বিজেপি-বিদায় নিশ্চিত: মমতা

শেষ প্রচারে হাঁটলেন ১২ কিলোমিটার

নিজস্ব প্রতিনিধি — কতটা পথ হাঁটলে তবে পথিক হওয়া যায়? সে উত্তর ক’জন পেয়েছে জানা নেই? কিন্ত্ত যদি প্রশ্ন করা যায়, কতটা পথ হাঁটলে তবে নেত্রী হওয়া যায়? উত্তরটা বোধহয় দিতে পারেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মার্চ মাসের শেষ থেকে তিনি চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের জন্য পথসভা আর জনসভা করতে শুরু করেছিলেন৷ সেই সূত্রে এবারের লোকসভা নির্বাচনের জন্য ১০৭তম প্রচারযাত্রা শেষ করলেন বৃহস্পতিবার, বিকেল পাঁচটার মধ্যে৷ লোকসভা নির্বাচনী শেষ প্রচারের দিনে মহানগরীর মেগা রোড শো’তে একটানা ১২ কিলোমিটার পথ হাঁটলেন মমতা৷ সেখানেই প্রত্যয়ের সঙ্গে বার্তা দিলেন, ঠিকমতো গণনা হলে বিজেপি আর ফিরছে না৷

জনসংযোগের জন্য পথ হাঁটার ট্র্যাডিশানে এবার প্রায় রেকর্ড করে ফেলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এমনকী তৃণমূলের সর্বভারতীয় নেতা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বহু পথসভা করেছেন এবারের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের জন্য৷ চষে বেড়িয়েছেন বাংলার উত্তর থেকে দক্ষিণে৷ কিন্ত্ত সংখ্যার বিচারে মমতা তাদের পেছনে ফলে এগিয়ে গিয়েছেন অনেকটাই৷


বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটে নাগাদ যাদবপুর সংলগ্ন সুকান্ত সেতুর চারমাথা মোড় থেকে প.দযাত্রা শুরু করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ সঙ্গে তখন কৃষ্ণনগরের প্রার্থী মহুয়া মৈত্র, যাদবপুরের প্রার্থী সায়নী ঘোষ, ফিরহাদ হাকিম, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, দেবাশিস কুমার এবং তৃণমূলের বহু নেতৃবৃন্দ৷ যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র নিয়ে বরাবরই আবেগপ্রবণ মমতা৷ ১৯৮৪ সালে যাদবপুরেই তিনি প্রথম লোকসভা ভোটে প্রার্থী হয়ে দাঁ‌ি.ড়য়েছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে৷ এবং জয়লাভও করেছিলন৷ এদিনও মমতা বললেন, যাদবপুর তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মভূমি৷ পদযাত্রার শুরুতেই মাইক হাতে তুলে নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তারপর প্রত্যয়ের সুরে বলেন, সব ঠিক থাকলে, গণনা ঠিকমতো হলে বিজেপি আর ক্ষমতায় আসছে না৷ এরপর মোদিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, এত মিথ্যে কথা বলতে আগে কোনও প্রধানমন্ত্রীকে দেখিনি৷
এরপর নরেন্দ্র মোদির বিবেকানন্দ রকে ধ্যান করা নিয়ে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, আবার দেখবেন প্রচার শেষ হলেই কোথাও না কোথাও ধ্যানে বসে পড়ছেন৷ ভোট শেষ হওয়ার আগেই এইভাবে মোদির ধ্যান করায় নির্বাচনী বিধিভঙ্গের যুক্তি দিয়ে ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে৷ কন্যাকুমারীতে বিবেকানন্দ রকে ধ্যান করা নিয়ে সোস্যাল মিডিয়াতেও বহু মিম ঘুরেছে৷ এইভাবে ‘রক কালচার’কে মোদি ফিরিয়ে আনছেন বলেও ব্যঙ্গ করা হয়েছে৷

বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ফতোয়া দিলেন, ধ্যান করবেন তো করুন৷ তার জন্য ক্যামেরা নিয়ে ঘোরা কেন? ধ্যান উনি (মোদি) করতেই পারেন, কিন্ত্ত তা যেন প্রচারমাধ্যমে দেখানো না হয়৷ তৃণমূল নেত্রী বলেন, আমরা চেয়ারকে সম্মান করি, কিন্ত্ত উনি তো চেয়ারকেও কেয়ার করেন না৷ এরপরই তিনি আওয়াজ তোলেন মোদি যাক, দেশ থাক৷ মোদি যাক, সংবিধান থাক৷

নির্বাচনী প্রচারের মধ্যেই রিমেল হানায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দরবন এবং সংলগ্ন এলাকা৷ মমতা জানান, ৪৬ লক্ষ লোককে আগেই রিলিফ শেল্টারে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল৷ ইতিমধ্যে তাঁদের অনেকে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন৷ মমতা জানিয়ে দেন যাঁদের ফসলের ক্ষতি হয়েছে তাদেরও সাহায্য করা হবে৷ ভোট মিটলেই বিধ্বস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে৷ মমতা এদিন জানান, উদ্বাস্ত্ত কলোনির উন্নয়নে ৯৯ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে৷ মমতা অভিযোগ করেন, বিপদের দিনে বিজেপি মানুষের পাশে দাঁড়ায় না৷

এবারের নির্বাচনের ভোটগণনা নিয়েও একটি সংশয় প্রকাশ করে দলীয় সমর্থকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কাউন্টিংয়ের প্রথমটা দেখেই কেউ চিন্তা করবেন না৷ নির্বাচন কমিশনকে সম্মান জানিয়েই বলছি, যে কেন্দ্রগুলিতে বিজেপির এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা কমিশন প্রথমে সেই কেন্দ্রগুলিই কাউন্টিং করবেন৷ এতে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই৷ সবসময় হাসিমুখে কজ করবেন- দলীয় কর্মীদের এভাবেই প্রচারের শেষ দিনে বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

এদিন সুকান্ত সেতু থেকে গোপালনগর পর্যন্ত ১২ কিলেমিটার পথ হাঁটেন তৃণমূল নেত্রী৷ যাদবপুরের প্রার্থী সায়নী ঘোষ এবং কলকাতা দক্ষিণের প্রার্থী মালা রায়ের সমর্থনে এই পথযাত্রা করেন নেত্রী৷ সুকান্ত সেতু থেকে বালিগঞ্জ ফাঁড়ি হয়ে ল্যন্ডসডাউন রোড৷ সেখান থেকে পদ্মপুকুর, যদুবাবুর বাজার হয়ে হরিশ মুখার্জি রোডে পেঁৗছয় মিছিল৷ মমতাকে দেখে রাস্তার দু’ধারে অসংখ্য মাুনষ ভিড় জমান, হাত নাড়েন, এগিয়ে আসেন সেলফি তুলতে৷ শিশুরাও এগিয়ে এসেছিল৷ মিছিলে হাঁটতে মমতা হাত নেড়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন, অনেকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, শিশুদের ডেকে আদর করেছেন৷