• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলতে জুনিয়র ডাক্তারদের ধরনা মঞ্চে হামলার ছক, অভিযোগ কুণালের, গ্রেপ্তার ১

এক জুনিয়র ডাক্তারের প্রশ্ন, 'যদি কোনও হামলার ছক হয়ে থাকে তবে তা আটকানোর দায়িত্ব কার? ৪ আগস্ট যে হামলা হয়েছিল, সেই হামলার দায় স্বীকার কি কেউ করেছেন? ওই হামলা চালানোর খবর কি পুলিশ-প্রশাসনের কাছে ছিল না? সে দিনের ঘটনার নেপথ্যে কে, তা কি জানা গিয়েছে?'

জুনিয়র ডাক্তারদের ধরনা মঞ্চের উপর হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। মূলত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলতেই এই চক্রান্ত করা হচ্ছে বলে মনে করছেন কুণাল। তাঁর অভিযোগ, বামপন্থী যুব সংগঠন ও অতি বামপন্থী সংগঠনের এক নেতা এই চক্রান্তের নেপথ্যে রয়েছেন। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে এই গুরুতর অভিযোগ এনেছেন তিনি। পাশাপাশি এদিন একটি অডিও ক্লিপ (যার সত্যতা যাচাই করেনি দৈনিক স্টেটসম্যান) প্রকাশ্যে আনেন কুণাল। এরপর ধরনা মঞ্চের নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করার দাবি তোলেন তিনি। এছাড়াও জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থানে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ করার দাবি তোলেন। প্রকাশ্যে আসা অডিওর ভিত্তিতে স্বতপ্রণোদিতভাবে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট। এই মামলায় গরফার এক বাসিন্দাকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ।

এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে কুণাল বলেন, ‘ভয়ঙ্কর চক্রান্তের অভিযোগ আসছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-তৃণমূলকে বিড়ম্বনায় ফেলতে শকুনের রাজনীতি করার চেষ্টা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জুনিয়র ডাক্তাররা বৃহস্পতিবার যখন সাংবাদিক বৈঠক করছিলেন তখন দুই তিনটে শিবির একটা ভয়ঙ্কর প্লট তৈরি করছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলতে সল্টলেকে জুনিয়র ডাক্তারদের ধরনা মঞ্চের উপর হামলা করার ছক করা হচ্ছিল। বাইরের ছেলেদের এনে হামলার ছক কষা হয়েছিল। যাতে গোটা দায়টা সরকারের ঘাড়ে চাপে। ভাগ্যিস ওদের মধ্যে মতান্তর ঘটেছিল, না হলে বৃহস্পতিবারই বড়সড় অঘটন একটা ঘটে যেত। ‘ এরপর একটি অডিও শোনান কুণাল। সেখানে একজন বলছেন, ‘সাহেব অর্ডার দিয়েছে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য।’ অপরজন বলেন, ‘উড়িয়ে দে।’

পাশাপাশি জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান মঞ্চে বিজেপি যুব নেতারা উপস্থিত আছেন বলেও অভিযোগ তোলেন কুণাল। তাঁর কথায়, ‘বলা হচ্ছে অরাজনৈতিক মঞ্চ। অথচ কখনও জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশকে বিজেপি অফিসে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে, আবার বিজেপির একাংশ নেতাকে জুনিয়র ডাক্তারদের মঞ্চে দেখা যাচ্ছে। সিপিএমের লোকজনও ঘোরা ফেরা করছে। নকশালদের কাউকে কাউকেও দেখা যাচ্ছে।’

প্রকাশ্যে আসা অডিয়োর উপর ভিত্তি করে স্বতপ্রণোদিত এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করল বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট। পাশাপাশি পুলিশের দাবি, সল্টলেকে স্বাস্থ্যভবনের সামনে জুনিয়র চিকিৎসকদের ধরনা মঞ্চের নিরাপত্তার উপরও জোর দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য সত্যিই কি জুনিয়র চিকিৎসকদের টানা কর্মবিরতি তথা নবান্ন-বৈঠকে ইতিবাচক সাড়া না দেওয়ার নেপথ্যে ‘রাজনৈতিক উস্কানি’ রয়েছে? শুক্রবার সকালে কুণাল নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একাধিক চিত্র পোস্ট করে আন্দোলনের ‘বিজেপি যোগ’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন । আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতে গেরুয়া শিবিরের লাগাতার ইন্ধন ও রসদ জোগানোর বিষয়টিকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন তিনি। উল্লেখ্য, কুণাল ধরনা মঞ্চের যে একাধিক চিত্র পোস্ট করেছেন, তাতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা গিয়েছে বিজেপির যুব মোর্চার উত্তর কলকাতা জেলা সভাপতি সুবোধ দাসকে। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার নবান্নে পৌঁছেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেননি আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনকারী ডাক্তারদের পিছনে ‘বাইরের কারও নির্দেশ’ রয়েছে বলে অভিযোগও তুলেছিলেন। এবার প্রমাণ-সহ মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগের ভিত আরও শক্ত করলেন কুণাল ঘোষ।

জুনিয়র চিকিৎসকরাও আপাতত কর্মবিরতির সিদ্ধান্তে অনড়। এই জটিল পরিস্থিতিতে আন্দোলনে ‘রাজনৈতিক গন্ধ’ পাচ্ছে শাসকদল। রাজনৈতিক নেতৃত্বদের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের যোগাযোগ কীভাবে? কে, কাকে এই আন্দোলনে ডাকছেন? বিপুল খাদ্য রসদের উৎসই বা কী? এই সকল প্রশ্ন আগেই তুলেছিলেন কুণাল। এবার রাজ্য সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলতে ধরনা মঞ্চে হামলার ছক করা হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ আনলেন তিনি।

এপ্রসঙ্গে আন্দোলনরত এক জুনিয়র ডাক্তারের প্রশ্ন, ‘যদি কোনও হামলার ছক হয়ে থাকে তবে তা আটকানোর দায়িত্ব কার? ৪ আগস্ট যে হামলা হয়েছিল, সেই হামলার দায় স্বীকার কি কেউ করেছেন? ওই হামলা চালানোর খবর কি পুলিশ-প্রশাসনের কাছে ছিল না? সে দিনের ঘটনার নেপথ্যে কে, তা কি জানা গিয়েছে?’