অহংকার এবং মুসলিম বিরোধিতা বিজেপির পতনের অন্যতম কারণ, বলছেন বিশ্বনাথ চক্রবর্তী

নিজস্ব প্রতিনিধি– চব্বিশের নির্বাচনে বাংলায় ভরাডুবি বিজেপি-র। ৪০০ পারের দাবি করলেও, ৩০০টি আসনেও এবার জয়ী হতে পারেনি গেরুয়া শিবির। অন্যদিকে বাংলাতেও গতবারের তুলনায় কমেছে বিজেপির জয়ী আসন সংখ্যা। বিজেপি যে চব্বিশের নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়বে, তা কিছুটা অপ্রত্যাশিত ছিল রাজনৈতিক মহলের কাছেও। বুথ ফেরত সমীক্ষা বিজেপি-র মনে আশা জাগালেও, গণদেবতার দরবারে সংঘটিত পরীক্ষার ফলাফল বিজেপিকে ক্রমাগত ব্যাকফুটে নিয়ে যায়।

তবে বিজেপির এই হারের আসল কারণ কি? তারই ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। মুসলিম বিরোধী রাজনৈতিক আদর্শ বিজেপি-কে পরাজয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে, দাবি বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর। তাঁর ভাষায়, “বাংলার ৩৫% মুসলিমদের সমর্থন ছাড়া বিজেপির ক্ষমতায় আসা অসম্ভব। বাংলায় ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে অন্তত একটি কেন্দ্রে মুসলিম প্রার্থী দিতে পারতো না বিজেপি? তাঁদের রাজনৈতিক চিন্তাটাই মুসলিম বিরোধী। সারাক্ষণ জয় শ্রী রাম! রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাঁরা ধর্ম টেনেছেন। ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি তাঁরা এমনভাবে দিয়েছেন। ফলে মুসলিমরা আতঙ্কিত হয়েছেন।

সুতরাং ছাব্বিশের নির্বাচনেও যে বিজেপি খুব ভালো ফল করবে, তা নয়। সংখ্যালঘু মুসলিম ব্যতীত বিজেপির ভোট শতাংশ ৩৮-৪০ % থাকবে।” বিজেপি কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সেটিই এখন সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে। বিশ্বনাথ বলেন,”বিজেপি বর্তমানে ৯০টি বিধানসভা আসনে এগিয়ে আছে। যা ২০১৯ এর তুলনায় অনেক কম। বিজেপি ৬৫ নম্বরের পরীক্ষা দিয়ে ৩৫-৪০ পাচ্ছে। বিজেপি যতক্ষণ না ৪৫ এ নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাবে ততক্ষণ তাঁদের জন্য চিন্তার বিষয়। তৃণমূলের সাথে বিজেপির ভোট শতাংশের পার্থক্য ৮%। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি-কে ঘুরে দাঁড়াতে হলে মুসলিমদের জন্য নতুন বার্তা, চিন্তা নিয়ে আসতে হবে বিজেপি-কে। অন্যদিকে, দলের মধ্যে খাঁটি বিজেপি নেতৃত্ব এবং দু’নম্বরি বিজেপি নেতৃত্বদের শনাক্ত করতে হবে বিজেপি কে।”


বিজেপি-র দোষগুণ বিচার করতে গিয়ে বিশ্বনাথ বলেন, “বিজেপি লবিবাজি করে দিল্লি থেকে প্রার্থী নিয়ে আসে। যাঁদের সাথে নির্দিষ্ট কেন্দ্রের মানুষের কোনও সম্পর্ক নেই। ভূমির টান নেই। ওই কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী নির্বাচন করলে তো তাঁরা সেখানেই পড়ে থাকবেন।” এরপরই তাঁর আক্রমণ কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়ের দিকে। তিনি বলেন, “হঠাৎ করে রানীমা কেন আসবেন রাজনীতিতে? সেখানে কি কোনও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছিলেন না? দরকার হলে পঞ্চায়েত স্তর থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিয়ে আসতে হবে।” তুলনা টেনেছেন তৃণমূল এবং বিজেপির রাজনৈতিক চিন্তায়।

বিশ্বনাথ বলেন, “তৃণমূলের উত্থানের ইতিহাসটা বুঝতে হবে। অনেক উজ্জ্বল তাঁদের ইতিহাস। এমন বহু নেতা তৃণমূলে রয়েছেন, যাঁরা একেবারে স্থানীয় স্তরে রাজনীতি করতেন। মমতা বন্দোপাধ্যায় আজ তাঁদের উপর গুরুদায়িত্ব অর্পণ করে তাঁদের নির্দিষ্ট পদ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় যে সামাজিক প্রকল্পগুলি এনেছেন, তার বিরোধিতা করার জায়গা নেই।” লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে এক বিজেপি নেত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে বিশ্বনাথ বলেন,”এক বিজেপি নেত্রী বললেন, তাঁরা ক্ষমতায় আসলে লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করে দেবেন। অভিষেক বন্দোপাধ্যায় সেটিকে নির্বাচনী প্রচারে হাতিয়ার করলেন। বিজেপি তো একবার সাংবাদিক বৈঠক করে বলতে পারতো যে তাঁরা সেই নেত্রীকে বহিষ্কার করেছেন, বা তাঁরা এই ধরণের বক্তব্য সমর্থন করেন না। তাঁরা কিছুই করলেন না। তাহলে মানুষের বিশ্বাসের জায়গা অর্জন করবেন কিভাবে বিজেপি নেতৃত্বরা? বিজেপি নেতৃত্বদের অহংকার আকাশ ছোঁয়া। তৃণমূলেরও সমালোচনা করার জায়গা রয়েছে, কিন্তু তৃণমূল যখন বিরোধী ছিল, তখন এই দলের নেতারা কিন্তু মাটির মানুষ ছিলেন।

বিজেপি নেতৃত্বদের ‘স্বার্থপর নেতা’ বলে উল্লেখ করেন বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বিশ্বনাথ বলেন, “বর্ধমান-দুর্গাপুর তিনি যেই কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন সেখানকার বিজেপি কর্মীরা অত্যাচারিত হচ্ছেন, তৃণমূলে যোগদান করতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিকে দিলীপ ঘোষ কলকাতায় বসে একের পর এক দলের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন। হেরে যাওয়ার পর নিজ কর্মীদের সাথেই থাকছেন না। তিনি মাছ ধরতে ব্যস্ত! এমন স্বার্থপর নেতৃত্বদের দিয়ে ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফলাফল করা অসম্ভব।”