চলন্ত ট্রেনে বাজারের ব্যাগে শিশুর কান্না, ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে বিরাটি স্টেশনে বিক্ষোভ

সুভাষ পাল, দমদম, ২৬ জুন: বুধবার সাত সকালে শিশু চুরির অভিযোগে বিরাটি স্টেশনে তুলকালাম কান্ড। এই ঘটনায় সকাল আটটা নাগাদ তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। শিশু সহ আটক করা হয় এক অভিযুক্ত মহিলাকে। ঘটনায় বিরাটি স্টেশন সংলগ্ন রেলগেটের মুখে অবরোধ শুরু করেন বিক্ষুব্ধরা। প্রচুর মানুষ রেল লাইনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাঁরা এই ঘটনার তদন্ত দাবি করে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিরাটি স্টেশন চত্বরে রেল পুলিশের বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

জানা গিয়েছে, এদিন সকাল ৮টা নাগাদ ডাউন দত্তপুকুরে লোকালের একটি মহিলা কামরায় এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। একজন মহিলা একটি বড় টুরিস্ট ব্যাগ এবং একটি শপিং ব্যাগ নিয়ে ওই কামরাতে ওঠেন। ট্রেনটি বিশরপাড়া স্টেশনের কাছাকাছি আসতেই ওই শপিং ব্যাগ থেকে একটি শিশুর কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনের অন্যান্য যাত্রীদের নজর পড়ে। তাঁরা লক্ষ্য করেন, একটি শপিং ব্যাগের ভিতর প্রায় বছর খানেকের একটি শিশু জামা কাপড়ে ঢাকা অবস্থায় রয়েছে। সেই ব্যাগের মধ্যে শিশুটিকে উচ্চস্বরে কাঁদতে দেখে মহিলা কামরার ভিতর সমস্ত মহিলারা সজাগ হয়ে ওঠেন। অন্যান্য মহিলা যাত্রীরা বিষয়টি নিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ শুরু করেন। যে মহিলা ওই ব্যাগটি রেখেছিলেন, তাঁকে নিয়ে নানারকম সন্দেহ দানা বাঁধে। যাত্রীরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। মহিলারা তাঁকে ‘শিশু চোর’ সন্দেহে ঘিরে ধরেন। এরকম অবস্থায় ট্রেনটি বিরাটি স্টেশনে পৌঁছলে প্রতিবাদী মহিলাদের হাত থেকে বাঁচতে অভিযুক্ত মহিলাটি পালানোর চেষ্টা করেন। তখন ওই বগির অন্যান্য যাত্রীরা মহিলাটিকে আটক করে শিশু সহ অভিযুক্ত মহিলাকে বিরাটি স্টেশনে কর্তব্যরত রেল পুলিশের হাতে তুলে দেন।

এই ঘটনার পর সময় বিরাটি স্টেশন চত্বরেও যাত্রীদের বিক্ষোভে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। রেল পুলিশের পক্ষ থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে ওঠে। যদিও ততক্ষণে স্থানীয় অন্যান্য রেল পুলিশ ঘটনাস্থলে চলে আসে। ফলে কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। ঘটনা জানাজানি হতেই মুহূর্তে বিরাটি স্টেশন চত্বরে প্রচুর সাধারণ মানুষ ভিড় করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁরা উদ্ধার হওয়া শিশুটির বিষয়ে তদন্ত দাবি করেন। পুলিশ আশ্বাস দিতেই কিছুক্ষণের মধ্যে অবরোধ উঠে যায়। ঘটনার পর বিরাটি স্টেশন চত্বর ও সংলগ্ন রেলগেটের কাছে আরপিএফ-এর বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয়। যাতে নতুন করে কোনও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রেন চলাচলও স্বাভাবিক হয়ে যায়।


সুভাষ মন্ডল নামে একজন ট্রেন যাত্রী বলেন,”শিশুটি ব্যাগের ভিতরেই ছিল। সে কান্না শুরু করার পরে মহিলা কামরার অন্যান্য যাত্রীরা ওই মহিলাকে শিশুটির কান্না থামাতে বলেন। বিরাটি স্টেশনে এলে তাঁকে রেল পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর আমরা রেল অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করি। তবে পরে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।” বিরাটি স্টেশনের একজন ব্যবসায়ী বলেন,”মহিলাটি বাজার করা ব্যাগের মধ্যে করে শিশুটিকে নিয়ে আসছিল। ব্যাগটি মহিলা কামরার সিটের তলায় রাখা ছিল। বিশরপাড়া স্টেশনের কাছে আসতেই শিশুটির কান্নার আওয়াজ পান অন্যান্য মহিলা যাত্রীরা। তাঁরা বিরাটি স্টেশনে এসে শিশু সহ ওই মহিলাকে নামিয়ে নিয়ে রেল পুলিশের হাতে তুলে দেন।”

এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে রেল পুলিশ। রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে ওই মহিলাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত মহিলাটি শিশুটিকে কোথা থেকে নিয়ে আসছিলেন এবং কোথায় নিয়ে যাচ্ছিলেন তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ট্রেনের মধ্যে ব্যাগের ভিতর শিশু উদ্ধার হওয়ায় নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। জেলা জুড়ে শিশু চুরির গুজব যে সত্য, তা অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন। যাত্রীদের দাবি, প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে।