নিজস্ব সংবাদদাতা, ২০ জুন: ভোট মিটতেই রাজ্য রাজনীতির শিরোনামে উঠে আসছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবার। এই লোকসভা কেন্দ্রকে ঘিরেই বঙ্গ বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হচ্ছে। ডায়মন্ড হারবারের পদ্মপ্রার্থী অভিজিৎ দাস ওরফে ববি-কে বুধবারই একাধিক কারণে শোকজ করা হয়েছে রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট দলের তরফ থেকে। এই আবহে মুখ খুলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বুধে অভিজিৎকে শোকজের পর বৃহস্পতিতেই এই বিতর্ক থেকে দূরত্ব তৈরি করলেন শুভেন্দু।
এদিন সংবাদমাধ্যমকে শুভেন্দু জানিয়ে দেন, অভিজিৎকে আদালতে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া এবং তাঁকে শোকজের চিঠি পাঠানো, এই দুটি বিষয়ের মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। এরপর বৃহস্পতিবারই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে তোপ দেগে তাঁর পাল্টা জবাব দেন রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা প্রাক্তন সাংসদ কুনাল ঘোষ। কুনাল বলেন, “ডায়মন্ড হারবারে রেকর্ড ভোটে জিতেছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। সেটি সহ্য করতে না পেরেই কুৎসা করছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা অন্যান্য বিজেপি নেতারা। এগুলি ছেলেমানুষি! ভিত্তিহীন অভিযোগ। তাঁরা বলছেন, ভোটের বাক্সে নাকি অন্য চিহ্নের উপর টেপ মারা ছিল। এতো মানুষ অভিষেক বন্দোপাধ্যায় কে ভোট দিয়েছেন, তাঁরা এসব শুনলে হাসবেন। এতে বিজেপির আরও ক্ষতি হচ্ছে।”
কুনালের আরও সংযোজন, “যিনি বিজেপির প্রার্থী তিনি পর্যন্ত এই অভিযোগ করেননি। আজ নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বিজেপির নেতারা এইসব অভিযোগ করছেন। তাঁরা তো নিজেদের প্রার্থীকেই দল থেকে কিভাবে কোনঠাসা করা যায় সেই আয়োজন করেছেন। আমরা তো বলেছি, যাঁরা অভিষেক-ফোবিয়ায় ভোগেন তাঁদের অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতা হলো না কেন? বিজেপির বড়ো নেতারা লড়লেন না কেন? সিপিএমের মহম্মদ সেলিম ডায়মন্ড হারবার থেকে কেন লড়লেন না? অভিষেক বন্দোপাধ্যায় কে মানুষ উজাড় করে ভোট দিয়েছেন। তাই মানসিক অবসাদ থেকে বিজেপি নেতারা ভুলভাল কথা বলছেন!”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শেষ দফায় নির্বাচন ছিল ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে। ব্যাপক কারচুপির মধ্য দিয়ে ওই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, এমনই অভিযোগ বিজেপির। যদিও তাঁদের অভিযোগ যে নিতান্তই ভিত্তিহীন, তা প্রমাণিত হয়েছে ওই কেন্দ্রের বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বিজেপিরই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল কে কেন্দ্র করে প্রদর্শিত বিক্ষোভের মধ্য দিয়েই। এবারের নির্বাচনে অভিষেক সাত লাখের বেশি লিড নিয়ে জিতেছেন। এরপরেই ওই এলাকায় ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে। অন্যদিকে ওই লোকসভা আসনে ভোটে নানা ভাবে কারচুপির অভিযোগ তোলার পাশাপাশি প্রার্থী অভিজিৎকে আদালতে মামলা করার পরামর্শও দেন শুভেন্দু।
তবে তাঁর সঙ্গে অভিজিৎকে শোকজ করার কোনও যোগ নেই দাবি করে শুভেন্দু বলেন, “দুটো সম্পূর্ণ পৃথক বিষয়। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে বিক্ষোভ দেখানো, শোকজের চিঠি এগুলো সাংগঠনিক বিষয়। আমি সেটা নিয়ে কিছু বলতে পারব না।” এরপরই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন ওঠে, অভিজিৎ কে যিনি আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, তিনিই কেন এই বিতর্ক থেকে এখন দূরত্ব তৈরি করতে চাইছেন? ববি বিভিন্ন মহলে দাবি করেন, শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশে তিনি ডায়মন্ড হারবার আসনে ভোটে কারচুপির অভিযোগ নিয়ে যখন আদালতে যাওয়ার তোড়জোড় করছেন, তখনই তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এই আবহেই বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হলেন কুনাল। নিজেদের সাংগঠনিক ব্যর্থতা ঢাকতেই বিজেপি আঙ্গুল তুলছে তৃণমূলের দিকে, স্পষ্ট দাবি কুনালের। জনসমর্থন না থাকলে সাত লক্ষের বেশি লিড নিয়ে কোনো প্রার্থীর জেতা, স্বাভাবিক ভাবেই অসম্ভব। তাই এক্ষেত্রে বিজেপির অভিযোগ ‘ছেলেমানুষি’ ব্যতিত আর কিছু নয়, তা বুঝিয়ে দিলেন কুনাল।