হিমন্তের বেলাগাম মন্তব্যের বিরুদ্ধে কমিশনে অসম তৃণমূল

হিমন্ত বিশ্বশর্মা (Photo: Anuwar hazarika/IANS)

নিজস্ব প্রতিনিধি– “বিজেপি কর্মের ভিত্তিতে নয়, ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করে”, এটি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বরাবরের অভিযোগ৷ সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপি নেতৃত্ব কর্তৃক আদর্শ আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস৷ এবার অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হলো অসম তৃণমূল কংগ্রেস৷ নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে একের পর এক ‘বেলাগাম’ মন্তব্য করেছেন বিজেপি নেতা তথা অসমের মুখ্যমন্ত্রী৷ হিমন্তের নিশানায় যে কেবল মুসলিম সম্প্রদায়, সেটি তাঁর মন্তব্যেই স্পষ্ট৷ ‘মুসলিম বিরোধী’ রাজনৈতিক বক্তব্য রেখে, হিন্দু সম্প্রদায়কে নিভৃতে উস্কানি দিচ্ছেন হিমন্ত, অভিযোগ অসম তৃণমূলের৷ ১৫ মে, ঝাড়খন্ডে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে ‘মুসলিম বিরোধী’ বক্তব্য রেখে আদর্শ আচরণবিধির লঙ্ঘন করেছেন অসম মুখ্যমন্ত্রী, দাবি অসম তৃণমূলের৷ সেই অভিযোগ নিয়েই এবার নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিল অসম তৃণমূল৷

ঠিক কি বলেছিলেন হিমন্ত? তৃণমূল নিজ অভিযোগপত্রে তার স্পষ্ট উল্লেখ করেছে৷ প্রথমত, বুধবার ঝাড়খণ্ডের রামগডে় বিজেপির সভায় তাঁর মন্তব্য, “মুঘলরা সমগ্র দেশটিকে নোংরা করেছে৷ এখন আমাদের হিন্দুদের উচিৎ এই নোংরা পরিষ্কার করা৷” দ্বিতীয়ত, “লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৪০০ আসনে জিতলেই জ্ঞানব্যাপি মসজিদের জায়গায় বাবা বিশ্বনাথের মন্দির বানানো হবে৷” তৃতীয়ত, হিমন্তের আক্রমণের তীর ঝাড়খন্ডের এক মন্ত্রী আলমগীর আলমের দিকে, যাকে মানি লন্ডারিং মামলায় সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে হিমন্ত বলেন, মুসলিমদের কাছে বৃহৎ অংকের টাকা থাকার বিষয়টি আমরা হিন্দুরা সহ্য করবো না৷ তাঁর আরও সংযোজন, “কেবল মুসলিম নেতারাই এই ধরণের অপরাধ করতে পারেন৷” এরপরই তৃণমূল নিজ অভিযোগপত্রে লিখেছে, হিমন্ত বিশ্বশর্মার এই প্রত্যেকটি মন্তব্য ‘মুসলিম বিরোধী’ এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের প্ররোচিত করার কৌশল৷ তাঁর এই মন্তব্য কেবল ‘অসাংবিধানিক’ নয়, বরং আদর্শ আচরণবিধির বিরুদ্ধ৷ এই সকল বিষয় উল্লেখ করে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানিয়েছে অসম তৃণমূল কংগ্রেস৷

প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের প্রচারে ধারাবাহিকভাবে নানা চমকপ্রদ দাবি করে চলেছেন হিমন্ত৷ সোমবার সকালেই দিল্লিতে বিজেপির সভায় তিনি বলেন, “গত বার লোকসভা ভোটে আমরা ৩০০ আসন জিতে অযোধ্যায় রামমন্দির বানিয়েছি৷


এ বার ৪০০ আসনে জিতে বিজেপি বারাণসীর জ্ঞানবাপী এবং মথুরায় কৃষ্ণ জন্মভূমিতে মন্দির বানাবে৷’ তৃণমূলের অভিযোগপত্রে উল্লেখিত মন্তব্য গুলি ছাড়াও বুধে ঝাড়খণ্ডের রামগডে় বিজেপির সভায় তাঁর আরেক মন্তব্য, ‘লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৪০০ আসনে জিতলেই পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করে ভারতে যুক্ত করা হবে৷’ তার আগে গত ১০ মে ওডি়শার মলকানগিরিতে বিজেপির প্রচারে গিয়ে হিমন্ত বলেছিলেন, “মানুষ প্রশ্ন তুলছে, আমরা কেন ৪০০টি লোকসভা আসনে জিততে চাইছি? আপনাদের উচিত ৪০০ লোকসভা আসনে বিজেপির জয় নিশ্চিত করা৷ কারণ, কংগ্রেস অযোধ্যার রাম জন্মভূমিতে বাবরি মসজিদ পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা করছে৷’

ঘটনাচক্রে অযোধ্যার মতোই বারণসীর জ্ঞানবাপী এবং মথুয়ার শাহি ইদগাহের জমি বিতর্কও আদালতের দরজায় পৌঁছেছে৷ বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করে হিমন্ত আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙেছেন বলে বিরোধীদের অভিযোগ৷