তৃণমূল যতদিন ক্ষমতায় আছে, এসসি-এসটিদের অধিকার আমরা কাড়তে দেবো না: অভিষেক

প্রশান্ত দাস: ষষ্ঠ দফার নির্বাচনকে পাখির চোখ করে বুধেও জোড়া জনসভা করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ তমলুক কেন্দ্রের প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যের সমর্থনে নন্দীগ্রামে এবং ঝাড়গ্রামের প্রার্থী কালীপদ সরেনের সমর্থনে শালবনীতে আয়োজিত জোড়া জনসভা থেকেই অভিষেক দফায় দফায় আক্রমণ শানান বিজেপিকে৷ কখনও নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে নন্দীগ্রামের ইতিহাসকে তুলে ধরেন আবার কখনও ঝাড়গ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিলের প্রসঙ্গ টেনে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হন৷ ২০২১ এর নির্বাচনে সারা বাংলা জুড়ে ‘খেলা হলেও’ নন্দীগ্রামের মাটিতে বিজেপির কারচুপি চলেছে এবং লোডশেডিং করে জয়ী হয়েছিলেন শুভেন্দু, দাবি অভিষেকের৷ এই প্রসঙ্গে বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন, “বিজেপির দলদাস কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং শাগরেদ নির্বাচন কমিশন, যারা রেফারির ভূমিকা নিয়ে কারচুপি করে জনতার মতামতকে বিকৃত করে বিজেপিকে জয়ী করেছিল৷ সবাই জেনে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ী৷ হঠাৎ করে লোডশেডিং করে চারটে ইভিএমের ভোট এদিক ওদিক করে বিজেপিকে জেতানো হয়েছিল৷ আমরা হাইকোর্টে মামলা করেছিলাম, এখানকার বিধায়ক সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে বলেছিলেন অন্য রাজ্যের হাইকোর্টে সেই মামলা স্থানান্তর করা হোক৷ সুপ্রিম কোর্ট তাঁর গালে দু চড় মেরে বলেছে মামলা কোথাও স্থানান্তরিত হবেনা৷”

এদিন নন্দীগ্রাম থেকে নাম না করে অভিষেক আক্রমণ শানিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে৷ শুভেন্দুর কোলাঘাটের বাড়িতে পুলিশি হানার কথা উল্লেখ করে অভিষেক বলেন, “পুলিশ সার্চ করতে গিয়েছে বলে ভয়ে কেঁপে উঠছেন৷ বলছেন ভিডিওগ্রাফি করতে হবে৷ তাহলে আমরাও এবার থেকে তাই বলবো৷ মহুয়া মৈত্রের বাড়িতে হানা দিয়েছিলো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি সেখানে ছিল? ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে? আমারও তো হেলিকপটার তদন্ত করা হয়েছিল এক মাস আগে, আমি সেই নিয়ে কবার বলেছি?” ফের নাম না করে শুভেন্দুকে খোঁচা অভিষেকের৷ বলেন, “উনি বলছেন অমিত শাহ আমার অভিভাবক আর এই অমিত শাহের হাত ধরে ২০১৯ সালে কলকাতার রাজপথে বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি ভেঙেছিল বিজেপির গুন্ডারা৷ তুমি মেদিনীপুরের সন্তান নও, তুমি ইডি, সিবিআই থেকে বাঁচতে নিজ মেরুদন্ড বিক্রি করে বিজেপিতে গেছো৷”

এরপরই জনসাধারণের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে যুবরাজ জানতে চান, “তিন বছরে কী করেছেন শুভেন্দু? ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করার পর দিল্লিতে গিয়ে ফুর্তি করেছেন৷” আবারও আক্রমণ শুভেন্দুকেই৷ মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক বলেন, “১০ কোটি মানুষ ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন৷ তাঁর বাপবাপান্ত করছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক৷ নন্দীগ্রামের বিধায়কের মুখের ভাষা শুনবেন? ভাষাটা শুনুন৷” এরপরই শুভেন্দুর কুরুচিকর মন্তব্যের অডিও মঞ্চে শোনান অভিষেক৷ অডিও ক্লিপ শুনিয়ে বলেন, “তাহলে নর্দমা, নর্দমার কীট কে? ব্লিচিং পাউডার আর ফিনাইল কার মুখে দেওয়া উচিৎ?” দর্শকাসন থেকে উত্তর আসে, “শুভেন্দু অধিকারী৷” নন্দীগ্রামের মঞ্চে একটি ভিডিও দেখান অভিষেক৷ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার একটি বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত মহিলার বাডি়তে গিয়ে জনৈক সাংবাদিক দাবি করেন, ওই বিজ্ঞাপন ভুয়ো৷ মহিলা আদৌ কোনও প্রকল্পে বাডি় পাননি বলে দাবি করেন৷ বিজেপি যে বাংলায় আবাসের টাকা বন্ধ করেও মিথ্যে প্রচার চালাচ্ছে, তার প্রমাণ হিসেবেই দেখান এই ভিডিওটি৷


ভোটের দিন মহিলাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ অভিষেকের৷ তিনি বলেন, “আমার কাছে খবর এসেছে, এই অঞ্চলের প্রায় ৮০টি বুথে এঁরা জোরজবরদস্তি কারচুপি করে ভোট করার পরিকল্পনা করেছে৷ মায়েরা বটি, বেলুন চাকি, খুন্তি যা হাতের কাছে পাবেন তাই নিয়েই এঁদের তাড়া করবেন৷ নিজের ভোটটা নিজেই দেবেন৷” সতর্কবার্তা অভিষেকের৷ তাঁর ভাষায়, “নন্দীগ্রামের ব্লক ১ এবং ২ এ যাঁরা জনসাধারণকে ভোট দিতে দেয়নি, সেই তালিকা আমার কাছে রয়েছে৷ পরিণতি খুব খারাপ হবে, সতর্ক করে দিয়ে গেলাম৷” এরপরই তিনি বলেন, “নন্দীগ্রামে কারচুপি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করা হয়েছিল ৩০ হাজার ভোটে৷ এবার ৩০ হাজার ভোটের ব্যবধানেই এই নন্দীগ্রাম বিধানসভা থেকে তৃণমূলকে জয়ী করে যোগ্য জবাব দিতে হবে৷” নাম না করে প্রাক্তন বিচারপতি তথা তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গাঙ্গুলিকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, “এখানে বিজেপি যাকে প্রার্থী করেছে তিনি কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃতু্য কামনা করেন আবার কখনও তাঁর দাম জিজ্ঞেস করেন৷ এর জবাবটা আমি তমলুকের মাটি থেকে দিয়ে দিয়েছি৷ পরের বার যখন নরেন্দ্র মোদি আর অমিত শাহের পদলেহন করবেন তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাম জিজ্ঞেস করে নেবেন৷” এরপরই তাঁর আরও সংযোজন, “যে লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন সর্বাধিনায়ক সতীশ সামন্ত, সুশীল ধারা সেই কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়েছেন একজন দেশদ্রোহী! আমার ভাবতে লজ্জা লাগে৷” বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় টু্যইট করে বলেছেন, বাংলা রোহিঙ্গাদের প্রদেশ৷ সেই প্রসঙ্গ টেনেও বিজেপিকে ‘বাংলা বিরোধী’ বলে কটাক্ষ অভিষেকের৷ পাশাপাশি তিনি বাংলার গৌরবকে ফুটিয়ে তুলে বলেন, “পথপ্রদর্শক, সমাজসংস্কারক রামমোহন রায়ের জন্মদিবসে আমরা শপথ নেব৷ তিনি ভারতকে পথ দেখিয়েছিলেন৷ সতীদাহ প্রথা রদ করেছিলেন৷ এই রামে আমরা বিশ্বাস করি৷ আমরা স্বামী বিবেকানন্দের গেরুয়া বস্ত্র বিশ্বাস করি৷ যোগী আদিত্যনাথের হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করি না৷

আমাদের কাছে রাম হলেন রামমোহন রায়৷” সর্বশেষে তমলুক থেকে তৃণমূল প্রার্থীকে দু লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জেতানোর আর্জি জানিয়েছেন অভিষেক৷ কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের তীব্র নিন্দা করে অভিষেক ঝাড়গ্রাম থেকে বলেন, “কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ ওবিসি সংরক্ষণ তুলে দিয়েছে৷ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করা হয়েছে৷ যাঁরা ক্ষমতায় আসার আগে এই রূপ দেখাচ্ছে, তাঁরা ক্ষমতায় আসার পর কি রূপ দেখাবে ভাবুন! এই ঝাড়গ্রামের বিদায়ী সাংসদ কুনার হেমব্রম আমাদের দলে যোগদান করেছেন৷ তিনিই বলেছেন, বিজেপি তপশিলি, আদিবাসীদের সম্মান করে না৷ এটি প্রতিষ্ঠিত, বিজেপি জিতলে আপনি আপনার অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবেন৷ তৃণমূল যতদিন ক্ষমতায় আছে, এসসি, এসটিদের অধিকার আমরা কাড়তে দেবো না৷”