আর এক ধাক্কা বিজেপি’র

সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল চিত্র

ভোটের মধ্যেই কেন্দ্রীয় এজেন্সি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) দেদার গ্রেফতারের ক্ষমতায় রাশ টানল সুপ্রিম কোর্ট৷ এক রায়ে শীর্ষ আদালত বলেছে, অবৈধ অর্থ লেনদেন রোধ আইনে (পিএমএলএ) ইডি কোনও অভিযুক্তকে ওই আইনের ১৯ নম্বর ধারায় চাইলেই গ্রেফতার করতে পারবে না৷ ইডি যদি অভিযুক্তকে ওই ধারায় গ্রেফতার করে নিজের হেফাজতে রাখতে চায়, তবে তাকে আদালতে আবেদন জানাতে হবে৷ আদালত সম্মতি দিলে তবেই ইডি অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারবে৷ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে৷ পিএমএলএ-তে ইডি’র হাতে গ্রেফতারির যে বাড়তি ক্ষমতা ছিল, এই রায়ে কার্যত তা ছেঁটে দিল সুপ্রিম কোর্ট৷ সাম্প্রতিক সময়ে পিএমএলএ’র এই ধারাকে হাতিয়ার করেই বিরোধী পক্ষের অনেককে গ্রেফতার করেছে ইডি, মোদি সরকারের নির্দেশেই যা করা হয়েছে বলে একের পর এক অভিযোগ উঠে এসেছে প্রবলভাবে৷ স্বভাবতই নির্বাচনী বন্ড বাতিল এবং মোদি সরকারের কট্টর সমালোচক কেজরিওয়াল ও সাংবাদিক প্রবীর পুরকায়স্থর জামিনের পরে শীর্ষ আদালতের এই রায়ে বিজেপি ফের একবার জোরালো ধাক্কা খেল বলেই মনে করা হচ্ছে৷

পিএমএলএ’র ১৯ নম্বর ধারায় অভিযুক্তকে গ্রেফতারের বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল ইডি’কে, যার পক্ষে রায় দিয়েছিল শীর্ষ আদালতের তৎকালীন বিচারপতি এএম খানইউলকারের বেঞ্চ৷ সাম্প্রতিক রায়ের পর তা কার্যত বহাল রইল না৷ এই ধারায় এতদিন ইডি আদালতের নির্দেশে সমন জারি করে অভিযুক্তকে তলব করে গ্রেফতার করত৷ রায়ে এবার সেই ক্ষমতা ছেঁটে বলা হয়েছে, যদি পিএমএলএ-তে অভিযুক্ত ব্যক্তি ইডি’র সমন পেয়ে হাজিরা দেন, তবে তাকে গ্রেফতার করতে চাইলে ইডি’কে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন জানাতে হবে৷ আদালতের অনুমতি ছাড়া অভিযুক্তকে ইডি তার ইচ্ছামতো গ্রেফতার করতে পারবে না৷ রায়ে আরও বলা হয়েছে, যদি অভিযুক্ত সমন মেনে হাজিরা দেয়, তাহলে তার আর আলাদাভাবে জামিনের জন্য আবেদন জানানোর প্রয়োজন নেই৷ কারণ, অভিযুক্তকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য ইডি যখন আদালতের অনুমতি নেবে, তখন অভিযুক্ত নিজের জামিন নিয়ে মত জানাতে পারবেন৷

পিএমএলএ-তে অভিযুক্তর জামিনের জন্য যে শর্ত আরোপ করা হয়েছিল, সেই শর্তও কার্যত খারিজ করে দেওয়া হয়েছে আদালতের এই রায়ে৷ ইডি’র হাতে অভিযুক্তর জামিনের অধিকার খর্ব করে গ্রেফতারির যে চরম ক্ষমতা ছিল, তাও ছেঁটে দেওয়া হল৷ রায়ে আরও বলা হয়েছে, পিএমএলএ’র ৪৫ নম্বর ধারায় শর্ত ছিল, অভিযুক্তকে জামিনের আবেদন জানাতে হলে সরকারি আইনজীবীর অনুমতি নিতে হবে৷ সরকারি আইনজীবী যদি অভিযুক্তের জামিনের আবেদন শুনে নিশ্চিত হন যে, অভিযুক্ত কোনও অন্যায় করেননি এবং ভবিষ্যতেও কোনও অন্যায় করবেন না, তবেই তিনি জামিনের আরজি পেশের অনুমতি দেবেন৷ তার ভিত্তিতেই আদালতে তার জামিন মিলবে৷ সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, জামিনের ক্ষেত্রে ৪৫ নং ধারার এই শর্ত মানার কোনও প্রয়োজন নেই৷ এর অর্থ, অভিযুক্তর জামিন আটকাতে ইডি’র হাতে যে আইনি ক্ষমতা ছিল, তারও একরকম বিলুপ্তি ঘটল এই রায়ে৷


প্রসঙ্গত, মোদির আমলেই পিএমএলএ সংশোধন করে তাকে দমনপীড়নে আরও কঠোর করে তোলা হয়৷ এর মধ্য দিয়ে গ্রেফতার, তল্লাশি, সমন পাঠানো, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডি’র হাতে যথেচ্ছ ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়৷ বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক দল তাতে আপত্তি জানালেও কর্ণপাত করেনি মোদি সরকার৷ ইডি’র এই ক্ষমতা নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী বলে বিভিন্ন মহল থেকেই অভিযোগ তোলা হয়েছিল৷ এ নিয়ে আদালতে মামলাও দায়ের হয়৷

এবার গ্রেফতারির বিষয়ে ইডি’র সেই একচ্ছত্র ক্ষমতায় রাশ টানলো সুপ্রিম কোর্ট৷ বলাই বাহুল্য, জোরালো ধাক্কা খেল বিজেপি ও গেরুয়া শিবির৷