গোরুপাচার মামলায় সুপ্রিমকোর্টে জামিন অনুব্রতের

জেলমুক্তি না ঘটা পর্যন্ত দলীয় কর্মীদের নিশ্চুপ থাকার নির্দেশ নেতৃত্বের

খায়রুল আনাম: মঙ্গলে মঙ্গলবার্তা। কিন্তু কোনও উচ্ছ্বাস প্রকাশ না করে দলীয় কর্মীদের নিশ্চুপ থাকার নির্দেশ দিলেন দলের বীরভূম জেলা নেতৃত্ব। মঙ্গলবার ৩০ জুলাই দিল্লির সুপ্রিমকোর্ট কয়েকটি শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে গোরুপাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি থাকা বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট মণ্ডলের জামিন মঞ্জুর করার খবর সামনে আসতেই জেলায় দলীয় কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় উল্লাস-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। অনেক জায়গায় সবুজ আবিরও ওড়ানো হয়। তাঁরা মনে করেছিলেন, তাঁদের প্রিয় কেষ্টদা তাঁদের মধ্যে চলে আসছেন। জেলায় ফিরে এলে অনুব্রত মণ্ডলকে কোথায় কী ভাবে সম্বর্ধনা দেওয়া হবে, সেই চর্চ্চাও শুরু হয়ে যায়। দলের জেলা কোর কমিটির সদস্য তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি ফায়েজুল হক ওরফে শেখ কাজল জানিয়ে দেন যে, অনুব্রত মণ্ডলকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে। জামিনের খবরে আমরা খুশি। তিনি জেলায় আমাদের অভিভাবক। পঞ্চায়েত ভোট, লোকসভা ভোট টিম অনুব্রত পরিচালনা করেছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোট অনুব্রত মণ্ডলের নেতৃত্বেই হবে।

কিন্তু দেখা যায়, গোরুপাচার মামলায় সুপ্রিমকোর্ট অনুব্রত মণ্ডলের জামিন মঞ্জুর করলেও, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরূপের যে তদন্ত চালাছে তাতে অনুব্রত মণ্ডল জামিন না পাওয়ায় তাঁকে তিহাড় জেলেই থাকতে হচ্ছে। জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে রামপুরহাটের বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার ড. আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, বোলপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, সিউড়ির বিধায়ক তথা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী মনে করেন, সুপ্রিমকোর্টে জামিন পাওয়া মানেই যে অনুব্রত মণ্ডলের জেলমুক্তি ঘটছে তা নয়। কোর কমিটির অপর সদস্য তথা জেলাপরিষদের সভাধিপতি ফায়েজুল হক ওরফে শেখ কাজল যে মন্তব্য করেছেন, তারসাথে তাঁরা সহমত হতে পারেননি।


তাঁরা মনে করেছেন, এই ধরনের মন্তব্যের অর্থ-ই হলো, অনুব্রত মণ্ডল প্রভাবশালী এবং তাঁকে জামিন দেওয়া হলে তিনি তাঁর প্রভাব খাটিয়ে অনেক প্রমাণ ও তথ্য সংগ্রহে বাধা হয়ে উঠবেন বলে যে দাবি ইডি সুপ্রিমকোর্টে করে আসছে, তাকেই সাব্যস্ত করা হবে। অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে তিহাড় জেলে তাঁর একমাত্র মাতৃহীন কন্যা সুকন্যা মণ্ডল এবং প্রাক্তন সরকারি দেহরক্ষী সেহগাল হোসেনও রয়েছেন। এই ধরনের মন্তব্যে তাঁদের জামিনেও প্রতিবন্ধকতা তৈরী হতে পারে। আর তাই দলীয় কর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হয় যে, এখনই কোনও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা যাবে না বা সবুজ আবির আবির খেলা যাবে না।

গোরুপাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিবিআই এগারো বার তলব করা সত্বেও তিনি তাতে সাড়া দেননি। শেষে সিবিআই ২০২২ সালের ১১ আগস্ট বিশাল কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের বোলপুর নীচুপট্টির কালিকাপুরের বাড়ি ঘিরে তাঁকে গ্রেফতার করে আসানসোল জেলে নিয়ে যায়। পরে এই মামলার সাথে ইডি যুক্ত হয়ে অনুব্রত মণ্ডলকে দিল্লি নিয়ে যেতে আইনীপথে যথেষ্ঠ-ই বেগ পেতে হলেও, শেষ পর্যন্ত অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লির তিহাড় জেলে। তার আগেই তাঁর সরকারি দেহরক্ষী সেহগাল হোসেনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো দিল্লির তিহাড় জেলে। কয়েকবার এড়িয়ে গেলেও, শেষ পর্যন্ত সিবিআইয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে অনুব্রত কন্যা সুকন্যা দিল্লি গেলে তাঁকেও গ্রেফতার করে তিহাড় জেলে রাখা হয়েছে। অনুব্রত মণ্ডলের হিসাবরক্ষক মনীশ কোঠারীকে সিবিআই গ্রেফতার করে তিহাড় জেলে নিয়ে গেলেও, পরবর্তীতে তিনি জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। এখন অনুব্রত অনুগামীরা মনে করছেন, তাঁদের কেষ্টদা সিবিআই মামলায় যখন জামিন পেয়েছেন তখন, ইডি-র মামলায় জামিন পেয়ে তাঁর জেলমুক্তি ঘটাটা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।