৪ জুনের পর দেশে বড় ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প’ আসতে চলেছে: মোদী

কলকাতা, ২৯ মে:  গতকাল মঙ্গলবার কলকাতায় প্রথমবার রোড শো করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর আজ মথুরাপুর কেন্দ্রে ভোট প্রচারে গিয়ে বড়সড় মন্তব্য করলেন মোদী। তিনি আজও তৃণমূলের বিরুদ্ধে একাধিক বিষয়ে আক্রমণের পাশাপাশি বড়সড় পরিবর্তনের আভাস দিলেন। কাকদ্বীপের জনসভায় বলেন, ৪ জুনের পর তুষ্টিকরণ রুখতে দেশে বড়সড় রাজনৈতিক ভূমিকম্প হবে। শুধু তাই নয়, তিনি পূর্বাভাস দেন, এই ৪ জুন ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর আগামী ৬ মাস দেশে বড়সড় ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প’ আসতে চলেছে।

আগামী ১ জুন সপ্তম দফার ভোট। আর ঠিক সেই শেষ দফার ভোটের আগের প্রচারে মোদির এই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট জল্পনা বাড়িয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, লোকসভা ভোটের পর মোদী তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলে দেশ তথা রাজ্যের দুর্নীতি নিয়ে বড়সড় পদক্ষেপ নিতে চলেছেন। আর সেই আশঙ্কা যদি সত্যি হয়, তাহলে এরাজ্যের সরকার ফেলে দেওয়ার জন্য আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে পড়তে পারে মোদী ও অমিত শাহের গেরুয়া শিবির। শুরু হতে পারে দল ভাঙানোর খেলা অথবা দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে রাজ্য সরকারকে সাংবিধানিক প্যাঁচে ফেলার মতো জটিল রাজনীতি। এমনটাই ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। কারণ, মোদী এদিন বলেছেন, ‘৪ জুনের পর তৃণমূলের হাওয়া বেরিয়ে যাবে।’

আজ মথুরাপুর কেন্দ্রের লোকসভা ভোটের প্রচারের জন্য কাকদ্বীপের জনসভায় মোদী রাজ্যের তৃণমূল সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। মূলত বাংলায় আরও বড় জয়ের আশায় তৃণমূলকে নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি একের পর তৃণমূল সরকারের দুর্নীতির সমালোচনা করেন। তিনি রাজ্যের ওবিসি শংসাপত্র থেকে শুরু করে সাধু সন্তদের ওপর আক্রমণের অভিযোগ তুলে তৃণমূলকে নিশানা করেন। বলেন, “তৃণমূলের একটাই এজেন্ডা। ওদের সব কিছুতে কাটমানি চাই। তৃণমূল বাংলার পরিচয় নষ্ট করতে চাইছে। সাধু সন্ন্যাসীদেরও ছাড়ছে না। তৃণমূল ইস্কন, রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মতো সংস্থাকেও গালি দিচ্ছে। তৃণমূলের গুন্ডারা মঠে হামলা করছে। রামমন্দির আমাদের আস্থার কেন্দ্র। তৃণমূলের লোক রামমন্দিরকে অপবিত্র বলে। এইরকম তৃণমূল বাংলার সংস্কৃতি রক্ষা করতে পারবে না। তৃণমূল তুষ্টিকরণের জন্য দেশের সংবিধানেও হামলা করছে।”


প্রসঙ্গত সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট তৃণমূল জমানায় অনুমোদন করা সব ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে দিয়েছে। যেটা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা অনেকদূর গড়িয়েছে। মোদী সহ অন্যান্য বিজেপি নেতারা ভোট প্রচারের সময় দেশজুড়ে সেটার প্রচার করে ইন্ডিয়া জোটকে কাঠগড়ায় তুলেছে। এবার বাংলায় এসেও সেটা নিয়ে তৃণমূলকে একহাত নেন মোদী। যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, তিনি এই নির্দেশ মানবেন না। আর সেটাকেই হাতিয়ার করেছে বিজেপি। বিষয়টি নিয়ে মেরুকরণের অভিযোগ তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

এবিষয়ে আজ মথুরাপুরের সভা থেকে মোদী বলেন,“তৃণমূল তুষ্টিকরণের জন্য দেশের সংবিধানেও হামলা করছে। আমাদের সংবিধানে দলিত, পিছিয়ে থাকাদের জন্য সংরক্ষণ দিয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের আমলে সেই সংরক্ষণেও লুঠ হচ্ছে। মুসলমানদের ওবিসি সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। অনগ্রসর শ্রেণির মানুষদের অধিকার ছিনিয়ে মুসলিমদের ওবিসি সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। কলকাতা হাইকোর্ট এই শংসাপত্র বাতিল করে দিয়েছে। তৃণমূল এই নির্দেশ অমান্য করতে পারে না। মুসলমানদের মিথ্যা বলছে। ভুল রটাচ্ছে। একবার ভাবুন তুষ্টিকরণের জন্য এরা কোন সীমায় পৌঁছাতে পারে?”

মোদী বলেন,“তৃণমূল এবং ইন্ডিয়া জোট বাংলাকে উলটো পথে নিয়ে যাচ্ছে। বিজেপির প্রতি বাংলার ভালোবাসা তৃণমূল সহ্য করতে পারছে না। সেই জন্য ওরা খেপে গিয়েছে। কী সব বলে। বাংলার প্রতি তৃণমূলের ঘৃণা দেখতে পাওয়া যায়। ওদের কাছে একটাই অস্ত্র, এটা হতে দেবে না। বিকাশের জন্য মোদি যা করে, তৃণমূল বলে সেটা হতে দেবে না।”

এছাড়া কাটমানির অভিযোগ তুলেও তৃণমূলকে তোপ দাগেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা সত্তরোর্ধ্বদের জন্য আয়ুষ্মান প্রকল্প এনেছি। কিন্তু তৃণমূল বলছে, বাংলায় হতে দেবে না। কেন্দ্র সরকার মৎস্যজীবীদের এত যোজনা চালাচ্ছে। কত টাকা দিয়েছি। কিন্তু তৃণমূল সেই সব যোজনা হতে দেয়নি। তৃণমূলের মানুষের জন্য কোনও সহানুভূতি নেই। শুধু ওদের তোলাবাজ এবং কাটমানি নিয়েই যত ভাবনা। তৃণমূলকে কি সাজা দেবেন না? মথুরাপুরে নদী কাটা বন্ধ করতে কেন্দ্র টাকা পাঠায়। তৃণমূল সেই টাকা খেয়ে নিয়েছে। তৃণমূলের সব কাজে কাটমানি চাই। বাচ্চাদের মিডডে মিলেও কাটমানি চাই ওদের।”

সবশেষে যে বিষয়টি বারবার উঠে আসছে, সেটা হল, মোদী বলেছেন, তুষ্টিকরণের রাজনীতি বন্ধ করার জন্য ভোটের পর বড় পদক্ষেপ করবে কেন্দ্র সরকার। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, সেই পদক্ষেপগুলি কী কী হতে পারে? তাহলে কি মোদী সরকার রাজ্যের জনকল্যাণমুখী প্রকল্প লক্ষ্মীভাণ্ডার, স্বাস্থ্য সাথী, সবুজ সাথী বন্ধ করে দেবে? সেটা করতে হলে কিন্তু মোদী সরকারকে সাংবিধানিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হবে। নিতে হবে বড় কোনও সিদ্ধান্ত। এই প্রশ্নগুলি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।