভূক্ত করা হোক৷ লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকে এভাবেই বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা বাংলাকে ভাগ করতে উঠে পড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব৷

বিজেপি চক্রান্ত করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বাংলাকে বিভক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ এমই দাবি করেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব৷ অপরদিকে সুকান্তর প্রস্তাব সম্পর্কে বৃহস্পতিবার বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণপ্রসাদ বলেন, ‘এটা একটা অবাস্তব ধারণা৷ এটা কোনও দিনই হবে না৷ ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে উত্তরবঙ্গের মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন সুকান্ত৷’ সুকান্তকে আক্রমণ করে বিষ্ণু আরও বলেন, ২০২৪-এর ফলাফলের জন্য সুকান্ত মজুমদার হতাশ৷ ২০২৬–এ উত্তরবঙ্গ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে ভেবে উনি সেখানকার মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন৷’

বুধবারই সুকান্তর এই দাবির বিরোধিতা করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস৷ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তৃণমূল নেতারা৷ ভোটে হারের বদলা নিতে বাংলা ভাগের চক্রান্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ৷ এবার নিজের দিলের বিধায়কই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেন৷ প্রসঙ্গত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছিলেন, উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের স্বার্থেই তিনি সেখানকার আট জেলাকে উত্তর–পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ সেই প্রস্তাবকেই কটাক্ষ করেছেন বিষ্ণুপ্রসাদ৷

সুকান্তর প্রস্তাব কেন অসম্ভব ও অবাস্তব তাঁর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কার্শিয়াঙের বিধায়ক জানিয়েছেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সিকিমের বিশেষ আইন আছে৷ কিন্ত্ত পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তা নেই৷ তাঁর আরও দাবি, কোনও রাজ্যের অর্ধেক অংশ কখনও উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের অংশ হতে পারে না৷ এদিন বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণপ্রসাদ শর্মা আরও বলেন, ‘অফিসিয়ালি আমি বিজেপি বিধায়ক হিসেবে বলছি, এটা মেনে নেব না৷ কারণ এর জেরে যারা আলাদা রাজ্য চাই, তাঁদের দাবি পূরণ হবে না৷’

সুকান্ত মজুমদারকে আক্রমণ করার পাশাপাশি রাজ্য ভাগের দাবিও উস্কে দিয়েছেন বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা৷ তিনি বলেন, ‘যদি সত্যিই তিনি উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের অন্তর্ভুক্ত করতে চান, তবে আগে সেগুলিকে বাংলা থেকে ভাগ করুন৷ তারপর সেটিকে রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করুন৷’

এপ্রসঙ্গে বিজেপি মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্য বিজেপি বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে৷ এটাই দলের অবস্থান৷ অন্য কোথায় কে কী বললেন, তার দায় দলের নয়৷

উল্লেখ্য, বিধায়ক বিষ্ণুকে নিয়ে দলের অস্বস্তি নতুন নয়৷ লোকসভা নির্বাচনের আগে দার্জিলিং কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হিসেবে রাজু বিস্তার নাম ঘোষিত হলে প্রকাশ্যে তাঁর বিরোধিতা করেছিলেন বিষ্ণুপ্রসাদ৷ দলের নির্বাচিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান তিনি৷ কিন্ত্ত জিততে পারেননি৷