নিজস্ব প্রতিনিধি: কথায় বলে, হিংসা রাজনীতির অংশ নয়। কিন্তু ভোটের আবহে এই সকল বাণী মিথ্যে প্রমাণিত হয়। ভোট লুট করতে এলে তিন হাত ডাণ্ডা দিয়ে মালাইচাকি ভেঙে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন বিজেপির এক জেলা সভাপতি। এখানেই শেষ নয়, পুলিশের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। পুলিশ দালালি করলে থানায় তালা লাগিয়ে দেওয়ার হুঙ্কারও দিয়েছেন তিনি। তবে কে এই বিজেপি নেতা? তিনি হলেন বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা বিজেপি-র সভাপতি দেবদাস মণ্ডল।
উল্লেখ্য, আগামী ১০ জুলাই রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ ও মানিকতলার সঙ্গে বাগদা বিধানসভাতে হবে উপনির্বাচন। সেই উদ্দেশ্যেই শনিবার বাগদার হেলেঞ্চায় কর্মীসভার আয়োজন করেছিল পদ্মশিবির। সেখানেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের পাশে বসে এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন দেবদাস মণ্ডল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই ভাইরাল তাঁর বক্তব্য। উঠেছে নিন্দার ঝড়। ভাইরাল ভিডিওতে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে দেবদাসকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “ভোট লুট করতে এলে তিন হাত ডান্ডা দিয়ে মালাইচাকি ভেঙে দিতে হবে। পুলিশ দালালি করলে, বাগদা থানায় তালা লাগিয়ে দেবেন।”
এমনভাবেই চড়া সুরে এক বিজেপি নেতৃত্ব নিজ দলীয় কর্মীদের হিংসাত্মক কুপরামর্শ দিচ্ছেন! এই ভিডিও ভাইরাল হতেই বিজেপি-কে বিঁধেছে বিরোধীরা। ভাইরাল ভিডিও-কে ঘিরে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে শাসক শিবিরও। যুব তৃণমূলের বনগাঁর জেলা সভাপতি নিরুপম রায় এপ্রসঙ্গে বলেন, “এলাকায় অশান্তির পরিবেশ তৈরির জন্য বিজেপি নেতা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। অবিলম্বে তাঁকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।”
ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ঘটনার জেরে রীতিমতো ব্যাকফুটে বঙ্গ বিজেপি। অস্বস্তি তৈরী হচ্ছে বিজেপির অন্দরমহলেই। বাগদায় বিজেপির ঘোষিত প্রার্থীকে মেনে নেননি দলের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশ। দলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাঁরা নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। গত শুক্রবার বিজেপির দলীয় পতাকা নিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন নির্দল প্রার্থী সত্যজিৎ মজুমদার। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, শাসকদলের পাশাপাশি দলের বিক্ষুদ্ধদেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপি নেতা। স্বভাবতই দলের অভ্যন্তরীন জটিলতায় চাপ সৃষ্টি হয়েছে বঙ্গ বিজেপিতে। এর মাঝেই এমন হিংসাত্মক বক্তব্য রেখে সমালোচনার শিকার হলেন দেবদাস মণ্ডল।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এর আগেও একাধিকবার দেবদাসের নাম উঠে এসেছে শিরোনামে। একই চিত্র ধরা পড়েছিল বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচনের আগের দিন। ভোট লুট রুখতে ১৯শে মে সাংবাদিক বৈঠক করে দলীয় কর্মীদের বাঁশ ধরার নিদানের পাশাপাশি, মহিলাদেরও ঝাঁটা, খুন্তি নিয়ে বিদায় দেওয়ার আবেদন রেখেছিলেন দেবদাস। বাঁশপেটা করার নিদান দিয়ে রীতিমতো বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি।
বনগাঁর ভোটের আগের দিন দেবদাস বলেছিলেন, “বিজেপির কার্যকর্তা এবং সাধারণ মানুষকে বলব, ভোট দিতে কেউ বাধা দিলে তিন হাত লম্বা বাঁশ রেডি করে রাখবেন। মেরে হার্মাদদের ঠ্যাং ভেঙে দেবেন।” এবার মালাইচাকি ভেঙে দেওয়ার নিদান দিলেন দেবদাস। তাঁর এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। সমালোচনা করেছে বিরোধীরা। তাঁদের প্রশ্ন, নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করবে পুলিশ প্রশাসন। ভোটার বা দলীয় কর্মীদের লাঠি ধরার নির্দেশ দিয়ে তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক ভোট পরিচালন ব্যবস্থাকে ভঙ্গ করছেন এবং জনসাধারণকে উত্তেজিত করছেন।