এবারের ভোটের ফলে সব হিসেব বেহাল

অভিজিৎ রায়

অবশেষে দেশের অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন শেষ হল৷ মঙ্গলবার ভোটগণনার পর স্পষ্ট হয়েছে জনতার রায়৷ ভারতীয় জনতা পার্টি এবার আর একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি৷ এমনকী, ৩০০ আসনের গণ্ডিও টপকাতে পারেনি৷ অবশ্য এনডিএ জোট কোনওমতে ম্যাজিক ফিগার পেরোতে পেরেছে৷ অন্যদিকে, কার্যত এনডিএ-র ঘাডে় নিঃশ্বাস ফেলেছে ইন্ডিয়া জোট৷ আসলে এবারের সাধারণ নির্বাচনের সময় দল ও বিরোধী জোটের মধ্যে যে সব অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ ছিল, ভোটের ফলাফল কিন্ত সে সব কিছুই এক কথায় ধুয়ে দিয়েছে৷ এবারের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল থেকে এটা স্পষ্ট যে জনগণ তাদের বিচক্ষণতা অনুযায়ী প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছে৷ তারা জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায়, বিনামূল্যের স্কিম ইত্যাদির দ্বারা বিভ্রান্ত হননি এবং এমন একটি সরকারের পক্ষে ভোট দিয়েছেন যা তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং দেশের প্রকৃত সমস্যা সমাধানের দিকে মনোনিবেশ করে৷

একথা অস্বীকার করা যাবে না যে, ক্ষমতাসীন দলের বিরোধিতার কোনো সুস্পষ্ট ঢেউ ছিল না, কিন্ত্ত জনগণ পরিবর্তন চায় এমন ইঙ্গিত অব্যাহত ছিল৷ বিরোধী দলগুলির জোট অবশ্যই মূল্যস্ফীতি এবং বেকারত্বের মতো কিছু মৌলিক বিষয় উত্থাপন করেছিল, তবে ক্ষমতাসীন দল তাদের পাশে রাখার জন্য সম্ভাব্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল৷ কিন্ত্ত মানুষ নীরব থেকেছে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে৷ এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ উত্তরপ্রদেশের ফলাফল৷ শাসক দল অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণকে তার সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে উপস্থাপন করতে থাকে, কিন্ত্ত সেখানকার মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করে৷ এমনকি অযোধ্যার বিজেপি প্রার্থীকেও সমর্থন করা হয়নি৷


প্রতিটি রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে তার হিসাব-নিকাশ মিটমাট করার চেষ্টা করে, জাত-ধর্মের সমীকরণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কিন্ত্ত এবারও সেই সমীকরণ খুব একটা কার্যকর প্রমাণিত হয়নি৷ অবশ্য বিজেপি সবচেয়ে বড় দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, কিন্ত নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি৷ যেখানে বিজেপি এই নির্বাচনে সবচেয়ে সম্পদশালী দল ছিল৷ তারা নির্বাচনে যতটা খরচ করেছেন সব দল একসঙ্গে মিলেও হয়তো অত খরচ করতে পারেনি৷ অন্য দলগুলো প্রচারণায় তার তুলনায় ম্লান ছিল৷ মিডিয়ার সর্বত্র তার উপস্থিতি দৃশ্যমান ছিল৷ তারপরও, তিনি নিজে থেকে তিনশ সত্তরটি এবং জোট পর্যায়ে চার শতাধিক আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি আসাও তার পক্ষে কঠিন হয়ে পডে়৷ এবারের নির্বাচনে আবারও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে আঞ্চলিক দলগুলো৷ এটাও প্রমাণ করে যে, মানুষের জন্য ব্যক্তিগত সমস্যা এবং স্থানীয় সমস্যাগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷

নির্বাচনের পর প্রতিটি রাজনৈতিক দল তার সাফল্য-ব্যর্থতা পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতের নির্বাচনের জন্য তা থেকে শিক্ষা নেয়৷ যা হবে সবই হবে, কিন্ত্ত যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল ম্যান্ডেট বোঝা যাচ্ছে৷ শুধু আসন বণ্টনে জাত-ধর্ম সমীকরণ তৈরি হওয়া এবং জোটে থাকা দলগুলোর ভোট একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফল নয়৷ এটি ক্ষমতাসীন দলের প্রতি জনগণের হতাশা ও উদাসীনতাও প্রতিফলিত করে৷ বিনামূল্যের রেশন এবং কিছু অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা মানুষের মধ্যে উন্নত জীবন সম্পর্কে আস্থা জাগাতে পারেনি৷ এ থেকে এটা স্পষ্ট যে ক্ষমতাসীন দল তাদের অর্জন হিসেবে যে সুযোগ-সুবিধা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি উল্লেখ করে আসছে, তাতে জনগণ আস্থা রাখতে পারছে না৷ অতএব, যিনি ক্ষমতার লাগাম নেবেন তিনি এই আদেশের প্রভাব বোঝার পরেই নীতি ও পরিকল্পনা নির্ধারণ করবেন বলে আশা করা যায়৷