একটা আবেগ ও ইতিহাসের নাম একুশে জুলাই

ড. নীলিমেশ রায়চৌধুরি, পুরপ্রধান, কল্যাণী পুরসভা

একুশে জুলাই একটা আবেগের নাম৷ একুশে জুলাই একটা ইতিহাস৷ একটা প্রতিজ্ঞা নেওয়ার দিন বলতেই একুশে জুলাই৷ মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করতে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেন সেদিনের যুবনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচরের শাসক গোষ্ঠীকে ছুঁড়ে ফেলার আহ্বানে ১৯৯৩ সারে ২১ জুলাই হাজার হাজার যুব কংগ্রেস বন্ধুরা মহাকরণ চলো সমাবেশে হাজির হয়েছিলেন৷ ‘সচিত্র ভোটার কার্ড’ ছাড়া নির্বাচন হবে না৷ সংগ্রামী চেতনায় কলকাতার রাজপথ মুখর হয়ে উঠল৷ যুবনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানতেন এই পরিবর্তন আনতে পারবে যুবশক্তি৷ সেদিনের শাসকগোষ্ঠীর দম্ভকে চুরমার করে দিতে সারা কলকাতা উত্তাল হয়ে উঠল৷ জনস্রোতে ভেসে গেল শহর কলকাতা৷

যুব সমাজের মিছিলের গর্জন মহাকরণে প্রতিধ্বনিত হলো৷ শাসক গোষ্ঠী বিচলিত হয়ে পড়ল৷ হয়তো তারা ভাবতে শুরু করল যুব মিছিল মহাকরণ দখল করতে আসছে৷ মহাকরণের আসার সব পথ অবরুদ্ধ করে দাও৷ ব্যারিকেড তৈরি কর৷ পুলিশ প্রশাসনের কাছে নির্দেশ গেল৷ সেই ব্যারিকেড টপকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় যুব সম্প্রদায়ের আওয়াজ শুনতেই পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে৷ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রথমে লাঠিচার্জের পরে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া হল৷ তবুও তরুণ ব্রিগেড সেই আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালো না৷ পুলিশ আরও হিংস্র হয়ে উঠেছিল৷ সাহসী যুবকদের উপর গুলি চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টায় পুলিশ মারমুখি হয়ে উঠল৷ রক্তে ভেসে গেল কলকাতার রাজপথ৷ প্রাণ হারালেন তরতাজা তেরো জন বীরসৈনিক৷ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পরে এই আত্মবলিদান নতুন অধ্যায় রচনা করল৷


সেদিন এই দৃশ্য দেখে যুবনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেঁদে ওঠেন৷ তখনই শপথ নিলেন বীরের স্রোত কোনওদিন ব্যর্থ হবে না৷ অনুভব করলেন বাংলার বুকে অভু্যত্থান ঘটাতে হবে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহিদ বেদির সামনে দাঁড়িয়ে অঙ্গীকার করলেন নতুন বাংলা গড়বেন৷ নির্মম অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীকে উপড়ে ফেলতে হবে বাংলা থেকে৷ নতুন বাংলার স্বপ্ন দেখতে হবে৷

সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ২০১১ সালে সেই অত্যাচারী শাসক দলকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে৷ তারপরেই মা-মাটি-মানুষের তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার নতুন দিশা দেখতে শুরু করেছে৷ প্রতিদিন মানুষের পাশে থাকার ব্রত নেওয়া হয়েছে৷ তাই তো একুশে জুলাই শহিদ দিবসে ধর্মতলায় ছুটে আসেন নতুন শপথ নেওয়ার বার্তায়৷