• facebook
  • twitter
Sunday, 8 September, 2024

অভিষেক-গড়ে বিজেপির দলীয় কর্মীদেরই বিক্ষোভের মুখে বিজেপির কেন্দ্রীয় দল, ‘গো ব্যাক’ স্লোগান 

প্রশান্ত দাস: বাংলায় এসে বঙ্গ বিজেপি কর্মীদেরই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হলো বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে। ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার হওয়া ‘ঘরছাড়া’ এবং ‘আক্রান্ত’ বিজেপি কর্মীদের অভিযোগের কথা শুনতে এসে অভিষেক-গড় ডায়মন্ড হারবারে বিজেপির কেন্দ্রীয় দলের হলো চরম বিপত্তি। মঙ্গলবার বেলায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলায় কেন্দ্রীয় দলের সদস্য তথা ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ

BJP. (File Photo: IANS)

প্রশান্ত দাস: বাংলায় এসে বঙ্গ বিজেপি কর্মীদেরই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হলো বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে। ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার হওয়া ‘ঘরছাড়া’ এবং ‘আক্রান্ত’ বিজেপি কর্মীদের অভিযোগের কথা শুনতে এসে অভিষেক-গড় ডায়মন্ড হারবারে বিজেপির কেন্দ্রীয় দলের হলো চরম বিপত্তি। মঙ্গলবার বেলায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলায় কেন্দ্রীয় দলের সদস্য তথা ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বিজেপির কর্মী সমর্থকদের একাংশ। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যদের উদ্দেশ্যে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে থাকেন দলীয় কর্মী, সমর্থকরাই। তাঁরা ক্ষোভ উগড়ে দেন বিজেপির ডায়মন্ড হারবার সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অভিজিৎ সর্দারের বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য, এদিন ওই জেলারই বিষ্ণুপুরের দলীয় দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে এলাকা পরিদর্শনে বেড়োন কেন্দ্রীয় দলের সদস্যেরা। তাঁদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল আলতাবেড়িয়া। সেই উদ্দেশ্যেই রওনা দেন তাঁরা। কিন্তু রাস্তায় হাত দেখিয়ে বিপ্লবদের গাড়ি থামান দলেরই কর্মী সমর্থকেরা। মহিলাদের একাংশ গাড়ি থেকে বিপ্লব কে নেমে আসার অনুরোধ জানান। যে বিজেপি কর্মীদের জন্য কেন্দ্রীয় দল আসে, তাঁরাই সেই কেন্দ্রীয় দলের সদস্যদের উপর চড়াও হন! কিন্তু কেন? সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অভিজিতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা দাবি করেন, ৪ জুন ভোটের ফলপ্রকাশের পর আক্রান্ত কর্মীদের খোঁজখবর নেওয়া হয়নি দলের তরফ থেকে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকেই রাজ্য হয়ে উঠেছে অশান্ত। ভোট পরবর্তী হিংসার জেরে উত্তপ্ত হচ্ছে খেজুরি থেকে বসিরহাট। কোথাও আক্রান্ত হচ্ছেন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা, কোথাও আবার জখম হচ্ছেন বিরোধীরা। স্বভাবতই বিজেপির অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে। বিজেপির দাবি, তাঁদের কর্মী, সমর্থকদের উপর হামলা করছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই। এমতবস্থায় ভোট পরবর্তী এই হিংসার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল রবিবারই রাজ্যে আসে। সেই দলে রয়েছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ বিপ্লব দেব, বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ। সোমবার দলের সদস্যরা কোচবিহারে গিয়ে আক্রান্ত বিজেপি কর্মী, সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেন। মঙ্গলবার দলটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে আসে। এই বিষ্ণুপুর ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। উল্লেখ্য, ডায়মন্ড হারবার থেকে এবার ৭ লক্ষের বেশি লিড নিয়ে বাংলার বুকে রেকর্ড ভোট ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার বিজেপি কর্মীদের একাংশ আশ্রয় নিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের পরাজিত পদ্মপ্রার্থী অভিজিৎ দাসের বাড়িতেই। বিজেপির অভিযোগ ছিল, এই কেন্দ্রে রীতিমতো ভোটে কারচুপি হয়েছে। এমনকি ভোটের ফল প্রকাশের পর ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত একাধিক জায়গায় বিজেপির কর্মী, সমর্থকেরা তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন। এবার অভিষেক-গড়ে আক্রান্ত বিজেপির কর্মী, সমর্থকদের অভিযোগ শুনতেই বিষ্ণুপুর আসে বিজেপির কেন্দ্রীয় দল। তাতেই ঘটে বিপত্তি! অভিযোগ শোনা তো দূর, উল্টে বিজেপির কর্মী, সমর্থকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিপ্লব সহ কেন্দ্রীয় দলের অন্যান্য সদস্যরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা ফলতা বিধানসভা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি জাহাঙ্গীর খান এ প্রসঙ্গে বলেন, “তৃণমূল বিজেপির কেন্দ্রীয় দলের তদারকির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। জনসাধারণ যেভাবে আমাদের উপর ভরসা এবং বিশ্বাস রেখেছে তাতে আমরা চির কৃতজ্ঞ থাকবো। এভাবেই যেন জনসাধারণ আমাদের পাশে থাকেন, আমরাও আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।” কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ডায়মন্ড হারবার কে কালিমালিপ্ত করার প্রয়াস করেছে। এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর খান বলেন, “তাঁদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে! এখন সেই পরিস্থিতি থেকে বেড়িয়ে আসার জন্যই তাঁরা বিভিন্ন প্রয়াস করছেন।” বিজেপির অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে থাকলেও, তৃণমূলের সাথে যে বাস্তবে এই ঘটনার দূর দূর পর্যন্ত কোনো সম্পর্কই ছিল না, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে মঙ্গলের ঘটনায়। বিজেপি কর্মীদের সমস্যায় বিজেপির নেতৃত্বরাই থাকেন না, এই অভিযোগ বিজেপির অন্দরমহলেরই। বাস্তবেও যেন তাই প্রমাণিত হলো। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। আর তারপর থেকেই বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল সামনে আসছে। কখনও রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন দলীয় নেতৃত্বদের বিরুদ্ধে, আবার কখনও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিমান করছেন। অন্যদিকে ডায়মন্ড হারবারের নির্বাচনের দিন অর্থাৎ ১লা জুন দেখা গিয়েছিল, এই কেন্দ্রের পরাজিত পদ্মপ্রার্থী অভিজিৎ দাস ওরফে ববি দফায় দফায় গ্রামবাসীর বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। বালুরঘাটের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার সম্প্রতি এক সাংবাদিক বৈঠক থেকে বলেছিলেন, “দেশের ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে লোকসভা ভোট হয়েছে। ২টি রাজ্যে ক্ষমতায় পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া কোথাও কোনও রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেনি। কোথাও একটা ইট পর্যন্ত পড়েনি। তাহলে পশ্চিমবঙ্গ ব্যতিক্রম হবে কেন?” এই জটিলতার মধ্যেই লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার একটি প্রশংসাপত্র পাঠান দক্ষিণ ২৪ পরগনার এসপি রাহুল গোস্বামী কে। ডায়মন্ড হারবার তথা গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় স্বচ্ছ এবং স্বাধীন ভাবে নির্বাচন সংঘটিত করার জন্য রাজীব কুমার কর্তৃক প্রশংসিত হন রাহুল গোস্বামী। সব মিলিয়ে বিজেপি তৃণমূল কে দোষারোপ করলেও ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতাই ক্রমে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।