দিল্লি, ৩১ জুলাই: প্রধানমন্ত্রীর পর রেলমন্ত্রী। কথায় কেউ কম যান না। ক্রমাগত রেল দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ এড়িয়ে এবার বুলেট ট্রেনের প্রশংসায় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। কিভাবে রেল দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে, আগামীতে এবিষয়ে রেলমন্ত্রক কী কী পদক্ষেপ নিতে চলেছে, তার বিন্দু বিসর্গ নিয়ে আলোকপাত করলেন না। বরং অন্যভাবে সংসদকে বশে আনার চেষ্টা করলেন।
রেলমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, বুলেট ট্রেনের ৩২০ কিলোমিটার যাত্রাপথে দ্রুত গতিতে কাজ এগোচ্ছে। অশ্বিনী দাবি করেন, ‘‘বুলেট ট্রেন একটি অত্যন্ত জটিল এবং প্রযুক্তিনির্ভর প্রকল্প। যাত্রীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে জাপানি রেলওয়ের সাহায্যে এই প্রকল্পের নকশা তৈরি করা হয়েছে। ভারতের পরিবেশ এবং চাহিদা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে। সমস্ত কাঠামো, রেললাইন, বিদ্যুতের সিগন্যালিং এবং টেলি যোগাযোগের কাজ সম্পন্ন হলে বুলেট ট্রেন চালু করার দিনক্ষণ স্থির করা হবে।’’ তিনি দাবি করেন, এখন সমুদ্রের নিচে ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ চলছে রেল যাতায়াতের জন্য। এছাড়া দেশে বর্তমানে ১০২টি বন্দে ভারত চালু রয়েছে।
প্রসঙ্গত বুধবার লোকসভা অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী। সেখানে তিনি তাঁর ভাষণের সময় দেশে বুলেট ট্রেনের কাজ কতদূর এগিয়েছে, তার বিবরণ দিলেন। বন্দে ভারত প্রসঙ্গেও একাধিক ফিরিস্তি শোনালেন। কিন্তু একের পর এক রেল দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ বেমালুম এড়িয়ে গেলেন অশ্বনী বৈষ্ণব। মঙ্গলবারও ঝাড়খণ্ডে রেল দুর্ঘটনা হয়। হাওড়া থেকে মুম্বইগামী এক্সপ্রেস ঝাড়খণ্ডে লাইনচ্যুত হয়েছে। চক্রধরপুরের কাছে হাওড়া-সিএসএমটি এক্সপ্রেসের অন্তত ১৮টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। সেই দুর্ঘটনায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ২০ জন। ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসেও দুর্ঘটনা ঘটে। ২০২৩ সালে ওড়িশার বাহানগা স্টেশনের কাছে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কামরা উঠে গিয়েছিল একটি মালগাড়ির উপরে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসও। সেই ঘটনায় প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়। দেড় মাস আগে উত্তরবঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সেখানেও বেশ কিছু মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। গত ১৭ জুন ফাঁসিদেওয়ার রাঙাপানির কাছে দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিল শিয়ালদাগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসটি। সেদিন সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ধাক্কা মেরেছিল একটি নিয়ন্ত্রণহীন বেপরোয়া মালগাড়ি। তার জেরে মালগাড়ির লোকো পাইলট-সহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে মালগাড়ির চালকের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়েছিল রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরবর্তীতে সেই তত্ত্ব খারিজ করে দিয়েছেন কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি (সিআরএস)। তদন্তে রেল পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা গাফিলতির কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানানো হয়।
এতসবের পরেও রেলমন্ত্রী মঙ্গলবার ঝাড়খণ্ডের রেল দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে কোনও বাক্যব্যয় করলেন না। তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে রেলের নিরাপত্তা নিয়ে। কিন্তু সেসব এড়িয়ে গিয়ে রেলমন্ত্রী মন্ত্রকের কাজের বিবরণ তুলে ধরেন। এদিন অশ্বিনী আরও বলেন, ‘‘মহারাষ্ট্রের অংশে বুলেট ট্রেনের কাজ কিছুটা বাধা পেয়েছিল। তাই সেখানে কাজ এগোতে দেরি হয়েছে।” কিন্তু সেখানে ২০২২ সালে মহারাষ্ট্রে বিজেপি-শিবসেনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফের রেলের এই নতুন প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগোতে শুরু করেছে। তিনি দাবি করেন, প্রাথমিকভাবে বুলেট ট্রেনের কাজ জাপানের প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হলেও দেশেই এখন এইসব প্রযুক্তির কাজ ব্যাপকভাবে হচ্ছে।