রাঁচি, ৩ জুলাই: গত কয়েক মাসে অনেক উত্থান-পতন ঘটেছে ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে। জমি দুর্নীতি মামলায় দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাস জেলে ছিলেন জেএমএম নেতা ও ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। গত ৩১ জানুয়ারি তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে প্রথমে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তখন তাঁর গ্রেফতারির ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যান জেএমএম শীর্ষ নেতা। এরপর তিনি তড়িঘড়ি মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি তাঁর জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হন বর্ষীয়ান জেএমএম নেতা ও বিধায়ক চম্পাই সোরেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর জেল বন্দি থাকার পর সম্প্রতি সেই জমি কেলেঙ্কারী মামলায় জামিনে মুক্ত হয়েছেন হেমন্ত। এবার ফের তাঁর মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার পালা। ইন্ডিয়া জোটের শরিকরা কংগ্রেস, জেএমএম, আরজেডি নেতারা এবিষয়ে একমত হয়েছেন। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, হেমন্তকে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী করা হবে। সেই মতো বুধবার রাজ্যপালের কাছে গিয়ে ইস্তফা দিলেন অস্থায়ী মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন।
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এতে খুশি নন চম্পাই। তিনি মনে মনে ব্যথিত। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিলেও তিনি বেশিদিন রাজ্যের মানুষের জন্য কাজ করতে পারলেন না। ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, চম্পাই খুবই দুঃখ পেয়েছেন। জেএমএমের বিধান পরিষদীয় দলের বৈঠকে তিনি ‘অপমানিত’ বোধ করছেন। তা সত্ত্বেও দলীয় নির্দেশ মেনে বুধবার ইস্তফা দিয়েছেন চম্পাই। তবে চম্পাই-এর জন্য সান্ত্বনা হিসেবে রয়েছে, দলের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব। ৬৭ বছর বয়সি চম্পাই শুধুমাত্র জেএমএমের অভিজ্ঞ নেতাই নন, দল প্রতিষ্ঠার সময় তিনিই ছিলেন গুরুজি শিবু সোরেনের ছায়াসঙ্গী। এমনকী জানুয়ারিতে যখন হেমন্ত সোরেন গ্রেফতার হন, তখন রাতারাতি ভেঙে পড়া সরকারের হাল শক্ত হাতে ধরেন।
জানা গিয়েছে, চম্পাইকে ইস্তফা দেওয়ার প্রস্তাব দেন ইন্ডিয়া জোটের শরিকরাই। তাঁর সরকারি বাস ভবনে গিয়ে বিশেষ বৈঠক করেন জোটের নেতারা। সেই বৈঠকে হেমন্তকে ফের মুখ্যমন্ত্রী করার ব্যাপারে তাঁরা ঐক্যমত হন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের ঝাড়খণ্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত গুলাম আহমেদ মির, রাজ্য সভাপতি রাজেশ ঠাকুর এবং হেমন্ত সোরেনের স্ত্রী এবং বিধায়ক কল্পনা সোরেন।
কিন্তু জোট শরিকদের কেন এই সিদ্ধান্ত? নাকি এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছেন হেমন্ত সোরেন নিজেই? এবিষয়ে জোট শরিক সূত্রে বেশ কিছু রাজনৈতিক যুক্তি রয়েছে। জানা গিয়েছে, সামনেই রয়েছে ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে ভালো ফল করতে গেলে হেমন্তকেই দরকার। তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখ করে বিধানসভা নির্বাচনে লড়তে চাই ইন্ডিয়া জোট। সেজন্য আগাম তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসিয়ে রাজ্যবাসীকে বার্তা দিতে চাইছেন কংগ্রেস সহ জোটের নেতারা।
তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধী দল বিজেপি সরব হতে শুরু করেছে। তাঁরা ভোটে হেমন্তের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতিকে ইস্যু করতে পারে বলে মনে করছে অনেকে। ইতিমধ্যে সরব হয়েছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন, ঝাড়খণ্ডে চম্পাইয়ের জমানা খতম। শাসক জোটের প্রধান জেএমএমকে নিশানা করে তিনি লিখেছেন, পরিবারকেন্দ্রিক দলে পরিবারের বাইরে কারও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই।