নরেন্দ্র মোদির কাছে এবারের নির্বাচনী লড়াই যেন ‘কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ’৷ প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে এই যুদ্ধে তাঁর দুই সেনাপতি অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগী এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা৷ আদিত্যনাথ বললেন, ‘রামলালা কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসা বরদাস্ত করবে না৷’ আর হিমন্তবিশ্ব শর্মা বললেন, ‘এবার মোল্লা বানানোর দোকান বন্ধ করে দেব৷’ সংবিধান বদলের ষড়যন্ত্র নিয়ে যখন গোটা দেশই শঙ্কিত, তখন বিষ-ভাষণে পটু হিমন্তবিশ্ব কোনও রাখঢাক না রেখেই বলে গেলেন, ‘মোদিজির ৪০০ আসন দরকার৷ তাহলেই আমরা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আনবো, কৃষ্ণ জন্মভূমি বানাবো, আমাদের জ্ঞানব্যাপী বানাতে হবে, মুসলিমদের সংরক্ষণ খতম করতে হবে৷’ মোদি ও তাঁর দলের নেতাদের বিষ-ভাষণ নিয়ে নির্বাচন কমিশন বরাবরের মতোই চুপ৷ আর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বুঝেই লাগামছাড়া কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের অন্যতম সেনানি৷ তাঁর কথায়, ‘এটা লালুপ্রসাদ যাদবের ভারত নয়, এটা মোদির ভারত, এটা আমাদের ভারত, হিন্দুদের ভারত৷ এই নতুন ভারতে যাঁরাই মুখ খুলবে, তাঁরা যমের দুয়ারে পৌঁছে যাবে৷ মোল্লা বানানোর দোকান বন্ধ করব৷’
প্রতিদিনই নিজের রেকর্ড ভাঙছেন নরেন্দ্র মোদি৷ পরিস্থিতি খারাপ দেখে কখনও বলছেন, ‘সংকল্প করছি হিন্দু-মুসলমান করব না৷’ আবার পরদিনই বলছেন, ‘কংগ্রেস আর সমাজবাদী পার্টি ভোটে জিতলে বুলডোজার চালিয়ে রামমন্দির ধ্বংস করে দেবে৷’ সেনাপতি আদিত্যনাথ যোগী বলছেন, ‘এই যুদ্ধ রামভক্ত আর রামদ্রোহীর মধ্যে৷’ আর কুরুক্ষেত্রের মাটিতে মোদি বলছেন, ‘এই লড়াই উন্নয়ন বনাম অন্যদের ভোট জিহাদের৷’
প্রথম দফা ভোট গ্রহণের পর থেকেই তাল কাটছিল৷ ‘আব কি বার চারশো পার’ স্লোগান অনেক আগেই ঠান্ডা ঘরে চলে গিয়েছিল৷ তারপর থেকেই মুসলিম, সংরক্ষণ, মঙ্গলসূত্র, মন্দিরে তালা ইতাদি নানান বিষোার চলে আসছে মোদির মুখে৷
নিজের মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে নতুন নতুন মিথ্যা বলে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি৷ হরিয়ানার এক সভায় বললেন, ‘ওরা বলছে, কাশ্মীরে ৩৭০ ফেরাবে৷’ কংগ্রেস বা বিরোধী দলের কারও তরফে এমন কোনও দাবি বা সম্ভাবনার কথা যদিও আদৌ বলা হয়নি৷ জম্মু-কাশ্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার কথা সকলেই বলছে৷ মোদির তাতে কী এসে যায়? জিগির তুলতে অকপটেই বলে দিলেন, ‘কাশ্মীরে ৩৭০ ফেরানোর খোয়াব ভুলে যান৷’ তাঁর হুমকি, ‘লেনে কে দেনে পড় জায়েঙ্গে৷ ধারা ৩৭০ কি দিওয়ার হামকো কবিরস্তান মে গড় দিয়া হ্যায়৷’
প্রধানমন্ত্রী যখন এমন বিষ-প্রচারে ব্যস্ত তখন আদিত্যনাথ তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বিষ-ভাষণেই ভোট ভিক্ষা করে চলেছেন৷ মুম্বই উত্তর-মধ্য কেন্দ্রে ২৬/১১ মুম্বই হামলার স্মৃতি উসকে দিয়ে বিভাজনের অঙ্কে বিজেপি এখানে ওই মামলার আইনজীবী উজ্জ্বল নিকমকে প্রার্থী করেছে৷ সেখানে ভাষণ দিতে গিয়ে আদিত্যনাথ টেনে আনলেন রামলালাকে৷ বললেন, রামমন্দির তৈরি হওয়ায় ভেঙে পড়েছে কংগ্রেস সহ বিরোধীরা৷ এই ভোট ‘রামভক্ত’ আর ‘রামদ্রোহী’র লড়াই৷ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, রামভক্তরাই হলো রাষ্ট্রভক্ত৷ ওরাই ভারতের মানুষের জন্য কাজ করবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে৷ রামলালা কোনওভাবেই কংগ্রেসকে ক্ষমতায় আসতে দেবে না বলে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস৷
যোগীর কথা শুনে মনে হচ্ছে, ভোট দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ, আর ফলাফল ঠিক করে দেবে রামলালা৷