গোষ্ঠী কোন্দলে বিজেপি-তৃণমূল শিবিরেই দ্বন্দ্ব নিয়ে লোকসভা ভোটের আগে বিতর্ক বর্ধমানে

নিজস্ব সংবাদদাতা, বর্ধমান ৩০ এপ্রিল– লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই বিজেপি এবং তৃনমূল দুই শিবিরে দলীয় কোন্দল বাড়ছে৷ তৃণমূল এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে গেছেন বর্ধমানে গোষ্ঠী কোন্দল মেটাতে হবে৷ তার পরেও গলসীর পারাজে ঘটে গেছে গোষ্ঠী বিবাদ৷ মারধর খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি তৃণমূল কংগ্রেস নেতা৷ অন্যদিকে জেলা নেতৃত্ব অস্বীকার করলেও বিজেপি শিবিরেরও গোষ্ঠী বিবাদ চরমে৷ এমনকি দল ছাড়ার হিডি়ক থেকে শুরু করে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে পাল্টা গোঁজ প্রার্থী খাড়া করার হুমকিও চলছে৷ সব নিয়ে দুই শিবিরের নেতা নেত্রীরাই বেশ কিছুটা অস্বস্তিতে৷ যদিও এ ব্যাপারে দুই দলের নেতারাই মুখে কুলুপ এঁটে আছেন৷

কয়েকদিন আগে পূর্ব বর্ধমানের কালনা শহরে এসে নির্বাচনী বৈঠক করেন তৃণমূল কংগ্রেস এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ অনান্য নানা পরামর্শ দেবার পাশাপাশি দলের অন্দরে গোষ্ঠী কোন্দল মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াইয়ের ময়দানে থাকতে বার্তা দেয়৷ এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে যান তিনি৷ কিন্ত্ত অভিষেক কালনা শহর ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আবার প্রকাশ্যে আসে দলের নেতাদের কোন্দল৷ আর সেই ঘটনা ঘটে গলসী থানার পারাজ এলাকায়৷ গলসী-১ ব্লকের পারাজ গ্রামে দুই নেতা গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ পৌঁছে যায় সোস্যাল মিডিয়াতে৷ এক নেতা কে দলেরই অন্যরা তুলে এনে মারধর করে গাছে বেঁধে রাখে৷ সূত্রের খবর মুকুল সেখ নামে তৃণমূল কংগ্রেস এর প্রাক্তন সভাপতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ আর এক অঞ্চল সভাপতি সেখ নজরুলের৷ এনিয়ে ব্লক সভাপতি জর্নাদন চট্টোপাধ্যায় এর নেতৃত্বে কর্মী বৈঠক হয়৷ আর তার পরেই অশান্তি সৃষ্টি হয়েছিল৷ দলীয় কার্যালয়ে বসে থাকার সময় কয়েকজনের উপর হামলার ঘটনা ঘটে৷ সেখানে তাদের মারধর করা হয়৷ এলাকার এক দাপুটে নেতা সহ তিন জন গুরুতর আহত হন৷ একজনকে গাছে বেঁধে রেখে ভিডিও করে সোস্যাল মিডিয়াতে ছডি়য়ে দেওয়া হয়৷ যদিও দলের ব্লক সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায় ঘটনাটি স্বীকার করে বলেন কোন অন্যায় কাজ দল সমর্থন করে না৷ আর তার পরেই পুলিশ রূপচাঁদ সেখ নামে এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেপ্তার করে৷ কিন্ত্ত তার পরেও বুদবুদের সভায় এসে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় শোনা যায় কারও উপর রাগ থাকলেও তৃণমূল প্রার্থীকেই ভোট দিন৷ ভাতারের বর্ষিয়ান নেতা বনমালী হাজরার খোঁজ খবর করেন৷ যিনি দীর্ঘ দিন পার্টির বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে বিরত ছিলেন৷ এখানেই শেষ নয় দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব কাটিয়ে এখনও সকল নেতা কর্মীদের একজোটে একসঙ্গে প্রচারে দেখা যাচ্ছে না৷ বিশেষ করে দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাসের সঙ্গে বর্ধমান দুর্গাপুর আসনের প্রার্থীর সমর্থনে এককাট্টা ভাবে দেখা যাচ্ছে না৷ এটা নিয়ে দলেই দ্বন্দ্ব রয়েছে৷

এদিকে ভোটের আগে বিজেপি এবং তৃনমূল দুই শিবিরেই দলবদলের হিডি়ক শুরু হয়েছে৷ কয়েক দিন আগে বিজেপির এক রাজ্য নেতা শিবির বদল করেছেন৷ অন্যদিকে সদ্য প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ সুনীল মন্ডল ঘাসফুল ছেডে় পদ্ম শিবিরে চলে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা৷ এমনটাই দাবি রাজনৈতিক মহলের৷ কারন এরই মধ্যে বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ বার কয়েক সাক্ষাৎ করেছেন৷ এমনকি তার বাডি়তে গিয়ে ঘন্টা খানেক সময় কাটিয়েছেন৷ ফলে ভোটের আগে দল ছাড়ার পরিকল্পনা আছে কিনা সে ব্যাপারেও জল্পনা তুঙ্গে৷ সুনীল মন্ডল এবার যেমন তৃণমূলের টিকিট পাননি, একইভাবে দলের প্রচার কর্মসূচিতেও তাকে দেখা যাচ্ছে না৷ আবার বিজেপির প্রচার কর্মসূচিতেও সকল শ্রেনীর নেতা নেত্রীরা অংশ নিচ্ছেন না বলেই জানা গেছে৷ সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বর্ধমান পূর্ব আসনে বিজেপির দলীয় কোন্দল৷ এরই মধ্যে দলীয় প্রার্থী বদলের ডাকও দেওয়া হয়৷ যদিও বর্ধমান পূর্ব আসনে বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকার মনোনয়নপত্র দাখিল করে দিয়েছেন৷ অন্যদিকে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনে দিলীপ ঘোষ এর বিরুদ্ধেও গোঁজ প্রার্থী নিয়ে জল্পনার শেষ নেই৷ তবে ওই আসনে বিক্ষুব্ধ এক নেতা মনোনয়নপত্র জমা করার বিষয়ে অনেকটাই এগিয়ে৷ ভোটের আগে গত শনিবার গুসকরায় বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সামনেই দুই নেতা নিজেদের মধ্যে তর্ক বিতর্কে জডি়য়ে পডে়ন৷ সাংগাঠনিক বৈঠকে ওই গন্ডগোল ঘিরে রীতিমত আলোড়ন ছড়ায়৷ পরে অবশ্য বিজেপির দলীয় নেতারা ক্ষোভ বিক্ষোভ মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন৷ সব নিয়ে দু পক্ষের মধ্যে প্রচার চললেও কোথাও না কোথাও দলের দ্বন্দ্ব মাঝে মাঝে বিপাকে ফেলছে উভয় পক্ষের নেতা নেত্রীরা৷