‘অপরাজিতা’ বিল পেশে শুভেন্দু মনে করালেন বুদ্ধদেবকে, বিলে রাখলেন একগুচ্ছ প্রস্তাবনা

মঙ্গলবার মহিলাকে অত্যাচার, অশালীন আচরণ ও ধর্ষণের ঘটনায় কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করতে বিধানসভায় বিল পেশ করেছে সরকার। যার নাম অপরাজিতা মহিলা ও শিশু সুরক্ষা বিল। এদিন সেই বিল নিয়ে বিতর্কে ধুন্ধুমার পড়ে গেল বিধানসভায়। বিতর্কে অংশ নিয়ে এই বিলে কিছু সংশোধনের প্রস্তাব করেছে বিজেপি। সেই সঙ্গে তাঁর বক্তৃতার শুরুতেই বিলে পূর্ণ সমর্থনের অঙ্গীকারও করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।কিন্তু একই সঙ্গে শুভেন্দু এদিন বলেন, -‘কেন্দ্রে যে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা রয়েছে তাতে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় যথেষ্ট কঠোর ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় ফাঁসির সাজাও রয়েছে। সেই আইন মোতাবেক নির্ভয়া কাণ্ডে অভিযুক্তদের ফাঁসিও হয়েছে। তাই রাজ্য সরকার যে বিল বিধানসভায় পেশ করেছে তা স্রেফ দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা। সরকারি হাসপাতালের মধ্যে একজন চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে খুন করার ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতা যেভাবে বেআব্রু হয়ে পড়েছে, সেই ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা হচ্ছে। তার অতিরিক্ত কিছু নয়’।

শুভেন্দু আরও বলেন, -‘নির্ভয়া কাণ্ডের পর ধর্ষণের ঘটনার সাজা নির্ধারণের জন্য যখন ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে সংশোধন আনা হয় তখন সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতামতও লিখিত ভাবে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাহলে এদিন যে বিলে যে সব প্রস্তাব করা হয়েছে, তখন সেগুলি করেননি কেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী?’এখানেই না থেমে সরকারের অস্বস্তি বাড়ানোর চেষ্টা করেন বিরোধী দলনেতা। পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ড, কামদুনির ঘটনা সহ রাজ্যে মহিলাদের উপর ধর্ষণের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর তৎকালীন সব বিবৃতি উদ্ধৃত করতে শুরু করেন বিরোধী দলনেতা। তার সপক্ষে সংবাদপত্রের পুরনো প্রতিলিপি দেখান শুভেন্দু।

বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘সংবাদপত্রের কপি দেখানো যাবে না’।এই প্রসঙ্গে এদিন প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কথাও তোলেন বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, সোমবার রাত থেকে জুনিয়র ডাক্তাররা লালবাজারের অদূরে ধর্না দিচ্ছেন। সারা রাত তাঁরা সেখানে ছিলেন। তাঁদের দাবি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে অপসারণ করতে হবে। সরকার যদি তা করতে রাজি নাও হয়, তাহলেই বা প্রতিবাদী ডাক্তারদের থেকে স্মারকলিপি নিতে বাধা কোথায় ছিল?শুভেন্দুর কথায়, এ হল শাসকের দম্ভ। অতীতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, আমরা ২৩৫, ওরা মাত্র ৩০। সেই তিরিশের দলে আমিও ছিলাম। তার পর কী পরিণতি হয়েছিল সবাই দেখেছে। তাই বিধানসভায় বিধায়ক সংখ্যাই গণতন্ত্রে শেষ কথা নয়। মানুষই শেষ কথা।এদিন বক্তৃতার শেষে শুভেন্দু স্লোগান তুলতে শুরু করেন—দফা এক দাবি এক/মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ। তা নিয়ে সভার মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়। তবে মুখ্যমন্ত্রী আবেদন করেন যে তৃণমূলের বিধায়করা যেন সংযত থাকেন।দফা এক দাবি এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ। বিচার চাই বলে দাবি তোলেন শুভেন্দুরা।


শুভেন্দু অধিকারী যে প্রস্তাব রেখেছেন সেগুলি হল

১) পুলিশ স্টেশন এফআইআর নিতে অস্বীকার করলে বা অযথা বিলম্ব করলে তার সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখা হোক।

২) বিধিসম্মত মেডিক্যাল পরীক্ষা অথবা ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বিলম্ব বা অবহেলা করলে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য আধিকারিকের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শাস্তির বিধান রাখা হোক।

৩) তথ্য প্রমাণ লোপাট করলে সংশ্লিষ্ট ব্য়ক্তি বা আধিকারিকের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শাস্তির বিধান রাখা হোক।

৪) মামলায় স্বাক্ষ্য প্রদানের সময় কেবলমাত্র গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা( হাসপাতালে ভর্তি) ছাড়া স্বাক্ষ্য প্রদানের দিন পরিবর্তন করা যাবে না।

৫) তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিক এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষাকারী চিকিৎসক অথবা স্বাস্থ্যকর্মী বয়ান বদল করলে চূড়ান্ত শাস্তির বিধান রাখতে হবে।

৬)স্বাক্ষ্যদান চলাকালীন রাজ্য সরকারের পুলিশ কর্তৃক পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে।

৭) ৩০দিনের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দ্রুত শাস্তি কার্যকর করতে হবে।