প্রায় এক সপ্তাহ আত্মগোপনে থাকার পর এবার মুখ খুললেন শেখ হাসিনা। ছাত্র আন্দোলনের নাম করে বাংলাদেশে অশান্তি পাকানোর পিছনে হাত রয়েছে আমেরিকার। বিভিন্ন আভ্যন্তরীণ চাপে সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। তিনি ইতিমধ্যে ঘনিষ্ঠ মহলে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি ইস্তফা দিয়েছি যাতে মৃত্যু মিছিল দেখতে না হয়। ওরা পড়ুয়াদের মৃতদেহের উপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল। আমি সেটা হতে দিইনি। নিজেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিই। যদি আমি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সার্বভৌমত্ব আমেরিকার হাতে তুলে দিতাম এবং তাদের বঙ্গোপসাগরে একাধিপত্য বাড়াতে দিতাম তাহলে হয়তো আমি এখনও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম। আমি দেশের মানুষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, মৌলবাদীদের কথায় প্রভাবিত হবেন না। আমি যদি বাংলাদেশে থাকতাম, তবে আরও প্রাণহানি হতো। আরও সম্পত্তি নষ্ট হতো। আর সেই কারণেই দেশ ছাড়ার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। আপনারা আমায় বেছে নিয়েছিলেন বলেই আমি আপনাদের নেত্রী হই। আপনারাই আমার শক্তি ছিলেন।’
প্রসঙ্গত বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের নামে ছাত্র আন্দোলন এক লহমায় জঙ্গি আন্দোলনে পরিণত হয়। আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে মিশে গিয়ে একদল দুষ্কৃতী দেশের সরকারি সম্পত্তি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নষ্ট করতে শুরু করে। পুলিশ সেই আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়। হয়তো আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে পুলিশ ও সেনা যৌথভাবে এই আন্দোলন দমন করতে পারতো। কিন্তু সেই উদ্যোগ দেখা যায়নি সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকেও। ইতিমধ্যে আন্দোলনের জেরে বেশ কিছু প্রাণহানির ফলে সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে কোটা সংস্কার সংক্রান্ত মামলাটির শুনানির দিন এগিয়ে নিয়ে আসে। পূর্বে এই মামলার শুনানির নির্ধারিত দিন ছিল ১৯ আগস্ট। আদালত ছাত্রদের আন্দোলন প্রশমিত করতে সেই শুনানি প্রায় এক মাস এগিয়ে এনে ২২ জুলাই করা হয়। কোটা সংস্কার করে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয় আদালত। মাত্র ৭ শতাংশ সংরক্ষণ রেখে বাকি ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন। যা ভারত সহ অন্যান্য বেশ কিছু দেশ ভাবতেই পারে না। কিন্তু তাতেও আন্দোলন প্রশমিত হল না। ফের হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে তোলপাড় হল বাংলাদেশ। ছাত্রদের নাম করে সেই আন্দোলন হলেও যোগ দিল অন্যান্য স্তরের মানুষজন। তারা দেশজুড়ে রীতিমতো তান্ডব শুরু করল। আন্দোলনের এই রূপ দেখে দেশের ভিতরে এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলে একাধিক প্রশ্ন দেখা দিল। এরা সবাই কি ছাত্র? নাকি তাদের আড়ালে অন্য কোনও শক্তি ইন্ধন যোগাচ্ছে? বিশ্বের অন্যান্য গণতান্তিক দেশের মতো সাংবিধানিক নিয়মে নির্বাচিত হাসিনা সরকার সেই আন্দোলন দমনে আরও কঠোর হতে পারতেন। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে আন্দোলনকারীদের হঠিয়ে দিতে পারতেন। মুজিবের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের গণহত্যা থেকে রক্ষাকারী আওয়ামী লীগ মৃতের লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় থাকার নীতির বিরোধী। সেজন্য দলের সুপ্রিমো হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লেন। আর তাঁর দেশ ছাড়তেই আন্দোলনের আরও ভয়ঙ্কর রূপ দেখল বাংলাদেশের অধিকাংশ নিরীহ মানুষ। নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর, ছাত্র আন্দোলন রাতারাতি হাইজ্যাক করে নিল জামাত আর বিএনপি-র দুষ্কৃতীরা। দেশজুড়ে শুরু হয়ে গেল ৭১-এর মতো সাম্প্রদায়িক আর রাজনৈতিক হিংসা। সংখ্যালঘু নির্যাতন ও হত্যা, সংখ্যালঘু ও বিএনপি নেতা মন্ত্রীদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, লুঠতরাজ ও ডাকাতির ঘটনায় গোটা বাংলাদেশ হতস্তম্ভ। প্রকাশ্য শহরে আওয়ামী লীগ নেতাদের নৃশংসভাবে হত্যা করে ফুট ওভার ব্রিজে ঝুলিয়ে দেওয়া হল। যা ৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারিদের নৃশংসতাকেও হার মানায়। প্রশ্ন আসতে শুরু করে এটাই কি বাংলাদেশের তথাকথিত প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের ফসল? নাকি এর পিছনে দেশের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ও বিদেশী শক্তির ইন্ধন রয়েছে। ভারতে আত্মগোপনে থেকে বিষয়টি নিয়ে এবার মুখ খুলতে শুরু করেছেন শেখ হাসিনা।
হাসিনা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া ও দেশ ছাড়ার পূর্বে তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাঁর সরকারি বাসভবনে হামলা চালাতে এগিয়ে আসায় সেই সময়টুকু পাননি। হাতে সময় ছিল মাত্র ৪৫ মিনিট। তড়িঘড়ি দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হয় তাঁকে। তিনি শীঘ্রই দেশে ফিরবেন। ঘনিষ্ঠ মহলে হাসিনা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের গোটা পরিস্থিতি নিয়ে অনেক কিছুই বলার আছে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের জন্য সেই সময়টুকু পাননি। এবার এক এক করে মুখ খুলছেন আওয়ামী লীগ সুপ্রিমো। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে অশান্তি পাকানোর পিছনে আমেরিকার হাত রয়েছে। সেই কথা সুযোগ পেলেই বলতেন। এমনটাই সূত্র মারফত জানিয়েছেন।