বিজেপি নেতার ভাইয়ের বাডি়তে বিস্ফোরণ! ‘এখানে সিবিআই আসবে না?’

নিজস্ব প্রতিনিধি— দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের দিনই শেখ শাহজাহানের গড় থেকে উদ্ধার হয়েছিল একের পর এক আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিদেশি অস্ত্র৷ এবার এক বিজেপি নেতার ঘনিষ্ঠ -এর (ভাই) বাডি়তেই ঘটলো বিস্ফোরণ! সেই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ালো উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদে৷ স্থানীয় সূত্রে খবর, স্থানীয় বিজেপি নেতা নিমাই দাসের ভাইয়ের বাডি়তে শনিবার সকালে তীব্র বিস্ফোরণ হয়৷ বিকট আওয়াজে কেঁপে ওঠে আশেপাশের এলাকা৷ প্রথমে স্থানীয়েরা মনে করেছিলেন, বোমাবাজি হয়েছে৷ রান্নার সিলিন্ডার ফেটে এই দুর্ঘটনা হয়েছে বলে দাবি করেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ৷ যদিও তৃণমূলের দাবি, মজুত রাখা বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় হাসনাবাদ থানার পুলিশ, শুরু হয়েছে তদন্ত৷ এই বোমা বিস্ফোরণে বেশ কয়েক জন আহতও হয়েছেন৷

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপিকে আক্রমণ করেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস৷ বিজেপিই বিভিন্ন জায়গায় বোমা মজুত করছে নির্বাচনের সময় ন্যারেটিভ তৈরির অভিপ্রায়ে, তারপর কেন্দ্রীয় সংস্থা ব্যবহার করে সেগুলি উদ্ধার করে দোষারোপ করছে তৃণমূলকে, বিজেপির বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ এনেছে রাজ্যের শাসক দল৷ শনিবারের এই ঘটনার জন্য অবিলম্বে বিজেপি নেতা নিমাই দাস কে গ্রেফতার করতে হবে, দাবি কুনালদের৷ শুধু তাই নয়, “নিমাই দাস যাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় আছেন তাঁদের জেরা করতে হবে৷ তদন্ত করতে হবে এরাই সেই এলাকার আর কোনো জায়গায় বোমা বা অস্ত্র রাখছে কিনা! পরে নিজেদের সিবিআই, এনএসজি ডেকে সেই বোমা উদ্ধার করে তৃণমূলের দিকে আঙ্গুল তুলছে কিনা সেটাও দেখতে হবে”, শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে এমনটাই বলেন রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ এবং অরূপ চক্রবর্তী৷

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্দেশখালি থেকে এনএসজি উদ্ধার করেছে আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিদেশি অস্ত্র৷ ঠিক তার পরের দিনই বিজেপি নেতার ঘনিষ্ঠ -এর বাড়িতে হলো বিস্ফোরণ৷ এ প্রসঙ্গেই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে আক্রমণ শানিয়ে কুনাল বলেন, “এখানে সিবিআই আসবে না? এনআইএ আসবে না? এনএসজি ঢুকবে না? এনএসজির রোবোটিক ডিভাইস কে দেখা যাবে না গুটি গুটি পায়ে এগোচ্ছে?” কুনাল আরও বলেন, “প্রবল গরমের মধ্যে মজুত রাখা বোমা ফেটেই ওই বিস্ফোরণ হয়েছে৷ অভিযোগ আসছে, সেখানে আরও আগ্নেয়াস্ত্র মজুত রাখা ছিল কিন্ত্ত পুলিশ আসার আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে সেগুলো৷ ” কটাক্ষের সুরে নিশানা করেন কেন্দ্রকেও৷ “অতিনাটকীয়তা দেখাতে এনএসজি কে অপব্যবহার করছে বিজেপি৷ এরপর কালীপুজোতে দোকানে দোকানে চকলেট বোম খুঁজতে এনএসজিকে নামাবে দিল্লি”, মন্তব্য কুনালের৷


এই ঘটনায় শিরোনামে উঠে আসছে নিমাই দাসের নাম৷ তবে কে এই নিমাই দাস? তাঁর পরিচয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী৷ তিনি বলেন, নিমাই দাস বিজেপির কোনো সাধারণ কর্মী নন, তিনি বিজেপির উচ্চ স্তরের নেতৃত্ব যেমন বিএল সন্তোষের ঘনিষ্ঠ, এমনকি শুভেন্দু অধিকারীরও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি৷ সন্দেশখালিতেও বিজেপিই বোমা মজুত রেখেছিল, দাবি অরূপের৷ এমন মন্তব্যের পেছনে দুটি কারণ দেখিয়েছেন তিনি৷ এক, নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করার জন্য৷ দুই, নির্বাচনের আগে ন্যারেটিভ তৈরী করার জন্য৷ শুক্রবার সকালে মালদায় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী বক্তৃতা থাকার জন্যই সকাল থেকে সন্দেশখালিতে তল্লাশি চালায়নি কেন্দ্রীয় সংস্থা, দাবি অরূপের৷ তাঁর ভাষায়, “আমরা জানি যখনই সিবিআই, এনআইএ তল্লাশি করে সেটি সকাল থেকে শুরু হয়৷ তবে শুক্রবার এনএসজি সকাল থেকে তল্লাশি শুরু করেনি কারণ প্রধানমন্ত্রী সকালে বাংলায় এসে নির্বাচনী বক্তৃতা রাখছিলেন৷ মানুষ যাতে সেইসময় বিব্রত না হন, তাই প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শেষ হওয়ার সময় পরিকল্পনামাফিক এমন ঘটনা ঘটানো হয়৷” এনএসজিকে নামিয়ে গোটা ভারতবর্ষে বাংলাকে কালিমালিপ্ত করার খেলা খেলছে বিজেপি, আক্ষেপের সুর অরূপের গলায়৷ সন্দেশখালি থেকে বোমা উদ্ধারের প্রসঙ্গে অরূপ রাজ্য বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, “রবীন্দ্রনাথের নোবেল এখনও সিবিআই আবিষ্কার করতে পারে নি, কিন্ত্ত এই চিত্রনাট্য যাঁরা লিখেছেন তাঁদের নোবেল দেওয়া উচিৎ৷”
সন্দেশখালি থেকে বোমার পাশাপাশি উদ্ধার হয়েছে বিদেশী অস্ত্রও৷ এ প্রসঙ্গে কুনাল বলেন, “যদি বিদেশী বোমা বা অস্ত্র পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে অমিত শাহের বিএসএফ ব্যর্থ সীমান্তে সুরক্ষা দিতে৷” এই প্রসঙ্গেই পুলওয়ামার ঘটনা কে টেনে এনেছেন অরূপ৷ পুলওয়ামায় কেন এনএসজির এই রোবোটিক ডিভাইস ব্যবহৃত হয়নি সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি৷ অরূপ বলেন, “সন্দেশখালিতে এনএসজি -এর রোবোটিক ডিভাইস সন্দেশ না মৌরলা মাছ খেতে এসেছিলো তা বাংলার মানুষ দেখেছে৷ কিন্ত্ত পুলওয়ামা ঘটনার সময় কি সে চা খেতে গেছিলো? সেই সময় ওই রোবোটিক ডিভাইসকে কাজে লাগানো হলে হয়তো আমাদের জওয়ানরা অকালে মৃতু্য বরণ করতেন না৷”