• facebook
  • twitter
Sunday, 8 September, 2024

বিজেপি ভোট চাইছে রামের নামে, সংসদে যাচ্ছে রাবণরা: অভিষেক

প্রশান্ত দাস: প্রাক্তন বিচারপতি তথা তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে করা কুমন্তব্য ঘিরে বর্তমানে উত্তাল বঙ্গীয় রাজনীতি৷ এবার তমলুকের মাটিতে দাঁড়িয়েই অভিজিতের মন্তব্যের স্পষ্ট জবাব দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ একই সাথে বিঁধলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও৷ উল্লেখ্য, শুক্রের দুপুরে ষষ্ঠ দফার নির্বাচনকে টার্গেট করে জোড়া কর্মসূচী ছিল অভিষেকের৷ হুগলির

প্রশান্ত দাস: প্রাক্তন বিচারপতি তথা তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে করা কুমন্তব্য ঘিরে বর্তমানে উত্তাল বঙ্গীয় রাজনীতি৷ এবার তমলুকের মাটিতে দাঁড়িয়েই অভিজিতের মন্তব্যের স্পষ্ট জবাব দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ একই সাথে বিঁধলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও৷ উল্লেখ্য, শুক্রের দুপুরে ষষ্ঠ দফার নির্বাচনকে টার্গেট করে জোড়া কর্মসূচী ছিল অভিষেকের৷ হুগলির প্রার্থী রচনা বন্দোপাধ্যায়ের সমর্থনে আয়োজিত জনসভা এবং তমলুকের প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যের সমর্থনে আয়োজিত রোডশো থেকে দফায় দফায় অভিষেক আক্রমণ শানান বিজেপিকে৷ তমলুকের মাটিতে দাঁড়িয়ে বিজেপি প্রার্থী অভিজিতের প্রশ্নের জবাব দিয়ে যুবরাজ গর্জে উঠে বলেন, “আমি আজ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দাম বলতে এসেছি৷ ” অভিষেক বলেন, “অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দাম জিজ্ঞেস করেছেন? যেই মমতা বন্দোপাধ্যায় লক্ষাধিক মা, বোনেদের লক্ষীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, বিনামূল্যে রেশন পৌঁছে দেন, সেই মহিলাকে কখনও দিলীপ ঘোষ পিতৃ পরিচয় আর কখনও তমলুকের প্রার্থী দাম জিজ্ঞেস করছেন! আমি আজ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দাম বলতে এসেছি৷ ” এরপরই তিনি একটি ছবি দেখান যেখানে দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মাথানত করে প্রণাম জানাচ্ছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়কে৷ সেই ছবি দেখিয়ে অভিষেক বলেন, “এটাই মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দাম৷ তুমি যাঁর টিকি ধরে রাজনীতি করো তিনি মাথা নিচু করে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে প্রণাম করেন৷ এটি বাংলার দশ কোটি মানুষের দাম৷ প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করো মমতা বন্দোপাধ্যায়ের রেট কী, দশ বছরে কিনতে পারেননি তারপর মাথানত করে প্রণাম করছেন৷ আপনার দাম তো সবাই জানে, বিজেপির তমলুকের টিকিট! এই প্রাক্তন বিচারপতি, বিজেপি আর সিপিএমের কথায় মানুষের চাকরি খেয়েছেন৷ উনি একটা কথা ঠিক বলেছেন, ওঁনাদের লড়াই সিপিএমের সঙ্গে৷ দু’নম্বরীদের লড়াই, তৃণমূল তো এক নম্বরে জিতে রয়েছে৷”

অভিজিৎকে ‘দেশদ্রোহী’ বলে কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, “আমার ভাবতে লজ্জা হয়, এই তমলুকের মাটিতে বিজেপি এমন একজন প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েছে যিনি কেবল বাংলা বিরোধী নন, দেশদ্রোহী৷ যে ভদ্রলোক নাথুরাম গডসে এবং গান্ধিজির মধ্যে একজনকে বেছে নিতে ইতস্তত বোধ করেন, তাঁর থেকে বড় দেশদ্রোহী কেউ হতে পারেন না৷ যে তমলুক থেকে পাঁচবারের সাংসদ হয়েছিলেন সর্বাধিনায়ক সতীশ সামন্ত, সেই তমলুক থেকেই বিজেপি একজন দেশদ্রোহীকে দাঁড় করিয়েছে! তাম্রলিপ্ত সরকারকে ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন বিজেপির পূর্বসূরী শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি৷ ওঁনার দলের হয়ে যিনি ভোট চাইতে আসছেন, তিনি চার তারিখের পর যেন তমলুকে ঢুকতে না পারেন এমন ভাষায় আপনাদের জবাব দিতে হবে৷” এদিন নাম না করে শুভেন্দুকে আক্রমণ শানিয়ে অভিষেক বলেন, “এই মেদিনীপুরের সন্তান (শুভেন্দু) নরেন্দ্র মোদিকে মোদিজি, অমিত শাহকে অমিতজি, হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে হিমন্তজি আর মমতা বন্দোপাধ্যায়কে বলেন মমতা৷ এঁদের জবাব দেবেন না?” শুভেন্দুকে উদ্দেশ করে তাঁর আরও সংযোজন, “নিজের পিঠ বাঁচাতে এবং ইডি, সিবিআই থেকে বাঁচতে মেদিনীপুরের মাটিকে বিক্রি করতে চেয়েছেন৷ আমরা শুভেন্দু অধিকারী, অভিজিৎ গাঙ্গুলী সবার দাম জানি৷ দাম তো পণ্যের হয়! আপনারা কি ভেবেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টাকার বিনিময়ে কিনবেন?” শুভেন্দু অধিকারীর নারীদের উদ্দেশ্যে করা কুমন্তব্যের একটি অডিও ক্লিপ শুনিয়ে অভিষেক জনসাধারণের কাছে জানতে চান, “নর্দমাটা কে? ব্লিচিং আর ফিনাইলটা কোথায় দিতে হবে? তিনি কথায় কথায় বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ নাকি ফিনাইল দিয়ে পরিষ্কার করবেন৷

মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এই ভাষা শুনেছেন কখনও?” পাশাপাশি তমলুক থেকে ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’ শুভেন্দুকে৷ রিপোর্ট কার্ড নিয়ে লড়াইয়ে নামার আহ্বান শুভেন্দুকে৷ তৃণমূল সেনাপতির ভাষায়, “যদি শুভেন্দু প্রমাণ করতে পারেন ২০২১-এর পর দশ পয়সা আবাসের জন্য তাঁর দল দিয়েছে তাহলে আমি আপনাদের কাছে এক এক জনের বাড়ি গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে আজকের বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে আসবো৷” সিপিএমকেও আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, “বিজেপি আর সিপিএমের আতাঁত দেখেছেন তো? শুভেন্দুর বিরুদ্ধে হওয়া মামলা লড়ছিলেন সিপিএমের বিকাশ ভট্টাচার্য৷ আর এই অভিজিৎ গাঙ্গুলী বলেন, তিনি নাকি কাজ শিখেছেন এই বিকাশ ভট্টাচার্যের কাছে৷ দুই এবং তিন নম্বরে থাকার বোঝাপড়া এদের মধ্যে৷”

আক্রমণ শানাতে ছাড়েননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও৷ অভিষেক এদিন বলেন, “মিথ্যে কথা বললেও তো একতা রাখা উচিৎ৷ অমিত শাহ বলছেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে একশো টাকা বাড়াবেন, আবার শুভেন্দু বলছেন ৩০০০ টাকা করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেবেন৷ তোমাদের ক্ষমতাধীন একটা রাজ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আগে করে দেখাও!” স্মৃতিচারণা করে যুবরাজ বলেন, “যেই অমিত শাহ এই মাটির বীরসন্তান বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি ভেঙেছিলেন, সেই অমিত শাহের পদলেহন করে যে বিজেপিতে যোগদান করে বাংলার মাটিকে দিল্লির কাছে বিক্রি করেছে তাঁকে যোগ্য জবাব দেওয়ার লড়াই এই নির্বাচন৷”
হুগলির ধনিয়াখালীতে আয়োজিত জনসভা থেকে হুগলির বিদায়ী সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে দফায় দফায় আক্রমণ করেছেন অভিষেক৷ মঞ্চ থেকে লকেটকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, “চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সৎসাহস দেখান৷ এই হুগলি লোকসভার যে কোনো বুথে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে একটি সভার আয়োজন করুন৷ রিপোর্ট কার্ড নিয়ে লড়াই হবে৷ যদি তথ্য পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে দেখাতে পারেন গত পাঁচ বছরে বাড়তি দশ পয়সার কোনও উন্নয়নমূলক কর্মসূচী এই হুগলির মানুষের জন্য করেছেন, তাহলে আমি ভোট চাইতে যাবো না৷ ১০-০ গোল দিয়ে মাঠের বাইরে বার করে না দিতে পারলে আমার নাম অভিষেক বন্দোপাধ্যায় নয়৷” পাশাপাশি রচনার সমর্থনে ভোট চেয়ে কটাক্ষের সুরে অভিষেক বলেন, “লকেটকে প্যাকেট করে পাঠাবেন হুগলি থেকে৷” অভিষেকের মন্তব্য, “২০১৯-এ লকেট চ্যাটার্জীকে জিতিয়েছিলেন সেকারণেই আজ আপনাদের আবাসের টাকা, একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ৷ এবারও তাঁকে জেতালে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেবেন৷” ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে হুগলি থেকে বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়ে অভিষেক বলেন, “বিজেপি নিজেকে হিন্দুধর্মের রক্ষাকর্তা বলে পরিচয় দেয়৷ আপনি শুনে রাখুন, ভারতে যেসব সংস্থা গরুর মাংস কেটে বিদেশে রপ্তানি করে, তাদের থেকে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি চাঁদা নিয়েছে যে রাজনৈতিক দল তার নাম বিজেপি৷” পাশাপাশি, বাংলার রাজ্যপাল, প্রজ্বল রেভান্না, ব্রিজভূষণ সিংয়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “রামের নামে ভোট চেয়ে রাবণদের সংসদে পাঠিয়ে আপনাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে এই বিজেপি৷”