দলত্যাগীদের নাম ও পদাধিকারীর তালিকায় দুধকুমার জল ঢালতেই উদভ্রান্ত বিজেপি নেতৃত্ব

আশঙ্কা ছিল অনেক আগে থেকেই। এবার তা এলো প্রকাশ্যে। একটা সময় বীরভূম জেলায় যাঁর হাত ধরে বিজেপি তার উত্থান যাত্রা শুরু করেছিল, সেই দুধকুমার মণ্ডলকে দল যখন একটু একটু করে উপেক্ষা করতে শুরু করেছে, তখন থেকেই বীরভূম জেলায় বিজেপি ক্রম অবনতির তলানির দিকে ধাবিত হয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে একটা সময় মুকুল রায় নানুরের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক গদাধর হাজরা এবং লাভপুরের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মনিরুল ইসলাম বিজেপিতে যোগ দিয়ে বীরভূমের বিজেপি রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করলেও,এঁদের কেউই দুধকুমার মণ্ডলের সাংগঠনিক শক্তি এবং প্রভাবের ধারেকাছে পৌঁছাতে পারেননি।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে জেলায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়া বামেরা যখন শাসক তৃণমূল কংগ্রেস বিরুদ্ধে কোনও প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে না পেরে প্রায় সিঁধিয়ে গিয়েছে তখন, বিজেপির জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের নেতৃত্বে বিজেপি শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে রীতিমতো রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন।


আবার পরবর্তীতে আরএসএস ঘরানার দুধকুমার মণ্ডলই ব্রাত্য হয়েছেন দলে। কিন্তু দলের সাংগঠনিক শক্তির অভ্যন্তরিন রাশ রয়ে গিয়েছে দুধকুমার মণ্ডলের হাতে। দল তাঁকে রাজ্য বিজেপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য করলেও, তিনি যেমন তাতে সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি তেমনি , তিনি দলের কাজেও তেমনভাবে অংশ গ্রহণ করেননি।

কিন্তু তিনি যে কতখানি প্রাসঙ্গিক তাঁর রবিবার জুনের সমাজ মাধ্যমে ছড়ানো একটি বার্তা থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তিনি দলের বর্তমান জেলা কমিটির কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করে স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন যে, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে বাংলায় বিজেপি চলছে তাতে দলের কর্মী এবং সাধারণ মানুষ হতাশ।

জেলা থেকে ব্লক কমিটি আমার সঙ্গে আলোচনা না করেই ব্লক এবং জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর তাই তিনি নিজের উপরে বিশ্বাস রেখে বলতে পেরেছেন, ভারতীয় জনতা পার্টির সমর্থক এবং কার্যকর্তাগণ আমাকে যাঁরা ভালোবাসেন তাঁরা চুপচাপ বসে যান।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, কোনও নেতাকে ভালোবেসে কেউ বিজেপি করে না বিজেপি নীতি – আদর্শকে ভালবেসে দল করে।কিছু মানুষ করেন, তাঁরা বড় নেতা হয়ে গিয়েছেন। আদতে পার্টির বাইরে আমাদের কোনও অস্তিত্ব নেই। এটা অনেকেই ভুলে যান। পার্টির সংবিধানে কোথাও লেখা নেই,দুধকুমার মণ্ডলের সঙ্গে আলোচনা করে এই কমিটিগুলো করতে হবে।

অপর দিকে দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন বীরভূমের একটা বড় এলাকায় দুধকুমারদা এবং সমার্থক। উনি শুধু প্রবীণই নন একজন অনুভবী কার্যকর্তা খুব তাড়াতাড়ি তাঁর ক্ষোভের কথা শোনা হবে।

দলের কেন্দ্রীয় নেতা অনুপম হাজরাও দুধকুমার মণ্ডলের ক্ষোভের বিষয়ে তাঁর অনুভবের কথা বলেছেন। আর এই প্রেক্ষাপটেই বিজেপির নানুর – সি মণ্ডল কমিটির পদাধিকারিদের নাম ঘোষণা করা নিয়েও চরম অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি।

যে ১৬ জনের কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়েছে তাতে দলের সম্পাদক হিসেবে মনোজ লোহার ও সহ – সভাপতি হিসেবে দেবাশিস গড়াইয়ের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ তাঁরা দু ‘ জনেই বলছেন , তাঁরা বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।

জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা নানুরের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা আব্দুল করিম খান বলেছেন বিজেপি নামের দলটাই পশ্চিম বঙ্গ থেকে উঠে গিয়েছে যাঁদের লোকজন নেই তাঁরা যদি জোর করে কারও নাম নথিভুক্ত করে তাহলে সেটা রাজনীতির ক্ষেত্রে ঠিক হচ্ছে তাঁরা ভুল করে বিজেপিতে গিয়েছিলেন।

বিধানসভা ভোটের পরেই আমাদের সঙ্গে এসেছে। অপর দিকে বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেছেন , এঁরা আতঙ্কিত।

তৃণমূল কংগ্রেস এঁদের জোরপূর্বক তাঁদের দলে যোগ দেওয়ার কথা বলাচ্ছে। তবে , দুধকুমার মণ্ডল বিজেপির জেলা রাজনীতিতে যে চুনা ঢেলে দিয়েছেন তাতে বিজেপির ছানা কাটা অবস্থা হয়ে যাচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে।